দুর্ভাগ্য, আমরা গিবতে খুবই পারঙ্গম এবং প্রশংসায় বড়ো কৃপণ। প্রশংসা করতে প্রয়োজন উদারতা ও হৃদয়ের প্রশস্ততা। সংকীর্ণমনা মানুষ কেবলই অপরের নিন্দা ও সমালোচনা করতে জানে। এটা যে তার নিজেরই ক্ষতি সে বোধ তার নেই।
আজ ফজর বাদে স্ত্রীর সাথে একটু হাঁটলাম। তাকে সঙ্গ দেওয়ায় প্রভূত সওয়াব হলো। সাথে প্রাতভ্রমণও হয়ে গেল। সুস্থতার জন্য হাঁটাহাঁটি খুবই জরুরি এবং এতেও সওয়াব। যে বাসায় গেলাম সেই বাসার মা, মেয়ে, জামাই ও শাশুড়ির খুব প্রশংসা শুনলাম। আমার স্ত্রীর কথা, আপার মেয়ে তার শাশুড়ির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে আবার শাশুড়িও কম ন। বৌমার গুণপনা বর্ণনায় শাশুড়ি বড়ো অকৃপণ। আবার মেয়ের মা জামাইয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আল্লাহপাক আমাদের সকল ঘরকে প্রশংসার ঘরে রূপান্তর করে দিন।
আমাদের দেশে পুলিশ সম্পর্কে সুধারণা নেই। মানুষ শুধুই নিন্দা করে। ভালো-মন্দ মিলেই মানুষ। আমার ছেলের আইডি হ্যাক হলে তাকে পরামর্শ দেয়া হলো থানায় জিডি করতে। সে খুব ইতস্তত করছিল। কোনো ঝামেলা হয় কি না ভেবে ভয় পাচ্ছিল। শেষে গেল এবং ফিরে এসে তাদের সদাচরণে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলো। থানা পুলিশ সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত কোনো খারাপ অভিজ্ঞতা নেই। নড়াইলে থাকাকালে সেখানকার পুলিশ সুপার জনাব সেখ সাজ্জাত আলীকে অত্যন্ত সৎ কর্মকর্তা হিসেবে জানতাম। আমাদের বাসার সাথেই ছিল থানা এবং থানা মসজিদে আমি নামাজ আদায় করতাম। সেই থানা মসজিদে সাপ্তাহিক দরসুল কুরআন হতো এবং পুলিশ সুপার মহোদয় নিজেই সেটি উদ্বোধন করেছিলেন।
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে চাকরিকালে ভর্তি পরীক্ষায় আহবায়কের দায়িত্ব পালনকালে বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল এবং শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ছাত্র আটকের ঘটনা ঘটেছিল। তার প্রেক্ষিতে ছাত্ররা আমার উপর ক্ষুব্ধ হয় এবং আমাকে উপাধ্যক্ষ করা হলে কক্ষে তারা তালা দেয়। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। সেই সময়ে পুলিশ সুপার জনাব শাহাবুদ্দিন খান আমাকে সাহস ও সহযোগিতা দান করেছিলেন। এর নাম পেশাদারিত্ব। দুর্ভাগ্য, আমাদের পুলিশ সর্বক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে পারছে না।
উন্নত বিশ্বে পুলিশের ভূমিকা খুবই ইতিবাচক, তারা জনগণের বন্ধু। বৃটিশ, জার্মান, আমেরিকা ও সউদী আরবের পুলিশ সম্পর্কে আমরা অনেক প্রশংসা শুনি। বৃটিশদের নিজের দেশের পুলিশ ও বৃটিশ শাসিত দেশসমূহের পুলিশ সম্পূর্ণ আলাদা। বৃটিশরা তাদের শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য পুলিশকে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করেছে। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতো বৃটিশ শাসিত উন্নয়নশীল দেশসমূহ উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পুলিশকে শাসকদের লাঠিয়াল হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। ফলে সরকারি ও বিরোধী দলের সাথে পুলিশের আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া পুলিশ পেশাদারিত্ব (দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন) বজায় রেখে চলতে পারে না।
নামাজের সময় অনেক পুলিশকে দেখা যায় এবং তাদের চেহারায় বিনয় প্রকাশ পায়। আমি অনেক সময় তাদেরকে একটি হাদিস শোনাই - দুটি চোখকে আল্লাহ জাহান্নামের আগুনে জ্বালাবেন না। তার মধ্যে সেই চোখ যে চোখ থেকে রাতের আঁধারে আল্লাহর ভয়ে অশ্রু ঝরে এবং সেই চোখ যে চোখ জনগণের নিরাপত্তা বিধানে বিনিদ্র রজনী যাপন করে। আমাদের দেশ ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে নিয়োজিত সকলকে নিয়ে গর্ব করার মতো অবস্থা আল্লাহ তায়ালা দান করুন।
Comments
Post a Comment