জুমা আলোচনা
গাছিয়া দৌলতপুর নতুন পাড়া জামে মসজিদ
তারিখ : ২৪.০২.২০২৩
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
আল্লাহ তায়ালার দরবারে লাখো শুকরিয়া যে, তিনি দয়া করে তাঁর ঘরে উপস্থিত হওয়ার তৌফিক আমাদের দান করেছেন। এই সমাজে অনেক লোক রয়েছে, কিন্তু সবার পক্ষে মসজিদে আসার সুযোগ হয়নি। আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে মঞ্জুর করেছেন কেবল তাদের পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। আমরা আল্লাহর বাছাইকৃত বান্দা। আমরা তাঁর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি। আলহামদু লিল্লাহ।
একজন মুসলমান আজান শোনার পর আর স্থির থাকতে পারে না। মুয়াজ্জিন আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বই ঘোষণা করেন। আল্লাহর চেয়ে বড়ো আর কেহ নেই। মসজিদে হাজির হওয়াটাই তখন সবচেয়ে বড়ো কাজ। হাই আলাচ্ছলাহ, হাই আলাল ফালাহ- নামাজের দিকে এসো, কল্যাণের দিকে এসো। সেসময়ে নামাজের চেয়ে কল্যাণকর আর কোনো কাজ নেই। আখেরাতে সবার আগে হিসাব দিতে হবে নামাজের। নামাজের হিসাব দিয়ে যে পার পেয়ে যাবে সে সফলকাম। আপনারা সবাই জানেন, নামাজ বেহেশতের চাবি। যার হাতে চাবি থাকবে সে তো আশা করতেই পারে, সেই চাবি দিয়ে জান্নাতের কোনো একটা ঘর খুলতে পারবে। আপনারা নামাজে আন্তরিক হন। আশা করা যায় আল্লাহ ক্ষমা করে জান্নাত দান করবেন। সুরা মাউনে আল্লাহ বলেন, ঐ সমস্ত নামাজিদের জন্য ধ্বংস যারা নামাজে অবহেলা করে এবং লোকদেখানো কাজ করে। অর্থাৎ নামাজে অবহেলা করা যাবে না। দুই ওয়াক্ত পড়লেন আর তিন ওয়াক্ত বাদ গেল এমনটি যেন না হয়। আবার জুমা পড়লেন কিন্তু ওয়াক্তের নামাজের খবর নেই। এমনটিও যেন না হয়। জুমার নামাজ যেমন আমাদের প্রতি ফরজ তেমনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করাও ফরজ। রসুলু সা. ঐ মুসল্লিদের সুসংবাদ শুনিয়েছেন যারা এশা ও ফজরের নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করে এবং বলেছেন তাদের সমগ্র রাত ইবাদতের মধ্যে অতিবাহিত হয়। তিনি আরো বলেছেন, আমাদের ও মুনাফিকদের মাঝে পার্থক্য হলো এশা ও ফজরের সালাতে শরীক হওয়া। মুনাফিকরা ফজর ও এশার সালাতে শরীক হতে পারে না।
নামাজ সঠিকভাবে আদায় করার জন্য সহিহ করে কুরআন শিখতে হবে। রসুলুল্লাহ সা.-এর উপর প্রথম ওহি ছিল ‘ইকরা’ অর্থ পড়ো। আমি শুনেছি, আপনারা অনেকেই পড়াশোনা করছেন এবং এরই মধ্যে চারজন আমপারা শুরু করেছেন। আলহামদু লিল্লাহ।
আমি লক্ষ করছি, এই মসজিদে অনেক ছোট ছোট বাচ্চা রয়েছে। আপনারা আপনাদের বাচ্চাদের সাথে করে আনবেন। ওরা কাতারের মাঝ দিয়ে দৌড় দেয়, হাসাহাসি করে- এতে নামাজের কোনো ক্ষতি হয় না। রসুলুল্লাহ সা.-এর দুই নাতি হাসান ও হোসেন নামাজের সময় তাদের নানার পিঠে চড়ে বসতো। রসুলুল্লাহ সা. কখনই বিরক্ত হননি। আপনার সন্তানকে যদি নামাজে অভ্যস্ত করাতে এবং কুরআন শেখাতে পারেন তাহলে আপনি নিরাপদ হয়ে যাবেন। এই সন্তান আর বখাটে বা মাদকাসক্ত হবে না। বর্তমানে কিশোরদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত। বাবা-মা সবসময় উদ্বিগ্ন থাকে এবং এরা বড়ো হলে বাবা-মা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আল্লাহ তায়ালা জোর দিয়ে বলেছেন, নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। এটি আল্লাহর বাণী। এর মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। কেহ যদি যথার্থভাবে আল্লাহর ভয়ে নামাজ আদায় করে সে পরিশুদ্ধ হবেই। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, সন্তান সাত বছর হলেই তোমরা নামাজের জন্য তাগিদ দাও।
