Skip to main content

একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিতি-কিছু টুকিটাকি


আমার একান্ত স্নেহভাজন মোঃ সাইদুর রহমান একজন সরকারি কর্মকর্তা। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। বয়সে আমার চেয়ে এগারো বছরের ছোট। হিসেবটা এমন যে আমি এসএসসি পাস করেছি ১৯৭০ সনে আর সাইদুর পাস করেছে ১৯৮১ সনে। আমরা একই স্কুলের শিক্ষার্থী। তার ছেলে-মেয়ে উভয়েরই বিয়ে সুসম্পন্ন হলো। সাইদুর আর্লি মেরেজের পুরো বেনিফিটটা পেয়ে গেলো। তার ছেলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে। ছেলের বিয়েতে গত ২৮ জুলাই বরযাত্রী হিসেবে উপস্থিত ছিলাম মিরপুর ১ নম্বর প্রিন্স কম্যুনিটি সেন্টারে। সুন্দর ঝকঝকে ও বাহুল্যবর্জিত পরিবেশে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সুসম্পন্ন হলো। আজকাল বিয়ে মানে গান-বাজনা ও হৈ-হুল্লোড়। এ সব কিছুই ছিল না। পুরোপুরি পর্দা মেইনটেন না হলেও অনেকখানি ভালোই বলা যায়। বরাসনে বর একাই ছিল। নববধুর কোন প্রদর্শনী ছিল না এবং আমরা বৌ না দেখেই বিদায় হয়েছি। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ছেলের বাবা নিজেই সবাইকে নিয়ে নবদম্পতির কল্যাণ কামনা করে দোয়া করলেন। আসলে নবদম্পতির উদ্দেশ্যে একটি খুতবা হওয়া দরকার এবং সেখানে নছিয়ত করার পাশাপাশি দোয়া কামনা করা হয়। ছেলের মুখে নতুন গজানো দাঁড়ি দেখে ছেলের বাবাকে বললাম-এ দাঁড়ি কি বিয়ে উপলক্ষে? ছেলের বাবা জানালো-‘ভাই, তাই তো দেখছি, বিয়ের কথাবার্তার পর থেকেই দাঁড়ি রেখেছে এবং আমি বলে দিয়েছি যে, রাখলে পাকাপোক্তভাবে রাখতে হবে। তাতে ছেলে রাজি হয়েছে’। দাঁড়ি রাখা একটি সুন্নাত আমল। এটা কোন সখের বিষয় নয় বা ছবি তোলার বিষয়ও নয়। সাইদুরের বেয়াই-বেয়াইন দুজনেই ব্যাংক কর্মকর্তা এবং মিরপুরে তাঁদের নিজস্ব বাড়ী রয়েছে। আর কনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।

পরের দিন গেলাম বৌভাত অনুষ্ঠানে গুলশান লং বিচ সুয়ীটে। ছেলে বৌকে সাথে করে এনে আমার সাথে পরিচয় করে দিল। আমি তাকে বললাম-বাবা এই দাড়ি কি বিয়ে উপলক্ষেই। ছেলে জবাব দিল, না চাচা, দাঁড়ি পার্মানেন্ট। বউকে বললাম-মা, তুমি তাকে সাহায্য করিও। বিয়েতে অনেক আয়োজন। ২২পদের খানা। যে যার পছন্দমত নিয়ে খাচ্ছে। অনেককে দেখলাম বুঝতে না পারার কারণে বেশি নিয়ে অপচয় করতে। অপচয়ের ব্যাপারে আমি আপোষহীন। আল্লাহ অপচয়কারীকে যেখানে শয়তানের ভাই বলে আখ্যায়িত করেছেন তার প্রতি একজন মু’মিনের ঘৃণা থাকাই স্বাভাবিক।

বিদায় হওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম, উপঢৌকন গ্রহণের কোন সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই। যারা নিয়ে আসছে তারা এদিক-ওদিক ঘুরাঘুরি করছে। উপহার আদান-প্রদানকে অনেকে আভিজাত্যের পরিপন্থি মনে করে।
আমি নিজে উপহার আদান-প্রদানের পক্ষে। এটাকে সুন্নাত মনে করি। নবদম্পতিকে নতুন সংসার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্খীদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করায় কোন দোষ দেখিনা। হতে পারে সেটা উপহার সামগ্রী বা নগদ টাকা-পয়সা প্রদানের মাধ্যমে। উপহার সামগ্রী নিয়ে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করার চেয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট ব্যক্তির মাধ্যমে গ্রহণকে ভদ্রজনোচিত বলে মনে করি।

বিয়ের মধ্য দিয়ে অপরিচিত দুইজন নর-নারীর মধ্যেই কেবল সম্পর্ক নয়, দুটি পরিবারের মধ্যে গড়ে উঠে এক আত্মীয়তার সম্পর্ক। সেটা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ছেলে, ছেলে-বৌ, বেয়াই-বেয়াইনসহ সবারই ভূমিকা রয়েছে। এককভাবে কারো ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া একটা জুলুম। আমরা পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার দরবারে দোয়া করি এই বিয়েতে যেন তিনি বরকত দান করেন, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের এবং দুই পরিবারের মাঝে সম্পর্ককে নিবিড় করেন। আমিন।

Comments