আজ মিরপুর কাঁঠালবাগ জামে মসজিদে জু’মার খুতবায় সম্মানিত খতিব আলহাজ্জ মাওলানা মাহমুদুল হাসান আশরাফী আল্লাহর হামদ ও রসুল (সা)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশের পর ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি কুরআনের আয়াত (‘পরম দয়ালু (আল্লাহ) এ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কথা বলা শিখিয়েছেন’-১-৩) উদ্ধৃত করে বলেন, সকল সৃষ্টির মাঝে আল্লাহপাক মানুষকে সর্বোত্তম দৈহিক কাঠামো, চিন্তা করার ক্ষমতা, বিবেকবোধ এবং মনের ভাব প্রকাশ করার ক্ষমতা দিয়েছেন। কথা বলা মানুষের জন্য আল্লাহতায়ালার একটি বড় নেয়ামত। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো সৃষ্টিকে এ নেয়ামত দেয়া হয়নি।
বর্তমান পৃথিবীতে ছয় হাজারের মতো ভাষা রয়েছে। এর মধ্যে অনেক ভাষা লুপ্ত হয়েছে। এই যে ভাষা ও বর্ণের পার্থক্য-এর মধ্যে রয়েছে জ্ঞানবানদের জন্য বড় নিদর্শন। আল্লাহর ভাষায়, আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে, আকাশরাজী ও পৃথিবী সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের পার্থক্য। অবশ্যই এর মধ্যে বহু নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানবানদের জন্য।’ ভাষা হলো আল্লাহপাকের সৃষ্টি। মানুষে মানুষে ভাষা ও বর্ণেই শুধু পার্থক্য নয়, আবার একই ভাষায় কথা বলার পরও কণ্ঠস্বরের পার্থক্যের কারণে আমরা বুঝতে পারি অমুক ব্যক্তি কথা বলছেন। আবার একই ভাষাভাষি ও দেশ হলেও মানুষের চেহারায় রয়েছে ভিন্নতা। ফলে আমরা কোটি কোটি মানুষের মধ্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে চিনে নিতে সক্ষম হই। এ সবই আল্লাহতায়ালার অপূর্ব সৃষ্টিকূশলতা এবং সৃষ্টির পেছনে মহাবিজ্ঞ ও শত্তিধর সত্তার অস্তিত্বই প্রমাণ করে।
খতিব মহোদয় বলেন, আমরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে। মাতৃভাষা অর্থাৎ মায়ের মুখ থেকে একটি শিশু কথা বলা শিখে সেই ভাষার মর্যাদা অসামান্য। এটা আল্লাহপাকের দান। আল্লাহতায়ালা সকল নবী-রসুলকে তাঁদের মাতৃভাষায় প্রেরণ করেছেন এবং কিতাবও দিয়েছেন তাঁদের মাতৃভাষায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালীরা উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানের জন্য দাবী জানিয়েছিল। এই সহজ ও যৌক্তিক দাবী মানতে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী অস্বীকার করে শক্তি প্রয়োগ করে তা রোধ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাংলার যুবকরা নিজেদের রক্ত দিয়ে তাদের দাবী আদায় করেছিল। তিনি ভাষা শহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, তিনি যেন তাঁদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সেদিনটি ছিল ৮ ফাল্গুন। আমরা ৮ ফাল্গুন বা বাংলা সন ব্যবহার করি না, আমাদের সাইনবোর্ড, ভিজিটিং কার্ড, লেখাপড়া সবক্ষেত্রেই মাতৃভাষা পেছনে পড়ে যাচ্ছে এবং ইংরেজির প্রাধান্য বেড়ে যাচ্ছে। ভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে আমরা জীবন দিলাম, অথচ জীবনের সকল ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা আজ উপেক্ষিত। সকল স্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার এবং মাতৃভাষার মাধ্যমে দ্বীন চর্চার ওপর তিনি গুরুত্ব প্রদান করেন। তিনি আরো বলেন, রফিক-সালাম-বরকত-জাব্বার এরা সবাই মুসলমান। তাদের স্মরণ ও মাগফেরাত কামনা হওয়া দরকার আমাদের নিজস্ব ধর্মীয় সংস্কৃতির আদলে। তিনি শহীদদের মাগফেরাতের লক্ষ্যে কুরআন তেলাওয়াত, নফল নামায ও দান-সদকা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করার জন্য আহবান জানান।
সকল ভাষা আল্লাহর সৃষ্টি এবং ভাষার ভিত্তিতে মানুষে মানুষে কোনো শ্রেষ্ঠত্বও নেই। রসুল (সা.) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলে গেছেন, ‘অনারবের ওপর আরবের এবং আরবের ওপর অনারবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই’। তবে তিনটি কারণে আমরা আরবি শেখার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করবো। রসুল (সা) বলেছেন, আমি আরবিকে ভালোবাসি কারণ আরবি আমার ভাষা, আরবি কুরআনের ভাষা এবং জান্নাতের ভাষা হবে আরবি। কুরআন-হাদিস জানা বোঝার জন্য মাতৃভাষার পাশাপাশি আরবি ভাষাও আমরা চর্চা করবো।
রসুল (সা) বলেন, আরবি আমার ভাষা এবং আমি বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলি। আমরাও আমাদের মাতৃভাষাকে বিশুদ্ধভাবে জানার চেষ্টা করবো এবং ভাষাকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ত্রুটি করবো না। রসুল (সা)-এর আর একটি বৈশিষ্ট হলো, তিনি সর্বশেষ নবী। তাঁর পর আর কোনো নবীর আগমন ঘটবে না। যারা তাঁকে শেষ নবী মানে না তাদের মুসলিম দাবী করার কোনো সুযোগ নেই। কাদিয়ানী সম্প্রদায় মুহাম্মদ (সা)-কে নবী মানলেও যেহেতু শেষ নবী মানে না তাই অবিলম্বে তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করার জন্য তিনি সরকারের কাছে জোর দাবী জানান। সংক্ষেপিত।
[কাঁঠালবাগ জামে মসজিদে সাড়ে বারোটার পূর্বেই নীচতলা পূর্ণ হয়ে যায়। আমি সাড়ে বারোটার পূর্বে এসেও নিচে জায়গা না পেয়ে দোতালায় প্রথম কাতারে বসি। কিন্তু খুতবা শোনায় খুব সমস্যা হচ্ছিলো। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো না। অথচ খতিব মহোদয়ের আলোচনা অত্যন্ত স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল। আমি তিনবার জায়গা পরিবর্তন করে বসি। পরে আস্তে আস্তে স্পষ্ট হচ্ছিলো। এব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আজকে খতিব মহোদয় সামষ্টিক মোনাজাত না করে তাঁর মুছল্লিদের ব্যক্তিগতভাবে মোনাজাত করার কথা বলেন।] ইউটিউবে খতিব মহোদয়ের জু’মা বক্তৃতা পাওয়া যায়।
Comments
Post a Comment