Skip to main content

আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভের উদ্দেশ্যে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করো


আজ মিরপুর কাঁঠালবাগ জামে মসজিদে জুমার খুতবায় সম্মানিত খতিব আলহাজ্ব মুফতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান আশরাফী আল্লাহর হামদ ও রসুল সা.-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশের পর সুরা আলে ইমরানের ১৩৩ নং আয়াত উদ্ধৃত করে নেক কাজে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতার আহবান জানান। 

যুবসমাজকে মসজিদমুখি এবং কুরআন চর্চায় আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে কাঁঠালবাগ জামে মসজিদে এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। বিষয় ছিল- টানা চল্লিশ দিন তাকবিরে উলার সাথে জামাতে নামাজ আদায় এবং পবিত্র রমজান মাসে কুরআন খতম। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানপ্রাপ্ত প্রায় ৪০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। 

খতিব মহোদয় তাঁর আলোচনা সংক্ষিপ্ত করে তাঁর মুসল্লিদের ইমাম সাহেবের মাধ্যমে সুরা ফাতিহা, সুরা লাহাব ও সুরা ইখলাস মশক করান এবং বিজয়ীদের মধ্যে তিনি পুরস্কার প্রদান করেন। পুরস্কার হিসেবে জায়নামাজ এবং বই দেয়া হয়। খতিব মহোদয় ব্যতিক্রমধর্মী এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য মসজিদ কমিটি, সকল প্রতিযোগী এবং অর্থ যোগানদাতা ও সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য দোয়া করেন।

খতিব মহোদয় কর্তৃক উদ্ধৃত আয়াতের অর্থ : ‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা পাওয়ার কাজে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করো, আর সেই জান্নাতের জন্যও, যার প্রশস্ততা আসমানসমূহ ও পৃথিবীর সমান, এটি প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য’- সুরা আলে ইমরান ১৩৩। এর সাথে তিনি সুরা বাকারার ১৪৮ নং আয়াত থেকে উল্লেখ করেন ‘তোমরা কল্যাণের কাজে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করো’।

খতিব মহোদয় বলেন, আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের প্রতিযোগিতার আহবান জানিয়েছেন তাঁর ক্ষমা ও জান্নাত লাভের জন্য। অর্থাৎ নেক কাজে একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ সকল কল্যাণকর কাজে পরস্পর প্রতিযোগিতা করবে এবং চেষ্টা থাকবে সবাইকে ছাড়িয়ে প্রথম হওয়ার প্রতি। 

মুসলমানদের জীবনে কোনো বিভক্তি টানা যাবে না। অর্থাৎ মসজিদকেন্দ্রিক জীবন এবং এর বাইরে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা অর্থাৎ নামাজ-রোজা-হজ-জাকাত করা হবে আল্লাহ ও রসুল সা.-এর বিধান মতে এবং বাকি জীবন চলবে নিজের প্রবৃত্তি বা আর কারো নিয়মানুসারে। না, এর কোনো সুযোগ নেই। একজন মুসলমানের জীবন হতে হবে পুরোটাই আল্লাহ ও তাঁর রসুল সা.-এর নিয়মানুসারে।

খতিব মহোদয় দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, দুর্ভাগ্য! আজ মুসলমানরা নেক কাজ নয় গুনাহের কাজে প্রতিযোগিতা করছে। অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে ধন-সম্পদ উপার্জন, নগ্নতা-বেহায়াপনার কাজে কে কতখানি অপরকে ছাড়িয়ে যেতে পারে আজকে যেন তারই প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা চলছে ব্রাজিল- আর্জেন্টিনার খেলা নিয়ে এবং তা নিয়ে মারামারিও হয়। 

আমাদের উপলব্ধি করতে হবে আন্তর্জাতিক এসব খেলাধুলায় আমাদের কোনো কল্যাণ নেই। এখানে রয়েছে জুয়া ও অশ্লীলতার সয়লাব। মুসলমান হিসেবে আমরা এসব খেলাধুলায় মেতে উঠতে পারি না। খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম ইসলাম হারাম করেনি। ইসলামের নির্ধারিত সীমা মেনে চললে সবই জায়েজ। অর্থাৎ সেখানে পর্দাহীনতা থাকবে না, জুয়া থাকবে না বা অশ্লীলতার কোনো কিছু থাকবে না।

