শিশুরা বড় অস্থির। আচরণে, কথাবার্তায় সবক্ষেত্রে তাদের অস্থিরতা প্রকাশ পায়। সাথে সাথে অসম্ভব জেদি। যেটি দাবি করে সেটি পূরণ না করে উপায় থাকে না। এমতাবস্থায় পিতামাতা বড় অসহায় হয়ে পড়ে। সব শিশুর ক্ষেত্রেই এমনটি হয়ে থাকে। হয়তো একটু কমবেশি।
আমার এখন ছয় নাতি-নাতনি। মেয়ের এক মেয়ে ও এক ছেলে। গতকাল নাতনির টনসিল অপারেশন হয়েছে। আমরা গতকাল নাতনিকে দেখতে যাওয়ার সময় সাথে থাকা নাতি সারাক্ষণ কথা বলে ও নড়াচড়া করে। তার কথা, আমি নড়াচড়া করছি না, গাড়ি নড়াচড়া করছে। গাড়িতে সবাই বিরক্ত। বললাম, যে বেশিক্ষণ চুপ থাকবে সে ফার্স্ট হবে ও তাকে পুরস্কার দেয়া হবে। তাতে দেখলাম, কাজ হলো। আসলে ধমকে বা বকায় তাদেরকে মোটেই থামানো সম্ভব নয়। স্কুলে বছর তিনেক অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সেটিই লক্ষ করেছি।
নাতনির অপারেশনের কারণে স্বাভাবিকভাবে ওর মা তার কাছে ছিল। রাতে হঠাৎ করে নাতি বলে বসলো, মাকে চাই। বাসায় ওর বাবা, দাদী, নানা-নানী ও এক ফুপু। আমার সবাই মিলে ওকে ম্যানেজ করতে পারলাম না। বরং সবাই মিলে আচ্ছারকম মা'র খেলাম। শেষে বাধ্য হয়ে রাত বারোটার পরে হাসপাতাল থেকে ওর মাকে আনলাম এবং আনার পর সে থামে। এখন ভাবি, আমার মেয়ের দুটি সন্তান (আমাদের চারটি) এবং তাদের লালন-পালনে তারা গলদঘর্ম হচ্ছে অথচ আমার মা'র ন'টি সন্তান (আমরা চার ভাই ও পাঁচ বোন), সংসারের সকল দায়িত্ব পালন করে আমাদের লালন-পালনে মা'র কতো কষ্ট। সেটা অনুভব করে মা'র প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় নত হয়ে যেতে হয়। আল্লাহপাক কতভাবেই না বাবা-মার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য সন্তানদের বলেছেন এবং দোয়া করার ভাষাও শিখিয়ে দিয়েছেন (রব্বির হামহুমা কমা রব্বা ইয়ানি ছগিরা)। আলহামদু লিল্লাহ।
প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু কি আমার-আপনার সন্তানই এমন জেদি না সব শিশুই এমন করে? আমি বলবো, সব শিশুই এমন করে এবং এটিই শিশুর প্রকৃতি। তাদের হাজারো প্রশ্ন, হাজারো জিজ্ঞাসা। তাদের সাথে বিতর্ক করলেন না হেরে গেলেন। একটি শ্লোগান, বাচ্চাদের শুধুই হ্যাঁ বলুন। এই শ্লোগানটি যথার্থ। আপনি একটু ভাবুন তো। আপনার সন্তান বা নাতি নামাজের সময় সেজদায় গেলে আপনার পিঠে চড়ে বসলে আপনার আচরণটা কেমন হবে বা আশেপাশের লোকজনই বা কী করবে? নিশ্চয়ই বলে উঠবে, বেয়াদব, অসভ্য। অথচ প্রিয়তম নবি মুহাম্মদ সা.-এর নাতিদের পিঠে চড়াকে আমরা বড় ভক্তিভরে আলোচনা করে বলি আমাদের নবি শিশুদের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত কোমল ও দয়ার্দ্র এবং আপনারা শিশুর প্রতি কোমল হোন।
শিশুকে শিশু হিসেবেই ভাবতে হবে এবং তারা হবে চঞ্চল ও জেদি। অন্যান্য ইবাদতের মতো শিশুকে সময়দানও ইবাদত ও প্রভূত সওয়াবের কাজ। তাই আমরা শিশুদের সাথে খেলাধুলায় মেতে উঠে ও ওদের আনন্দে নিজেরাও শরীক হই। আল্লাহপাক সব শিশুকে দ্বারা তাদের পিতামাতার চোখকে শীতল করে দিন। আমিন। ০১.০৭.২০২২
Comments
Post a Comment