Skip to main content

ধৈর্যশীলরাই সফলকাম

আমাদের এই জীবনটা বড়ই সংকীর্ণ। নাস্তিক/আস্তিক আমরা সবাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে পৃথিবীতে যারা একবার এসেছি তাদেরকে অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। মৃত্যুর পরের জীবন নিয়ে বিশ্বাসী (মুমিন) ও অবিশ্বাসী (কাফের) উভয়ের মাঝে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। একজন মুমিন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে দুনিয়ার জীবনই শেষ নয়; এরপর রয়েছে আখেরাতের অনন্ত জীবন এবং সেখানে ভালো ও মন্দ কাজের পূর্ণ প্রতিফল ভোগ করতে হবে। ফলে তার জীবনধারা হয় ন্যায় ও ইনসাফে পূর্ণ এবং মানুষ তার কাছ থেকে কেবল কল্যাণই লাভ করে থাকে। পক্ষান্তরে কাফের মনে করে এই দুনিয়ার জীবনই শেষ; এরপরে আর কিছু নেই। ফলে সে দুনিয়ার আইন-আদালত ও পুলিশকে ভয় করলেও আখেরাতের ভয় না থাকায় সে নিজেই হয়ে পড়ে নমরুদ-ফেরাউনের সার্থক উত্তরাধিকার বা কোনো শক্তিমানের আশ্রয়ে গিয়ে হয়ে পড়ে বেপরোয়া এবং জুলুম-নির্যাতনে পৃথিবীবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলে। এরা হালাল-হারামের পরোয়া করে না। সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে এবং এদের হাতে দেশ বা দেশবাসী নিরাপদ নয়। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেও তারা ধরা-ছোঁয়ার ঊর্দ্ধে। এদের সততা স্রেফ পলিসি। এমতাবস্থায় আল্লাহ মুমিন ও কাফের উভয়কে মৃত্যুর কথা স্মরণ করে দিয়েছেন।

‘প্রত্যেক প্রাণীই মরণের স্বাদ ভোগ করবে; (অত:পর) তোমাদের (কর্মকাণ্ডের) প্রতিফল কিয়ামতের দিন আদায় করে দেয়া হবে, যাকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে বাঁচিয়ে দেয়া হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে; সেই হবে সফল ব্যক্তি। (মনে রেখ), এই পার্থিব জীবন (কিছু বাহ্যিক) ছলনার মাল সামানা ছাড়া আর কিছুই নয়। (হে ইমানদারগণ!) নিশ্চয়ই জানমালের (ক্ষতি সাধনের) মাধ্যমে তোমাদের পরীক্ষা নেয়া হবে। (এ পরীক্ষা দিতে গিয়ে) তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায়- যাদের (আল্লাহর) কিতাব দেয়া হয়েছিল এবং যারা (আল্লাহর সাথে অন্যদের) শরীক করেছে, তাদের (উভয়ের) কাছ থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথাবার্তা শুনবে; এ অবস্থায় তোমরা যদি ধৈর্য ধারণ করো এবং আল্লাহকে ভয় করে চলো, তাহলে অবশ্যই তা হবে বড়ো ধরনের এক সাহসিকতার ব্যাপার’- আলে ইমরান ১৮৫-১৮৬।

‘হে ইমানদারগণ ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, (ধৈর্যের এ কাজে) একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করো, (শত্রুর মোকাবেলায়) সুদৃঢ় থেকো, একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হতে পারবে’- আলে ইমরান ২০০।