খতিব মহোদয় রসুলুল্লাহ সা.-এর সময়ের খেলাধুলা এবং নানা প্রতিযোগিতার কথা উল্লেখ করেন। ঘোড়দৌড়, উটের প্রতিযোগিতা, তীর নিক্ষেপ, বর্শা নিক্ষেপ, মল্লযুদ্ধ এসব ছিল এবং স্বয়ং রসুলুল্লাহ সা. নিজে এসব প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন। আমরা যেমন বাছাই করে প্রতিযোগিতার আয়োজন করি তিনিও তেমনটি করেছেন। যাদের যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়া ছিল তাদের দূরত্ব ছিল বেশি এবং যাদের প্রশিক্ষণহীন ঘোড়া তাদের স্বল্প দূরত্ব দিয়ে তিনি প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। উটের দৌড় প্রতিযোগিতাও ছিল। খেলাধুলা কোনটিই নিষিদ্ধ নয়, শর্ত হলো ইসলামের বিধানের অধীন হতে হবে। 

রসুলুল্লাহ সা. নিজে মল্লযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তৎকালে সেরা যোদ্ধা রুকানাকে পরাস্ত করেন। রুকানা ছিল অপ্রতিদ্বন্দী। দেশ-বিদেশ থেকে বীর পুরুষরা তার সাথে লড়তে আসতো এবং সে সহজেই তাদের পরাস্ত  করতো। তার ছিল গর্ব ও অহঙ্কার এবং সে বিশ্বাস করতো, তাকে কেউ কখনো পরাস্ত করতে পারবে না। চলার পথে একদিন রসুলুল্লাহ সা.-এর তার সাথে সাক্ষাত ঘটে। তিনি বলেন, হে রুকানা! তুমি ইসলাম গ্রহণ করো। সে শর্ত দিয়ে বলে, যদি মল্লযুদ্ধে তুমি আমাকে হারাতে পারো তাহলে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবো। রসুলুল্লাহ সা. তাৎক্ষণিক রাজি হয়ে যান। 

মুহাম্মদ সা.-এর প্রথম আঘাতেই রুকানা পরাস্ত হয় এবং বুকের উপর চেপে বসলে সে অসহ্য চাপ অনুভব করে। সে তখন রসুল সা. ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানায় এবং রসুলুল্লাহ সা. তাকে ছেড়ে দেন। সে বিস্মিত হয়ে পড়ে। সে বুঝে উঠতে পারে না। রসুলুল্লাহ সা.-কে আবার সে আহবান জানায়। একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। রুকানার বিশ্বাস হতে চায় না। সে তৃতীয়বার আহবান জানায় এবং মুহাম্মদ সা. তাকে পরাস্ত করেন। তখন রসুলুল্লাহ সা. রুকানাকে ইসলাম গ্রহণের জন্য আহবান জানালে সে আরো অলৌকিক ঘটনা দেখতে চায়। 

রসুলুল্লাহ সা. সামনের একটি গাছকে তাঁর কাছে চলে আসার জন্য ইসারা করলে গাছটি চলে আসে। শেষে রুকানা ইসলাম গ্রহণ করে। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় খেলাধুলা ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। নির্মল আনন্দ উপভোগ ও শরীর গঠনে খেলাধুলার রয়েছে অনন্য ভূমিকা। ইসলামের আপত্তি তখনই যদি সেখানে শরিয়তের বিধান লঙ্ঘিত হয়।

খতিব মহোদয় ইসলামের দুশমনদের খপ্পর থেকে বেরিয়ে নিজস্ব কৃষ্টি-কালচারকে সমুন্নত রেখে গোটা জীবন ইসলামের রঙে রাঙিয়ে তোলার জন্য তাঁর মুসল্লিদের প্রতি আহবান জানান। সংক্ষেপিত।

জুমার খুতবা

০৩.০৫.২০২২

Comments