Skip to main content

জু’মা বক্তৃতা

মৃত্যু হলো সবচেয়ে বড়ো বাস্তবতা

ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদে জু’মা আলোচনায় মসজিদের সম্মানিত খতিব আলহাজ্জ মাওলানা মুফতি সাইফুল ইসলাম আল্লাহর হামদ এবং রসুল (সা)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশের পর কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করেন ‘হে ঈমানদারগণ!তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যেভাবে তাঁকে ভয় করা উচিৎ এবং মুসলমান না হয়ে মরো না’। তিনি ইতোপূর্বে মৃত্যু নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করেছেন, আজকে করলেন এবং আগামী জু’মায় মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে আলোচনা করার কথা জানালেন। তিনি তাঁর সমগ্র আলোচনা মৃত্যুকে নিয়ে পেশ করলেন।

তিনি বলেন, মৃত্যুর চেয়ে বড়ো বাস্তবতা আর নেই। মৃত্যুকে কেউ কখনই এড়িয়ে চলতে পারেনি, না অতীতে, না বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও পারবে না। অথচ মানুষ বাস্তব বিষয়টি উপেক্ষা করে সম্পদের নেশায় পাগলের মতো ছুটছে। বিশাল ব্যাংক-ব্যালেন্স, গাড়ি-বাড়ি, বিষয়-সম্পদ, দামী আসবাবপত্র কোনো কিছুই সঙ্গে যাবে না, সবকিছু রেখে মানুষ শূন্যহাতে আল্লাহর কাছে ফিরে যাবে। সেদিন অবৈধ সম্পদের হিসেব দিতে হবে এবং তার পরিণতি তাকেই ভোগ করতে হবে। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, বন্ধু-বান্ধব কেহই এগিয়ে আসবে না। প্রসঙ্গক্রমে তিনি প্রযুক্তি জগতের আইকন স্টিভেন জবস (যাকে পার্সোনাল কম্পিউটার বিপ্লবের পথিকৃত এবং যার সম্পদের পরিমাণ ৮.৩ বিলিয়ন ডলার ও যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম ধনী)এবং ফ্যাশন জগতের আর এক আইকন কিরজেইডা রডরিগুয়েজ (পৃথিবী বিখ্যাত ফ্যাশান ডিজাইনার, ফ্যাশন ব্লগার, সেলিব্রেটি লেখক যিনি মাত্র ৪০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন) মৃত্যুর পূর্বে তাদের উপলব্ধি (যা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল) মুছল্লিদের সামনে পেশ করে বলেন, দুনিয়ায় থাকতেই এতো এতো সম্পদ তাদের কোনো কাজে আসেনি। যারা ব্যক্তিগত প্লেনে চড়ে দামী দামী ও বিলাসবহুল হোটেলে ঘুরে বেড়িয়েছেন সে সময়ে তাদের সম্বল হুইল চেয়ার, লেবরেটরিতে বিভিন্ন টেস্ট দেয়ার জন্য অপরের সহযোগিতা নিয়ে চলাফেরা, হাজারো পোশাক-পরিচ্ছদ ঘরে অথচ হাসপাতালের বেডে সাদা কাপড় তার আচ্ছাদন, তার সাজ-গোছের জন্য কতো বিউটিশিয়ান অথচ শেষে ফ্যাশান ডিজাইনারের মাথায় কোনো চুলই ছিল না। এই হলো জীবন। তাঁরা দু’জনই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

তাঁদের থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের চলা উচিৎ। আমাদের জীবনটা খুবই সীমিত এবং যে কোনো সময় আমাদের ডাক আসতে পারে। মৃত্যুর কথা আমাদের সর্বদা স্মরণ রেখে চললে আল্লাহর নাফরমানি ও তাঁর বান্দাদের সাথে দুর্ব্যবহার, ক্ষতিসাধন ও সব ধরনের অন্যায় থেকে দূরে থাকা সম্ভব। এই সমাজে আল্লাহর নেক বান্দাহ ও বদকার দু’জনের মৃত্যুর সময় দু’ধরনের আচরণ করা হবে। নেক বান্দাদের মৃত্যুর সময় ফেরেশতাদের সারি উত্তম পোশাকে সজ্জিত হয়ে আসমান থেকে নেমে আসবেন এবং আল্লাহর নেক বান্দাকে অভিবাদন জানাতে থাকবেন। ‘হে প্রশান্ত আত্মা! চলো তোমার রবের দিকে এমন অবস্থায় যে, তুমি সন্তুষ্ট এবং তোমার রবের প্রিয়পাত্র। অতএব তুমি শামিল হয়ে যাও আমার নেক বান্দাদের মধ্যে এবং প্রবেশ করো আমার জান্নাতে’। ফেরেশতাদের হাতে থাকবে সুগন্ধিযুক্ত রুমাল এবং আযরাইল (আ)খুব সহজে নেক বান্দার জান কবজ করে সেই রুমালে রুহ্ নিয়ে বিভিন্ন আসমান অতিক্রম করার সময় ফেরেশতারা অভিবাদন জানাতে থাকবে এবং আল্লাহর আরশে পৌঁছার পর ইল্লিনে সেই রুহ্ সম্মানের সাথে রাখা হবে।

