প্রতিনিয়তই
মৃত্যুর খবর পাই। ফেসবুকের বদৌলতে বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত জনদের কাছ থেকে তাদের প্রিয়জনের
বিদায় গ্রহণের খবরসহ দুআর আবেদন প্রায়ই শুনি এবং আমরাও ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি
রাজেউন পাঠের সাথে বিভিন্ন ভাষায় মাগফিরাত কামনা করি।
গত
রাত সাড়ে এগারোটায় আমার শ্যালক বউ আমার স্ত্রীকে মোবাইল করে জানালো যে তার ছোট বোনের
শাশুড়ি ইন্তেকাল করেছেন এবং তারা এইমাত্র সেখান থেকে বাসায় ফিরেছে।
রাতে
যশোরের আমাদের খুবই ঘনিষ্ঠ মিউনিসিপ্যাল স্কুলের হেড মাস্টার (অব) মাস্টার রুহুল কুদ্দুস
ভাই-এর স্ত্রী মোবাইল করে জানালেন, তাঁর পিতা এড. নূর হোসেন (প্রাক্তন এমপি) দড়াটানা
হাসপাতালে দশ দিন হলো অচেতন অবস্থায় রয়েছেন এবং দুআ চাইলেন।
নড়াইলে
যে বাড়িতে আমরা ভাড়া থাকতাম কয়েকদিন হলো সেই বাড়ির খালাম্মা (আমরা ছিলাম যাঁর খুবই
স্নেহধন্য) ইন্তেকাল করেছেন। গতকাল খালাম্মার আমেরিকাপ্রবাসী দুই ছেলের সাথে কথা হলো।
খালাম্মার দশ ছেলে-মেয়ের ২/১জন বাদে সবাই আমেরিকাপ্রবাসী এবং মৃত্যুর সময় প্রায় সবাই
কাছে ছিলেন। মরহুমার বয়স ৯০ উর্ধে।
তাঁর ছেলে জানালেন, খুলনায় হাসপাতালে ICU –তে রাখা হলে আম্মা
সন্তানদের না দেখে অস্থির হয়ে পড়েন এবং বাড়িতে আনার পর সর্বক্ষণ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে
তাঁর ছেলে-মেয়েদের পরিচর্চার মধ্য দিয়ে তাদের মা প্রশান্তচিত্তে তাঁর রবের কাছে ফিরে
যান।
ধানমন্ডি
তাকওয়া মসজিদে গত জু’মা আদায় করেছিলাম। খতিব মহোদয় তাঁর পুরো
আলোচনা মৃত্যু নিয়ে করেছিলেন এবং পূর্বের কয়েক জু’মা করেছেন ও আগামী
জু’মাতেও করবেন।
গত জু’মার আলোচনা আমি
শেয়ার করেছি।
আল্লাহর
রসুল (সা) জানাযায় ও দাফন-কাফনে শরীক হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। জানাযায় এক কিরাত
পরিমাণ ছওয়াব এবং দাফন-কাফনে আর এক কিরাত ছওয়াব। এক কিরাত অর্থ ওহুদ পাহাড় পরিমাণ মানে
অসংখ্য ছওয়াব (পরিমাপ যোগ্য নয়)।
কবর
জিয়ারতের কথাও বলেছেন তবে কোনো মাজার শরীফ নয়, বলেছেন সাধারণ কবরস্থানে যেতে। তিনটি
মসজিদ (কাবা, মসজিদে নববী ও মসজিদুল আকসা) ছাড়া জিয়ারত উদ্দেশ্যে বিদেশ সফরের কোনো
বৈধতা দেননি।
কুরআন
মজিদে মৃত্যু ও আখিরাতের আলোচনা ভরপুর হয়ে আছে। দুর্ভাগ্য, শয়তান আমাদেরকে মৃত্যুর
কথা ভুলিয়ে দিয়ে দুনিয়ায় সম্পদ, ক্ষমতা, নাম-জশ অর্জনে পাগলপ্রাণ করে রেখেছে। আমরা
আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানের গোলামীকে গ্রহণ করে নিয়েছি।
এই
সমাজে যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং সুদ-ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে
তুলেছে তারা সবাই শয়তানের গোলাম; আর শয়তানের কাজ হলো মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে
যাওয়া।
জাহান্নামে
নিয়ে যাওয়ার তার সহজতম উপায় হলো মানুষকে হারাম কাজে অভ্যস্ত করে তোলা। হারাম উপার্জনে
গঠিত শরীর আল্লাহর ইবাদতের জন্য একেবারেই অনুপযোগী এবং তা জাহান্নামের জালানি ছাড়া
আর কিছুই নয়।
হারামে
