কাঁটাবন মসজিদের সম্মানিত খতিব আজকের খুতবায়
মাতৃভাষার মর্যাদা ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি।
এ মাসের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার্থে এ দেশের মানুষ জীবন দান
করেন। তিনি তাঁদের মাগফেরাত কামনা করেন। কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন, ভাষা আল্লাহর
দান এবং পৃথিবীর সকল ভাষাই আল্লাহর সৃষ্টি। সকল রসুলকে তিনি তাঁদের মাতৃভাষায় কিতাব
নাযিল করেছেন। এমন কি পশু-পাখির ভাষাও আল্লাহর সৃষ্টি। প্রত্যেকটি সৃষ্টিই তাদের ভাষায়
আল্লাহর হামদ ও তাছবিহ করছে। আল্লাহর কুরআনকে জানার ও উপলব্ধির জন্য বাংলা ভাষার জ্ঞান
অপরিহার্য। তিনি মাতৃভাষায় দ্বীনচর্চার জন্য মুছল্লিদের প্রতি আহবান জানান।
ভ্যালেন্টাইন
ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার নামে একটি বিশেষ দিনে যুবক-যুবতিদের অবাধ মেলামেশা,
পার্ক-রেস্টুরেন্টে পরস্পরে ভাবের আদান-প্রদান ও বেহায়াপনায় তিনি নিন্দা জানান।
ভ্যালেন্টাইন ডে উৎপত্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২৬৯ খ্রীষ্টাব্দে ইতালির রোমে সেন্ট
ভ্যালেন্টাইন নামে এক পাদ্রী ও চিকিৎসক খ্রীষ্টধর্ম প্রচার করতেন। সে সময়ে
খ্রীষ্টধর্ম রোমে নিষিদ্ধ ছিল। খ্রীষ্টধর্ম প্রচারের অপরাধে রোম সম্রাট দ্বিতীয়
ক্রাডিয়াস তাঁকে কারারুদ্ধ করেন। তাকে খ্রীষ্টধর্ম ত্যাগের প্রস্তাব দেয়া হলে তিনি
তা অস্বীকার করেন।
জেলখানায় থাকাবস্থায় কারারক্ষীর এক অন্ধ
মেয়েকে চিকিৎসা প্রদান করলে সেই মেয়েটি আরোগ্য লাভ করে। এতে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়।
সম্রাট তাতে ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁকে হত্যা করেন। সেই দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। অতঃপর
৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাই’স স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে
ভ্যালেন্টাইন দিবস ঘোষণা করেন। খ্রীষ্টজগতে পাদ্রী-পুরোহিতদের স্মরণে অনেক দিবস পালিত
হয়ে থাকে। এই দিবসের সাথে যুবক-যুবতিদের ভালোবাসা আদান-প্রদানের কোনো সম্পর্ক নেই।
তদুপরি এর সাথে ইসলামের সম্পর্ক কী? বড়জোর এটাকে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি বলা যায়। ইসলামী
সংস্কৃতির উৎস হলো কুরআন ও হাদিস। এরূপ একটি দিবস পালনের বিষয় হাদিসে কোনো উল্লেখ নেই।
তাই এর সাথে মুসলমানদের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। তারপরও যে বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা
এই দিবসটির সাথে জড়িয়ে আছে তাতে কোনো মুসলমান কখনই ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করতে পারে
না।
মুসলমানদের কাছে সকল ভালোবাসার কেন্দ্র
হলো আল্লাহতায়ালা। আল্লাহরই জন্য সে কাউকে ভালোবাসবে এবং আল্লাহরই জন্য কাউকে ঘৃণা
করবে। আল্লাহ, আল্লাহর রসুল, পিতা-মাতা, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি সকল মানুষকে এমন কী
সকল সৃষ্টিকে ভালোবাসার কথা ইসলাম বলে। ফলে একটি বিশেষ দিনে যুবক-যুবতিদের পরস্পর ভালোবাসা
ইসলাম স্বীকৃত নয়।বরং বিবাহবহির্ভূত এ ভালোবাসা ঘৃণ্য ও অপরাধ। নিজের পিতা-মাতাকে ভালোবাসা,
তাদের প্রয়োজন পূরণ করা, তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলাতে প্রভূত ছওয়াবের কথা বলা হয়েছে।
প্রসন্নচিত্তে মা’র দিকে দৃষ্টি দেয়াকে হজ্জের ছওয়াবের কথা
হাদিসে বলা হয়েছে। একজন ছাহাবী জিজ্ঞেস করেন, যদি একশ বার তাকানো হয়, জবাবে রসুল (সা)
বলেন একশ কবুল হজ্জের সমান ছওয়াব। ইতর প্রাণির প্রতি ভালোবাসাও ছওয়াবের কাজ। পিপাসার্ত
কুকুরকে পানি পান করানোর বদৌলতে একজন মহিলাকে ক্ষমা করার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। বিজাতীয়
সংস্কৃতির অনুসরণ ছেড়ে দিয়ে কুরআন ও হাদিস অনুসরণ করার জন্য তিনি তাঁর মুছল্লিদের প্রতি
আহবান জানান। সংক্ষেপিত।
[কাঁটাবন মসজিদে ঠিক সাড়ে বারোটায় খতিব
মহোদয় মিম্বরে আরোহণ করে খুতবা শুরু করেন। আলোচনার মাঝে বসে ছানি খুতবাহ শেষ করে ইকামত
ও নামায আদায় করেন। মাঝে ছুন্নাত পড়ার কোনো সময় দেয়া হলো না এবং নামায শেষে কোনো মোনাজাতও
হলো না বরং বক্তৃতার মাঝে দুআ করলেন ও মুছল্লিরা জবাবে আমিন আমিন বললেন।জু’মার নামায শুরু
হয় সোয়া একটায়]
Comments
Post a Comment