পক্ষান্তরে যারা বদকার তাদের রুহ্ কবজ করার জন্য ভয়ঙ্কর চেহারা ও হাতুড়ি নিয়ে ফেরেশতাদের আগমন ঘটবে। মৃত্যু পথযাত্রী তাঁদের দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বলতে থাকবে ‘আমাকে অবকাশ দেয়া হোক, আমি দান-খয়রাত করে ভালো হয়ে যাব’। কিন্তু সে সময়ে তার কাকুতি-মিনতিতে কোনো কাজ হবে না। ফেরেশতারা এসে চোখে-মুখে, হাতে-পায়ে সারা শরীরে পেটাতে থাকবে এবং তার রুহ ছুটাছুটি করবে। রুহকে গলা পর্যন্ত আনার পর আংটা দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে বের করে আনা হবে এবং দুর্গন্ধযুক্ত রুমালে করে ফেরেশতারা যাওয়ার সময় বিভিন্ন আসমানে ফেরেশতারা অভিশশ্পাত করতে থাকবে। শেষে তার রুহকে সিজ্জিনে নিক্ষেপ করা হবে।

মৃত্যুর সময় কালেমা নছিব হাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার এবং এটা নির্ভর করে ঈমান ও নেক আমলের ওপর। মনে রাখতে হবে, হালাল রুজি সকল ইবাদত-বন্দেগী ও নেক আমলের পূর্বশর্ত। সে সময়ের অবস্থার প্রেক্ষিতে মানুষ সবকিছু ভুলে যাবে এবং আল্লাহই তাঁর নেক বান্দাদের কালেমা উচ্চারণের তাওফিক দান করবেন। আমাদের এ জীবনেই দেখে থাকি, ভয়ে মানুষ তার নিজের নামই ভুলে যায়। মৃত্যুর সময়ের অবস্থাটাও তেমনি। এ জন্য দরকার ঈমানের সাথে বেশি বেশি নেক আমল করা এবং রসুল (সা)-এর শেখানো বিভিন্ন আমলে অভ্যস্ত হওয়া।

মানুষ বেশির ভাগ সময়ে অন্যায় করে তার পরিবারের জন্য। অথচ আখিরাতে কেউ কারো অপরাধের দায় গ্রহণ করবে না। দুনিয়ার জীবনে আমরা কী দেখি? করোনাভাইরাসে চার জনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ করলে তাদের রেখে বাকিদের নিয়ে আসা হয়। এই চার জনের সাথে নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধব ছিল; কিন্তু কেউ বলেনি ‘আমি তাকে রেখে যেতে পারবো না’। আখিরাতে স্বামী স্ত্রী থেকে এবং স্ত্রী স্বামী থেকে; ছেলে/মেয়ে বাবা-মা থকে এবং বাবা-মা ছেলে-মেয়ে থেকে পালাবে। কেউ কারো কোনো কাজে আসবে না; তাই আমাদের উচিৎ হবে নিজের পরকালকে ধ্বংস করে কারো জন্য কিছু না করা।

মৃত্যুর মতো বাস্তবতা আমরা সবাই স্বীকার করি এবং প্রতিনিয়ত জানাযায় শরীক হই অথচ নিজের মৃত্যুর জন্য আমাদের কোনো প্রস্তুতি নেই। মৃত্যু আমাদের সকল তৎপরতা নিমেষেই ধ্বংস করে দেবে। তাই কালক্ষেপণ না করে আমাদের সবারই উচিৎ মৃত্যুর জন্য সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকা ও সব ধরনের পাপাচার থেকে দূরে থাকা। আল্লাহপাক আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুন। সংক্ষেপিত। ০৭.০২.২০২০

Comments