আপনারা নিজেরা দীন সম্পর্কে কিছুটা জানার সুযোগ পান কিন্তু বাড়িতে মহিলারা সুযোগ পায় না। আপনারা শোনার পর বাড়িতে তাদেরকে শোনাবেন। বাড়িতে যাদের বাবা-মা বেঁচে আছেন তারা বড়ই ভাগ্যবান। সুরা বনি ইসরাইলে আল্লাহপাক বলেছেন, পিতা-মাতা উভয়ই বা কোনো একজন যদি বার্ধক্যে উপনীত হন তাহলে উহ্ শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করো না। তাদের সাথে সবসময় নম্র আচরণ করিও। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি প্রসন্নচিত্তে তাকালে কবুল হজের সমান সওয়াব পাওয়া যাবে। কয়জনের ভাগ্যে হজ করা সম্ভব, আবার সেই হজ করা হলে তা কবুল হওয়ারই বা নিশ্চয়তা কী? রসুলুল্লাহ সা. সেই ভাগ্যবান সন্তানের জন্য সুসংবাদ শুনিয়েছেন, পিতামাতার খেদমতের বিনিময়ে কবুল হজের সওয়াব পাওয়া যাবে। বাবা-মা মারা গেলে সন্তানের কর্তব্য হয় সর্বদা তাদের জন্য দোয়া করা। মানুষ মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়, অথচ নেক সন্তানের দোয়া অব্যাহত থাকে। আল্লাহপাকের শেখানো দোয়া ‘রব্বির হামহুমা কামা রব্বা ইয়ানি ছগিরা’- এই দোয়া ব্যর্থ হবার নয়। কবুল হবেই- যিনি শেখাচ্ছেন তাঁরই কাছে করা দোয়া। বেশি বেশি করে দোয়া করবেন। পিতামাতার খেদমতের ব্যাপারে কুরআন-হাদিসে নানাভাবে বলা হয়েছে। তাদের খেদমতে রয়েছে জান্নাত অন্যথায় ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
আপনাদের ঘরে স্ত্রী রয়েছে, তাদের সাথে সর্বদা ভালো ব্যাবহার করবেন। ঝগড়াঝাটি ও বকাঝকা করবেন না। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। কিয়ামতের দিন স্ত্রীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। স্ত্রী আপনার সম্পর্কে ভালো সাক্ষ্য প্রদান করলে আপনি সফলকাম হবেন। উত্তম ব্যবহার না করলে স্ত্রী কখনই আপনার সম্পর্কে ভালো সাক্ষ্য দেবেন না। আজকাল প্রায় সংসারে মনোমালিণ্য শোনা যায় এমনকি তা বিচ্ছেদে রূপ নেয়। আপনারা একে অপরের প্রতি উদার হবেন এবং ছাড় দিয়ে চলবেন তাহলে সংসার সুখের হবে।
আপনাদের ইমাম সাহেব পাঁচ ওয়াক্ত ও জুমা আদায় করে থাকেন। আপনারা তাঁর প্রয়োজনটার প্রতি একটু খেয়াল করবেন। আপনাদের ইমাম, তিনি তো আর তাঁর সমস্যার কথা অন্য কাউকে বলতে পারেন না, আপনাদেরই ভাবতে হবে। আল্লাহপাক বলেন, দান- সাদাকা তাঁদেরই হক যারা সারাক্ষণ আল্লাহর দীনের কাজে নিয়োজিত। মসজিদে একটু উদার হস্তে আপনারা দিলে মসজিদ কমিটি বাড়িয়ে দিতে পারেন। আল্লাহ ও তাঁর রসুল সা. নানাভাবে আল্লাহর পথে খরচের কথা বলেছেন। আল্লাহর পথে খরচ করলে আল্লাহও আপনাদের উদারহস্তে দান করবেন।
নামাজে যত্নশীল ও সহিহ করে কুরআন শিক্ষা গ্রহণের তৌফিক আল্লাহপাক দান করুন এবং তাঁর পথে চলাটা সহজ করে দিন।
Comments
Post a Comment