আজ
১৪ ফেব্রুয়ারি। ভ্যালেন্টাইন ডে। সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।
এ দিনে প্রেমিক-প্রেমিকারা পরস্পরের মাঝে ফুল বা নানা ধরনের সামগ্রী আদান-প্রদান করে
এক অপরের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও অনুরাগ প্রকাশ করে। যুবক-যুবতিরা সেজেগুজে রাস্তায়
বের হয় এবং নানাভাবে আনন্দ প্রকাশ করে। একটি অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা প্রকাশের কারণে ধর্মপ্রাণ
মানুষ এটার প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে। আমাদের দেশে ভ্যালেন্টাইন ডে’র প্রচলন খুবই
সাম্প্রতিক। বলা হয়ে থাকে ১৯৯০ সনের পরে যায়যায়দিনের সম্পাদক জনাব শফিক রেহমান এর প্রচলনকারী।
আমরা এর পেছনের ইতিহাস একটু দেখি।
২৬৯ খ্রীষ্টাব্দে ইতালির রোমে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন
নামে এক পাদ্রী ও চিকিৎসক খ্রীষ্টধর্ম প্রচার করতেন। সে সময়ে খ্রীষ্টধর্ম রোমে নিষিদ্ধ
ছিল। খ্রীষ্টধর্ম প্রচারের অপরাধে রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাঁকে কারারুদ্ধ করেন।
আর একটি বর্ণনায় পাওয়া যায় যুদ্ধের প্রয়োজনে রোম সম্রাট যুবক-যুবতিদের বিয়ে সাময়িক
নিষিদ্ধ করেন। সেই পাদ্রী ভ্যালেন্টাইন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যুবক-যুবতিদের গোপনে
বিয়ের ব্যবস্থা করেন। এ কারণে সম্রাট তাঁকে কারারুদ্ধ করেন। এ ব্যাপারে পাদ্রীকে প্রশ্ন
করা হলে তিনি বলেন, খ্রীষ্টধর্মে বিয়ে নিষিদ্ধ নয়। তাকে খ্রীষ্টধর্ম ত্যাগের প্রস্তাব
দেয়া হলে তিনি তা অস্বীকার করেন।
জেলখানায় থাকাবস্থায় কারারক্ষীর এক অন্ধ
মেয়েকে চিকিৎসা প্রদান করলে সেই মেয়েটি আরোগ্য লাভ করে। এতে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়।
স্বৈরশাসকরা চিরদিনই তার নিজের ও পরিবার ছাড়া আর কারো জনপ্রিয়তা সহ্য করতে পারে না।
সম্রাট তাঁকে নিজের জন্য হুমকি মনে করে এক পর্যায়ে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। সেই দিনটি
ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাই’স স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে
ভ্যালেন্টাইন দিবস ঘোষণা করেন। খ্রীষ্টজগতে পাদ্রী-পুরোহিতদের স্মরণে অনেক দিবস পালিত
হয়ে থাকে। এই দিবসটি হতে পারতো জুলুম-নির্যাতন ও অধর্মের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ এবং
হতে পারতো মানবতার প্রতি ভালোবাসা-অনুরাগ প্রকাশের এক দিবস।
পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্মদিবস পালনসহ
সকল ধর্মোৎসবে ভোগের বিষয়টি প্রাধান্য পায় এবং এর পেছনে ব্যাবসায়িক একটি দৃষ্টিভঙ্গি
কাজ করে। যুক্তরাজ্যে প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভ্যালেন্টাইন দিবসে কার্ড,
ফুল, চকোলেট ও অন্যান্য সামগ্রী ক্রয়ের জন্য এবং আনুমানিক ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা বার্তা
আদান-প্রদান করা হয়।
ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্টের কারণে
১৭৭৬ সনে ফ্রান্সে ভ্যালেন্টাইন দিবস পালন নিষিদ্ধ করা হয়। এ ছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি
ও জার্মানিতেও বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়। ইসলামবিরোধী হওয়ায় ২০১৭ সনে পাকিস্তানের
আদালত ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করে।
ভ্যালেন্টাইন দিবস বর্তমানে অশ্লীলতা,
নগ্নতা, বেয়াপনা প্রসারের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এক শ্রেণির ধর্মবিদ্বেষী
একে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এখানে একটি ব্যাবসায়িক স্বার্থও রয়েছে। বেচাকেনা বাড়ে, কর্মসংস্থান
বাড়ে, আয় বাড়ে দেশ সমৃদ্ধ হয়। এ ধারণার মধ্যে সত্যতা রয়েছে। ইসলাম এ ক্ষেত্রে সাদাকার
কথা বলেছে। দিনটি যেন শুরু হয় সাদাকা দিয়ে। হাদিসে বলা হয়েছে ফেরেশতারা সাদাকাকারীর
জন্য দুআ করে এবং কৃপণের জন্য অভিশম্পাত দেয়। ক্ষুধার্তকে খাদ্যদান, প্রার্থীকে সাহায্য
প্রদান, অসুস্থদের সেবাযত্ন,ঋণপ্রদানসহ দান-সাদাকে নানাভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। ‘দান-সাদাকাকে
ক্রমবৃদ্ধি দান করেন’-আল্লাহর কথা। এ কথা অর্থনীতিবিদরাও জোরালোভাবে
বলেন।সমাজে অনাচারের বিরুদ্ধে যারা জোরালো প্রতিবাদ করবে ও জনগণকে উদ্বুদ্ধ করবে তাদেরকে
নানাভাবে হয়রানি করা হয় এবং তাদের কণ্ঠ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে সমাজে নগ্নতা-বেয়াপনা,
অশ্লীলতা, মাদক, যিনা-ব্যাভিচার দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভ্যালেন্টাইন দিবস হোক অন্যায়-অবিচার ও
জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম।
আল্লাহপাক সব ধরনের অশ্লীলতা পরিহার করে জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁর একনিষ্ঠ বান্দাহ
হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন। ১৪.০২.২০২০
Comments
Post a Comment