অভ্যস্ত হওয়ার কারণে মৃত্যুর এতো আলোচনা, ফেসবুকে মাগফেরাত কামনা, জানাযায় শরীক হওয়া,
কবর জিয়ারত কোনো কিছুই ব্যক্তিকে মৃত্যুর কথা স্মরণ ও সেজন্য প্রস্তুতির ব্যাপারে সতর্ক
করছে না।
মৃত্যুর
মতো বাস্তব আর দ্বিতীয়টি নেই। অন্যান্যদের মতো আমিও যে এই পৃথিবী থেকে চলে যাবো এবং
পাথেয়সহ যেতে হবে এই বোধ-উপলব্ধি আমাদের মাঝে নেই। বেঁচে থাকার আমাদের প্রাণান্ত লড়াই
আছে। সিঙ্গাপুর, ভারত, ইউরোপ-আমেরিকায় দৌড়াদৌড়ি আছে, মুমুর্ষু রোগীকে ICU বা লাইফ সাপোর্টে
রেখে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টা আছে, কিন্তু পরকালের ভাবনা থেকে আমরা রিক্ত।
মানুষ
যখন অতি বার্ধক্যে পৌঁছে যায় (৭০-এর উর্ধে) তখন প্রয়োজন পারিবারিক পরিবেশে একটু আরাম-আয়েশের
ব্যবস্থা করা। সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-পরিজনবেষ্টিত মৃত্যু কতই না উত্তম যখন মুমুর্ষু
রোগীর সম্মুখে তেলাওয়াত করা হয় সূরা ইয়াছিন ও কালেমা পাঠ করা হয় এবং ছেলেমেয়েরা হাত-মুখ
নেড়ে দেয় ও আল্লাহর ক্ষমার কথা উচ্চারণের মধ্য দিয়ে সাহস যোগায়।
বিল
গেটসরা তাদের সম্পত্তি উইল করে দিয়ে যেতে পারে যা দিয়ে আমাদের সন্তানরা ইউরোপ-আমেরিকায়
স্কলারশিপ নিয়ে লেখাপড়া করে। অথচ আমরা অছিয়ত করতে পারি না যার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসুল
(সা) উদ্বুদ্ধ করেছেন (এক তৃতীয়াংশ সম্পদ) বরং ওয়াফকৃত সম্পদ আত্মসাৎ করার কূটকৌশলে
আমরা লিপ্ত হই।
হাজী
মুহাম্মদ মুহসিনের মতো দানশীল লোক বিরল বরং ঋণখেলাপী ও অর্থপাচারকারী লুটেরাদের কবলে
আমাদের প্রিয় দেশ।
বেঁচে
থাকতে অর্থবৃত্ত যেমন কাজে লাগায়নি (আল্লাহর পথে ব্যয়) তেমনি মৃত্যুর পর পিতা-মাতা
যে সন্তান-সন্ততি রেখে যান তাও কোনো কাজে আসেনা। পিতা-মাতার মৃত্যুর পর সন্তান-সন্ততির
লক্ষ্য থাকে জমকালো খানাপিনার ব্যবস্থা করা এবং বছর বছর মৃত্যুবার্ষিকী পালনের প্রতি।
অথচ এ সব অর্থের অপচয় বৈ আর কিছুই নয়।
পিতা-মাতার
জন্য সন্তানের দুআ কবুল করবেন বিধায় আল্লাহ নিজেই দুআর ভাষা শিখিয়ে দিয়েছেন। আসলে যে
সন্তান নামাযই পড়ে না সে দুআ করবে কী? তাই তার খেয়াল খানাপিনার দিকে। ইসালে ছওয়াবের
উদ্দেশ্যে প্রস্তুত খানায় সচ্ছল লোকদের কোনো অংশ নেই, সবই হত-দরিদ্রদের (ছদকা)।
হ্যাঁ
উত্তম কাজ হলো, তাঁদের উদ্দেশ্যে গরীব-দুখীকে মাঝে-মধ্যে খাওয়ানো, মসজিদ-মাদ্রাসা ও
ইয়াতিমখানায় দান এবং নামায-রোযাসহ যে কোনো নেক আমল সম্পাদন করে আল্লাহতায়ালাকে বলা,
এর ছওয়াব আমার পিতা-মাতার আমলনামায় পৌঁছে দাও।
মৃত্যুযন্ত্রণা
তো রয়েছেই, এর পরবর্তী জীবন যে কতো ভয়াবহ তা আমরা স্বীকার করলেও আমাদের কথাবার্তা,
আচার-আচরণ, লেনদেন ও কর্মকান্ড প্রমাণ করে যে, আখিরাতে বিশ্বাসবিবর্জিত এক নিরেট নাস্তিক
বৈ আমরা আর কিছুই নই। এতো জুলুম-অত্যাচার, এতো মিথ্যাচার, এতো অনিয়ম, এতো ঘুষ-দুর্নীতি
কোনো বিশ্বাসী জাতির কাছ থেকে কখনই আশা করা যায় না।
হে
পরোয়ারদেগার! তুমি আমাদেরকে যথার্থ বিশ্বাসী ও সৎ কর্মশীল বান্দাহ হিসেবে কবুল করো
এবং আখিরাতে বেইজ্জতি করো না। আমাদের মৃত্যু মুসলমান অবস্থায় দান করো। আমিন। ১১.০২.২০২০
Comments
Post a Comment