গতকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক পুলিশ কর্মকর্তা (বিসিএস অফিসার) ও পুলিশ কনস্টেবলের আত্মহত্যা অনেককে ভাবিয়ে দিয়েছে। পুলিশ কনস্টেবলের বয়স মাত্র ২৩ বছর। এখনো বিয়ে করেনি। দুই ভাই-বোনের সে ছোট। বাবা-মার আদর, সরকারি চাকরি (আর্থিক নিরাপত্তা), নিজস্ব বাড়ি সবকিছুই ছিল। অভাব ছিল কিসের যা তাকে আত্মহত্যার মতো সর্বনাশা পন্থা অবলম্বনে প্ররোচিত করেছে? আর একজন বিসিএস কর্মকর্তা। জগৎ সম্পর্কে এমন একজন পরিপক্ব যিনি মানুষকে পথ দেখাবেন, হতাশা থেকে সরিয়ে আনবেন সেই তিনিই পথ হারিয়ে ফেললেন। তদন্ত হবে, হয়তো বেরিয়ে আসবে। কিন্তু ব্যক্তি ও পরিবারের যে সর্বনাশ হলো তা কখনোই পূরণযোগ্য নয়।
আমি হেডলাইন করেছি জোড়া খুন। হয়তো বলবেন, তারা তো আত্মহত্যা করেছে। হ্যাঁ, আত্মহত্যাকারীও খুনি। সে শুধু খুনি নয় জঘন্য খুনি। আসলে জীবন সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিই এর জন্য দায়ী। মানুষ আল্লাহ তায়ালার সেরা সৃষ্টি, তাঁরই প্রতিনিধি। মর্যাদায় আল্লাহর পরেই তার অবস্থান। সেই মানুষকে হত্যা করা (সে নিজে করুক বা আর কেউ করুক) কি স্বাভাবিক? জীবন সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণা, দুনিয়ার জীবনের পরে আর কিছু নেই। তাই সে যে কোনো উপায়ে দুনিয়াকে লুটেপুটে খেতে চায়। আর ব্যর্থ হলে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে।
ধর্মীয় বিশ্বাস অর্থাৎ আখেরাতে জবাবদিহির অনুভূতি একজন ব্যক্তিকে সবধরনের পাপাচার থেকে দূরে রাখে এবং পাহাড়সম বিপদাপদে পরম ধৈর্য অবলম্বনের সাহস যোগায়। আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী ব্যক্তি কখনোই খুনি হতে পারে না বা নিজেকে খুন করতে পারে না। সে জানে, খুনি মাত্রই জাহান্নামি- নিজেকে খুন করুক বা অপরকে করুক। আত্মহত্যা একটি ঘৃণ্য কাজ - সহানুভূতি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। হ্যাঁ, মা-বাবা বা অভিভাবকদের শোকে আমরা সমবেদনা প্রকাশ করতে পারি। আত্মহত্যাকারী ভীরু ও কাপুরুষ এবং জাহান্নামি। সে নিজেকে ধ্বংস করার পাশাপাশি পরিবারকেও ধ্বংস করে এবং তার পরিবার কখনোই এমন সন্তানকে স্মরণ করে না।
সামাজিক নানা সমস্যার সমাধানে আমরা উদ্বুদ্ধকরণে নানা কর্মসূচি অবলম্বন করে থাকি এবং সেটা করা হয় ধর্মকে বাদ রেখে। ধর্মে বিশ্বাস ও অনুশীলন মানুষকে বিনয়ী করে, অপরের প্রতি সদাচরণে উদ্বুদ্ধ করে এবং পরকীয়া ও মাদকের মতো সর্বনাশা নেশা থেকে হেফাজত করে। এমন মানুষ বিপদাপদে ধৈর্য ধারণের প্রেরণা পায় এবং স্বামী/স্ত্রী, সন্তান ও অন্যান্যদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণের শিক্ষা লাভ করে। আত্মহত্যার মতো জঘন্য কর্মকাণ্ড থেকে সবশ্রেণির মানুষকে রক্ষা করার জন্য ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুশীলনের ব্যাপক চর্চা রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করতে পারে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান করুন।
Comments
Post a Comment