মুমিনদের জীবনটা বড়ো কণ্টকাকীর্ণ। তাদের সহজ সরল জীবন যাপন ও ন্যায়পথে চলা এবং মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা কাফেররা বরদাশত করতে পারে না। কাফেররা মুমিনদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে। হ্যাঁ, সত্যিই তারা প্রতিদ্বন্দ্বী। তাদের বিশ্বাসই হলো তাগুতকে অস্বীকার করা। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- অনেকের সাথে আল্লাহকেও ইলাহ মানো; তা নয় বরং আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। ধর্মে মুসলিম আর অর্থনীতি ও রাজনীতিতে সেকুলার ইসলাম তা স্বীকার করে না। ইসলামের দাবি, পরিপূর্ণ ইসলামে দাখেল হও। ইসলামের আহবান, ‘আনিই বুদুল্লাহ ওয়াজ তানিবুত তাগুত’- আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাগুতকে অস্বীকার করো। সকল নবি-রসুলের সাথে সমসাময়িক শাসকবর্গের বিরোধের মূল কারণ ছিল কালেমার দাওয়াত। কিয়ামত পর্যন্ত এই দ্বন্দ্ব চলবে ও মুমিনদের উপর নিপীড়ন-নির্যাতনও অব্যাহত থাকবে। কাফের ও মুশরিকদের মুমিনদের উপর জুলুম করার ছলনারও কোনো অভাব নেই। ইমানদারদের আগুনেভরা গর্তে নিক্ষেপ করা প্রসঙ্গে আল্লাহপাক সুরা বুরুজে বলেছেন, ওদের অপরাধ একটিই- ওরা পরাক্রমশালী আল্লাহর উপর ইমান এনেছিল। আল্লাহর কঠোর হুশিয়ারি, যারা ইমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয়, অতপর তওবা করে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি। বিপরীতে মুমিনদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ।

কুরআন মজিদে একতরফাভাবে মুমিনদের জুলুমের কথা শোনানো হয়েছে এবং বিপরীতে পরম ধৈর্য অবলম্বনের তাগিদ দেয়া হয়েছে। নবি-রসুল ও মুমিনদের সাথে কাফেরদের শত্রুতাকে আল্লাহপাক তাঁর নিজের উপর গ্রহণ করেছেন। মুহাম্মদ সা.-এর সাথে মুশরিকদের প্রচণ্ড বিরোধীতা এবং তিনি যা নন তাঁকে তাই বলা হয়েছে। সান্ত্বনা দিয়ে আল্লাহ বলেছেন, জানি, ওরা যেসব কথাবার্তা বলে তাতে তোমার বড়ই মনোকষ্ট হয়; কিন্তু ঐ জালেমরা তোমাকে নয়, আল্লাহর নিদর্শনকে মানতেই তারা অস্বীকার করে। রসুলুল্লাহ সা. সুদীর্ঘ ৪০টি বছর তাঁর সমাজে বসবাস করেছেন- তিনি ছিলেন আল আমিন, আস সাদিক। যেদিন থেকে তিনি মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা শুরু করেছেন সেদিন থেকেই তাঁর সাথে শত্রুতা শুরু হয়েছে। আজকের দিনে আলেম-উলামা ও ইসলামপন্থী জনগোষ্ঠী যে কোনো বিচারে সমাজে ভালো মানুষ হিসাবে পরিচিত; তাদের অপরাধ একটাই, তারা মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে। যারা তাঁদের সাথে শত্রুতা করছে তারা মূলত আল্লাহর শত্রু এবং এই দ্বন্দ্ব-সংগ্রামই হলো আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সুন্নাত। এই সুন্নাত বাদ দিয়ে জান্নাতের প্রত্যাশা করা বোকামি বৈ আর কিছু নয়। যেহেতু কাফেররা আল্লাহর শত্রু। তাই তাদের মোকাবেলা নিজেরা না করে বিষয়টি আল্লাহর উপর সোপর্দ করে মুমিনদের উচিত ইতিবাচক কাজ করা অর্থাৎ ব্যাপকভাবে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা ও পরম ধৈর্য অবলম্বন করা।

আল্লাহর পথের পথিকদের চরম পরীক্ষা চলছে। ভালো কথা হলো, পরীক্ষার সাথে সাথে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ধৈর্য, সাহস ও হিম্মতও দিয়েছেন। প্রতিকূল পরিবেশ পরিস্থিতিতে প্রতিশোধ নয় পরম ধৈর্য অবলম্বন করাকে আল্লাহ তায়ালা সাহসী কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। হে আল্লাহ! জালেমের মোকাবেলায় মজলুমকে তুমি পরম ধৈর্য ধারণের মাধ্যমে দীনের উপর অবিচল রাখো। ০৮.০২.২০২৩।

Comments