জুমার খতবা (২৭.০১.২০২৩)
আজ মিরপুর কাঁঠালবাগ জামে মসজিদে জুমার খুতবায় সম্মানিত খতিব আলহাজ মুফতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান আশরাফী আল্লাহর হামদ ও রসুল সা.-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশের পর সুরা আল হিজরের ৯নং আয়াত তেলাওয়াত (আয-যিকির (আল কুরআন) আমরাই নাজিল করেছি এবং আমরাই সেটির হেফাজতকারী) করেন, সুইডেনে কুরআনে আগুন দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন এতে ইসলামের কোনো ক্ষতি হবে না কারণ স্বয়ং আল্লাহ এই কুরআন আমাদের প্রিয়তম নবি মুহাম্মদ সা.-এর উপর নাজিল করেছেন এবং তিনি নিজেই এই কুরআনের হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে বিশ্বে ছয় কোটি হাফেজে কুরআন রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর হিফজ প্রতিযোগিতায় আমরা প্রায়ই চ্যাম্পিয়ন হই, দুর্ভাগ্য তাদের কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। অথচ ফুটবল, ক্রিকেটে এতো ব্যয় করার পরও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দূরের কথা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণেরও সুযোগ হয়ে উঠে না। তিনি হাফেজে কুরআন এই শিশু- কিশোরদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সুযোগ-সুবিধা দাবি করেন। তিনি বলেন, সব কাগজের কুরআন পুড়িয়ে দিলেও আমাদের একজন হাফেজকে কম্পিউটারের সামনে বসিয়ে দিলে তার তেলাওয়াতের সাথে সাথে পূর্ণ করআন বেরিয়ে আসবে।
সম্প্রতি সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে তুরস্ক দূতাবাসের সম্মুখে কট্টরপন্থী রাসমুস পালুদান প্রকাশ্যে কুরআন পোড়ালে তুরস্ক সরকার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সৌদি আরবসহ অনেক মুসলিম দেশ সরকারিভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। খতিব মহোদয় এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন আল্লাহ, আল্লাহর রসুল ও কুরআনের প্রতি মুসলিমদের সম্পর্ক এমনই যে কোনো পাপিষ্ঠ যদি অবমাননা করে তাহলে তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় এবং তারা আর স্থির থাকতে পারে না। আমাদের দেশেও প্রতিবাদ হয়েছে। ইতোপূর্বে ফ্রান্সে নবি মুহাম্মদ সা.-কে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র ও কার্টুন তৈরি করে অবমাননা করা হয়েছিল। যা কিছু করা হচ্ছে তার উৎস একই- ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ। তিনি বলেন, মদিনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভের পর রসুলুল্লাহ সা. বিভিন্ন রাজা-বাদশাহর কাছে চিঠি লিখে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানান। তাঁর চিঠির শুরুতে ছিল আল্লাহর নাম, এরপরে ছিল মুহাম্মদ রসুলুল্লাহ সা.-এর পক্ষ থেকে এবং শেষে ছিল পারস্য সম্রাটের কাছে। এতে পারস্য সম্রাট অপমান বোধ করে দূতের সম্মুখে চিঠিটা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে। রসুলুল্লাহ সা. শোনার পরে বদদোয়া করে বলেন, আল্লাহ যেন পরস্য সাম্রজ্যকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দেন। পারস্য সম্রাট ও তার ছেলের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি হলে কৌশলে সম্রাটের ঔষধে বিষ মিশ্রিত করে রাখা হয়। সম্রাট তার পুত্রকে হত্য করে এবং সম্রাট সেই ঔষধ সেবন করে মারা যায়। পরবর্তীকালে পারস্য সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়ে। তাই আল্লাহ, তাঁর রসুল ও কুরআনের প্রতি অবমাননা করে ভালো থাকা যায় না।
খতিব মহোদয় গত জুমায় পাঠ্যক্রমে ইসলাম বিদ্বেষী লেখা এবং ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে বিবর্তনবাদ ও বিদ্বেষপূর্ণ লেখাসহ ছবি সরিয়ে নেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং কমিটিতে একজন ধর্মীয় স্কলারকে অন্তর্ভুক্তির ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে আল্লাহ, নবি ও কুরআন এবং ইসলামের বিরুদ্ধে অবমাননাকর কিছু ঘটলে তীব্র প্রতিবাদের আহবান জানিয়ে বলেন, অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি আমাদের কোনো বিদ্বেষ নেই। আমরা কখনই তাদের দেবতা, ধর্মগ্রন্থ, ধর্মগুরুদের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করি না এবং এটি আমাদের ধর্মেরই শিক্ষা। মানবাধিকার বা মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে কেউ কারো ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি আঘাত হানবে আমরা তা সহ্য করবো না। আমরা সবাই নিজ নিজ বিশ্বাস নিয়ে শান্তির সাথে মিলেমিশে চলতে চাই। খতিব মহোদয় এই সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য তাঁর মুসল্লিদের প্রতি আহবান জানান।
Comments
Post a Comment