Skip to main content

আমরা কৃতজ্ঞ হই


প্রথমত কৃতজ্ঞ হই মহান আল্লাহর প্রতি তাঁর অফুরন্ত দানের কারণে এবং সেই সাথে তাঁরই দান পিতামাতা, স্বামী/স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিও। এই পৃথিবীতে আমরা অনেকের কাছে ঋণী এবং এই ঋণ কখনো শোধ হবার নয়। আমরা সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে কিছুটা হালকা হতে পারি মাত্র।

আমরা উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে সর্বদা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো মহান আল্লাহর এবং তা তাঁরই শেখানো ভাষায় 'আলহামদু লিল্লাহ' উচ্চারণের মধ্য দিয়ে। এরপর আমার ওপর যার অবদান যতো বেশি তার প্রতি এবং এই দিক দিয়ে সর্বাধিক কৃতজ্ঞতা প্রাপ্তির বড় হকদার নিজের পিতামাতা। আল্লাহপাকও সেটিই শিখিয়েছেন। তাঁর আনুগত্যের পাশাপাশি পিতামাতার সাথে সদাচরণ করার জোর তাগিদ দিয়েছেন তিনি। কৃতজ্ঞতা অর্থ সর্বদা তাঁদের প্রতি বিনয় প্রকাশ ও উত্তম আচরণ করা। 


বর্তমানে আমাদের সমাজে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ নেই বললেই চলে। ফলে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি-ভালোবাসা লোপ পাচ্ছে। এমনকি আমাদের দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনও নিরানন্দের হয়ে পড়ছে। মানুষ পরিবার গড়ে তোলে একটু সুখ-শান্তি, আনন্দ, তৃপ্তি পাওয়ার লক্ষ্যে। দুর্ভাগ্য  কৃতজ্ঞতাবোধ না থাকার কারণে সেটি অধরাই থেকে যাচ্ছে। আমরা যদি স্বামী-স্ত্রীর বিষয়টিই চিন্তা করি তাহলে দেখবো, যে সুখ, শান্তি ও পরিতৃপ্তির জন্য মানুষ ঘর বাঁধে সেই কাঙ্ক্ষিত সুখ অনেক পরিবারেই অনুপস্থিত।

হয়তো স্ত্রী মনে করছে, এই পাষণ্ড স্বামীর পাল্লায় পড়ে আমার জীবনটাই মাটি হয়েছে। আমি হয়েই কেবল তার মতো অপদার্থের সংসার করছি। এভাবে সারাক্ষণ একটি অতৃপ্তি নিয়ে সে সংসার করছে। এমন সংসারে কখনই শান্তি আসতে পারে না। এমন হয় অকৃতজ্ঞতার কারণে। আপনি খেয়াল করলে আপনার স্বামীর অনেক  ইতিবাচক দিক খুঁজে পাবেন। নেতিবাচক দিক একটু বাদ রেখে ভালো দিকগুলো নিয়ে চিন্তা করুন, আপনার  মন কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠবে। বিধবা বা ডিভোর্সি একজন মহিলার সাথে একটু মেলামেশা করুন। দেখবেন তার মনে কতো ব্যাথা-বেদনা। তাই আর না, আপনি আপনার স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞ হোন, আপনার মন প্রশান্ত হয়ে উঠবে।

আবার অনেক স্বামী রয়েছে যাদের স্ত্রীর ব্যাপারে অনেক অভিযোগ। সে আপনার সন্তানের মা। আপনার বিপদে বা অসুস্থতায় যে সবচেয়ে বেশি অস্থির হয়ে পড়েন এবং আপনার সেবাযত্নে নিজেকে নিয়োজিত করেন তিনি আপনার স্ত্রী। সংসারে তার সেবা মূল্যায়ন করা বড় কঠিন। নেতিবাচকের পাশাপাশি তার অনেক ইতিবাচক গুণ রয়েছে। সেগুলোর কারণে আপনি তার প্রতি কৃতজ্ঞ হোন। আপনিও একজন বিপত্নীক পুরুষের সাথে কথা বলে তার কষ্টটা অনুভব করতে পারেন।

দাম্পত্য জীবনে সুখ আল্লাহ তায়ালার বড় নেয়ামত। কখনই মান-অভিমান হবে না এমনটি নয়। নবিদের জীবনেও হয়েছে। শয়তান সবসময় উস্কানি দেয়। শয়তানের সেরা কাজের মধ্যে অন্যতম স্বামী-স্ত্রী ও ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ বাধিয়ে দেয়া। শয়তান আমাদের প্রকাশ্য শত্রু। বিরোধ মিটিয়ে ফেলা অর্থ শয়তানকে চপেটাঘাত করা যেটা আল্লাহর কাছে খুব পছন্দনীয়। আমরা আখেরাতে বিশ্বাসী মানুষ। যে কাজে আল্লাহ খুশি সেটা করতে আমরা আগ্রহী হই এবং যে কাজে শয়তান খুশি তা থেকে অনেক দূরে থাকি।

সন্তান-সন্ততি আল্লাহ তায়ালার বড় নেয়ামত। আমরা সর্বদা তাদের প্রতি দয়ার্দ্র আচরণ করবো এবং তাদের নৈতিক শিক্ষা দানে কখনই কার্পণ্য করবো না। শিশু অবস্থায় তাদেরকে কৃতজ্ঞতাবোধ শিক্ষা দেব। বাবা-মা তাদের নিয়েই বাঁচতে চায় ও স্বপ্ন দেখে। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা দেখে শেখে। পরিবারে যারা  অভিভাবক তাদের মধ্যে পরস্পর শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা শিশু- কিশোরদের মানসিকতা গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

তাই আসুন, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার পাশাপাশি আমরা পরিবার ও সমাজের প্রতিও কৃতজ্ঞ হই। আল্লাহ তায়ালা তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দার প্রতি নেয়ামত বাড়িয়ে দেন। এর ফলে আমরা সুখী সুন্দর পরিবার ও সমাজ গড়ে তুলতে পারি। আল্লাহপাক আমাদের সহায় হোন।


Comments