গ্রামে আমাদের বাস এবং লেখাপড়াও গ্রামে। ১৯৭০ সনে বাহাদুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাস করেছি। পাসের হার ছিল ৪৯ (মোট ৭৬ জনের মধ্যে ৩৮ জন উত্তীর্ণ হয়েছিল এবং মাত্র ১জন প্রথম বিভাগ পেয়েছিল। বর্তমানের মতো এতো ভালো রেজাল্ট আমাদের সময় ছিল না।
পিইসি, জেএসসি ও এইচএসসি রেজাল্টে এ+ এর যতো আধিক্য স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় তার ছিটেফোঁটাও নেই। এর মধ্যে কোনো শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। মনে হয় স্কুলের যে রেজাল্ট সেটিই সত্য। বাকিটার সাথে সত্যের সম্পর্ক নেই। ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে আমরা পারিবারিকভাবে শিক্ষার্থী ও তাদের মা'দের পুরস্কৃত করে থাকি। পুরস্কার প্রাপ্তির মিনিমাম যোগ্যতা গ্রেড ৪.০০।
পরীক্ষায় ভালো করতে পারেনি এমন ২/১ জনের সাথে কথা বললাম। তাদেরকে নেলসন ম্যান্ডেলার উক্তি শোনালাম- আমার সাফল্য দেখে তোমরা আমাকে মূল্যায়ন করো না বরং কতবার আমি ব্যর্থ হয়ে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি সেটা দিয়ে বিবেচনা করো। বললাম, পরীক্ষায় খারাপ করলেও তোমাদেরকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। অর্থাৎ সময় নষ্ট না করে রীতিমত লেখাপড়া করতে হবে। মোবাইলে সময় দেয়া ছাড়তে হবে। রাজি হলো।
আমার দৃষ্টিতে ভালো লেখাপড়া ও রেজাল্টের জন্য অত্যাবশ্যক হলো স্কুলে নিয়মিত উপস্থিতি। এব্যাপারে শিক্ষক ও অভিভাবক উভয়েরই করণীয় রয়েছে। আমাদের সময়ে স্কুলে অনুপস্থিত থাকা ছিল দণ্ডনীয় অপরাধ। বেতের বাড়ি খাওয়া লাগতো। আবার উৎসাহ দানের জন্য Good Attendance-এ পুরস্কার থাকতো। এখন কী হয় জানি না।
স্কুলে নিয়মিত উপস্থিতির জন্য শিক্ষক-অভিভাবক উভয়কেই গুরুত্ব দিতে হবে। স্কুলে উপস্থিতি শিক্ষার্থীর মাঝে শৃঙ্খলা আনে এবং তার মধ্যে সামাজিকতা সৃষ্টি হয়। স্কুলে সময় দিলে মোবাইলে আসক্তি কমবে, যেটা বর্তমানে বড়ো ধরনের সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।
সন্তানের কল্যাণের জন্য বাবা-মাকে প্রচুর সময় দিতে হবে। বকা-ঝকা নয়, আদর করতে হবে এবং একত্রে খানাপিনা ও ঘুরাঘুরি করতে হবে। সন্তান সাধারণত মা অপেক্ষা বাবাকে বেশি ভয় করে। ব্যস্ততার মাঝেও বাবার উচিত অন্তত একটি সময় সবাইকে নিয়ে একত্রে খানা খাওয়া। খাওয়ার টেবিলে খোঁজ-খবর নেয়া ও উৎসাহ দান করা।
আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা একটু শেয়ার করতে চাই। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে একটি বছর উপাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছিলাম। অধ্যক্ষ মহোদয়ের দায়িত্ব ছিল প্রশাসনিক এবং আমার ছিল একাডেমিক। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম। মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হয় এবং উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী কলেজের প্রাণ। দুটি সেকশনে এই সেরা শিক্ষার্থীরা দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠলে আর ক্লাস করে না। তখন একটি সেকশন হয়ে যায়। আমি সকল শিক্ষার্থীর উপস্থিতি সংগ্রহ (প্রতিটি সাবজেক্টে) করে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীকে জানিয়ে দেই যে বোর্ড নির্ধারিত উপস্থিতি না থাকলে ডিসকলেজিয়েট করা হবে এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না। তাতে কাজ হয় এবং দ্বাদশে আবার দুটি সেকশন হয়ে যায়। আবার বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল সকল অবিভাবককে অবহিত করি। সেখানে বলা হয়েছিল প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপস্থিতি ও টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে ফরম পূরণের সুযোগ দেয়া হবে না। অনেকের ফরম পূরণ আটকে দেয়া হয়। অবশেষে জরিমানাসহ অভিভাবকের উপস্থিতিতে ভালো লেখাপড়া করবে মুচলেকা দিয়ে ফরম পূরণের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। আমার জানামতে সেই বছর কলেজের রেজাল্ট বেশ ভালো হয়েছিল।
শিক্ষার্থীর মাঝে শৃঙ্খলা, সামাজিকতা, সৌহার্দ্য- সম্প্রীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে নিয়মিত ক্লাস করা অপরিহার্য। প্রাইভেট টিউটরের উপর নির্ভরতা কমিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে হবে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থী উভয়কেই বুঝতে হবে। এমনটি সম্ভব হলে মোবাইলে আসক্তিও কমবে ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহপাক আমাদের হেফাজত করুন।
Comments
Post a Comment