Skip to main content

ধনীর মাপকাঠি


এই পৃথিবীতে আমরা কেহই নিজ অবস্থানে সুখী নই। আমরা আরো চাই। সেই সালমান এফ রহমান বলি বা বিল গেটস বলি। সবাই আরো চায়। এই চাওয়ার কোনো শেষ নেই।

অর্থনীতিতে অভাবের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রথম হলো অভাব অসীম। একটি পূরণ হলে আর একটি চলে আসে। আল্লাহও মানবপ্রকৃতি বলতে গিয়ে সুরা তাকাসুরে বলেছেন, মৃত্যুর মুখ পর্যন্ত পৌঁছেও তার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা শেষ হয় না। রসুলুল্লাহ সা. কতো চমৎকারভাবেই না বলেছেন, মানবসন্তানকে এক উপত্যকা পরিমাণ সম্পদ দেয়া হলে সে আর একটি চায়, মাটি ছাড়া কোনকিছু তাকে তৃপ্ত করতে পারে না

আল্লাহ তায়ালা নিজেই ধনীর একটি মানদণ্ড দিয়েছেন।  ইসলামের দৃষ্টিতে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিককে ধনী বলা হয়। তার ওপর জাকাত ও হজ ফরজ। আল্লাহ তায়ালার দৃষ্টিতে আমিও একজন ধনী। আমি তাঁর একান্ত অনুগ্রহে জাকাত দেই এবং সস্ত্রীক হজ সম্পন্ন করেছি। আলহামদু লিল্লাহ। 

ভিন্ন দৃষ্টিতেও আমরা দেখতে পারি। সাধারণত মানুষ ঋণ করে অভাব-অনটনে পড়ে। সেই হিসেবে যারা ঋণগ্রস্ত তাদেরকে আমরা দরিদ্র বলতে পারি। ইসলাম ঋণকে খুবই অপছন্দ করেছে। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির উচিত প্রথম সুযোগেই তার ঋণ পরিশোধ করা। ইসলামের বক্তব্যও তাই। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহ যদি কাউকে শাস্তি দিতে চান তবে তার ঘাড়ে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেন। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জানাজা পড়াতে তিনি রাজি হতেন না। ডা. লুৎফর রহমানের লেখা পয়সাকড়ি প্রবন্ধে আমরা পড়েছি, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির চিত্তে স্বাধীনতা থাকে না। আমি নিজে ঋণ গ্রহণকে খুবই অপছন্দ করি এবং আল্লাহ আমাকে আপাতত ঋণমুক্ত রেখেছেন। আলহামদু লিল্লাহ। 

সুদ ছাড়া যে ঋণ সেই ঋণকে বলা হয় করজে হাসানা। ঋণ গ্রহণকে নিরুৎসাহিত করা হলেও ঋণদানকে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। অনেক সময় মানুষ বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সেসময়ে তাকে ঋণ দিলে সে উপকৃত হয়। আমরা যাদেরকে ধনী ভাবি বা সমাজ যাদেরকে ধনী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, দেখা যাবে তাদের অধিকাংশই ঋণখেলাপী। ঋণখেলাপী কাউকে ধনী বলা যায় না বরং তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী মুনাফিক। আবার তাদের অর্থবৃত্তের পেছনে যদি খেয়ানত থাকে তাহলে রসুলুল্লাহ সা.-এর ভাষায় তারা হতদরিদ্র। 

ধনী ও দরিদ্র একটি আপেক্ষিক ব্যাপার। আমাদের বাসায় যে মহিলাটি কাজ করে বা আমরা যে রিকশায় চলাফেরা করি বা ভ্যানের উপর থেকে সব্জি ক্রয় করি তাদেরকে বিবেচনা করলে নিজেদেরকে ধনী ভাবা যায়। রসুলুল্লাহ সা. আর্থিক বিষয়টা নিচে যারা অবস্থান করে তাদের এবং তাকওয়ার বিষয়টি যারা উপরে আছেন তাদেরকে বিবেচনা করতে বলেছেন। তাহলে অন্তরে  কৃতজ্ঞতাবোধ জাগ্রত হবে। আমরা যে অবস্থানে আছি তাতে বলা যায় শতকরা দশ জন মানুষের কাতারে আমরা রয়েছি।

রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, মনের ঐশ্বর্যই প্রকৃত ঐশ্বর্য। আমরা আমাদের অবস্থানে যদি স্বস্তি পাই, দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনটাকে যদি আনন্দময় করতে পারি, তাহলে দেখা যাবে আমাদের চেয়ে পৃথিবীতে সুখী আর কেউ নেই। সুখ একান্তই অনুভবের বিষয়। আমরা যদি নিজেরা নিজেকে সুখী না ভাবি তাহলে কেহ সুখ এনে দিতে পারবে না। তাই আল্লাহপাক যা দিয়েছেন তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার মধ্যেই রয়েছে সুখ। এর অর্থ এ নয় যে আমরা আমাদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করবো না। হ্যাঁ, সেই চেষ্টা আমাদের অব্যাহত থাকবে। কিন্তু হতাশা যেন আমাদের মধ্যে পেয়ে না বসে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর দেয়া নেয়ামতে পরিতুষ্ট জীবন যাপনের তৌফিক দান করুন। আমিন।

Comments