Skip to main content

ইবাদতের মাধ্যমে গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়

জুমা আলোচনা 

১৭.০৬.২০২২

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

মাল্টিপ্ল্যান রেডক্রিসেন্ট সিটি (কুশিয়ারা, পদ্মা ও সুরমা ভবন), মিরপুর জামে মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ সাইয়াফ শুরুতে আল্লাহপাকের হামদ ও রসুল সা.-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করেন। হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য, নবি মুহাম্মদ সা.-এর প্রতি দরদ ও ভালোবাসা এবং বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রসঙ্গে তিনি আজকের খুতবায় আলোচনা করেন।

ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। আল্লাহপাক সুরা আলে ইমরান ৯৭ নং আয়াতে হজের ফরজিয়াতের প্রসঙ্গে বলেন, ‘মানুষের ওপর আল্লাহর এ অধিকার যে, বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছাবার শক্তি-সামর্থ্য যে রাখে, সে যেন হজ করে এবং যে এ নির্দেশ অমান্য করে কুফরির আচরণ করবে, তার জেনে রাখা উচিৎ, আল্লাহ বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী নন।’ খতিব মহোদয় কুরআন ও হাদিস থেকে হজ প্রসঙ্গে প্রচুর উদ্ধৃতি পেশ করেন। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে লোক হজ করলো এবং অশ্লীলতা, গুনাহ ও ঝগড়াঝাটি পরিহার করলো সে যেন সদ্যজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে গেল। হজের ফজিলত প্রসঙ্গে তিনি অনেকগুলো হাদিস উল্লেখ করেন।

খতিব মহোদয় হাদিস উদ্ধৃত করে বলেন, এক লোক মসজিদে রসুলুল্লাহ সা.-কে বলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি চোখের গুনাহ করে ফেলেছি, গুনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়ার উপায় কী? রসুলুল্লাহ সা. চুপ থাকেন। নামাজ শেষে সেই লোক রসুল সা.-কে আবারও একই কথা বলেন। জবাবে তিনি বলেন, তুমি কি আমাদের সাথে নামাজ আদায় করেছ? লোকটি বলেন, হ্যাঁ, ইয়া রসুলুল্লাহ সা.। রসুল সা. বলেন, আমাদের সাথে নামাজ আদায় তোমার গুনাহ মিটিয়ে দিয়েছে। এছাড়া হাদিসে রয়েছে ওজুর মাধ্যমেও গুনাহ মাফ হয়। ওজুর সময় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ ধোয়ার সময় ওজুর পানির সাথে গুনাহসমূহও ঝরে পড়ে।

প্রত্যেকটি ইবাদতই গুনাহের কাফ্ফারা হিসেবে কাজ করে। কবিরা গুনাহ মাফ পাওয়ার জন্য তওবা করতে হয়। তওবা অর্থ গুনাহ থেকে ফিরে আসা। মন্দ কাজ করার পরে অনুতপ্ত হওয়া ও নেক কাজ করা হলে বান্দার গুনাহ দূর হয়ে যায়। রোজা সম্পর্কেও বলা হয়েছে যে ঈমান ও এহতেছাবের সাথে যে লোক রোজা রাখবে আল্লাহ তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। বান্দাকে ক্ষমা করার মধ্যে আল্লাহর যতো আনন্দ।

অন্যান্য ইবাদতের চেয়ে হজের মাধ্যমে গুনাহের পরিসমাপ্তি যেন আরো একটু বেশি। হজের নিয়ত করে মানুষ যখন ইহরামের সেলাইবিহীন দু’টুকরা কাপড় পরিধান করে এবং খোলা মাথায় ও পায়ে চটি স্যান্ডেল পায়ে একেবারে দীনহীন বেশে লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক বলে যাত্রা শুরু করে তখনই তার মধ্যে একটি ভিন্নতরও ভাবধারা সৃষ্টি হয়। সে হয়ে যায় একান্ত আল্লাহর। আল্লাহর ঘর যেই ঘরের দিকে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে তাঁর এক বান্দা ও পয়গম্বর হজরত ইবরাহিম আ. তাওয়াফ ও নামাজের জন্য ডাক দিয়েছিলেন তাতে সাড়া দিয়ে প্রতি বছর বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে হাজি সাহেবরা ছুটে আসেন। হাজি সাহেবরা হন সেই ঘরের মেহবান এবং স্বয়ং আল্লাহু রব্বুল আলামিন হন মেজবান। মেজবানের দায়িত্ব হয় মেহমানের সম্মান করা।

ভাষার পার্থক্য, রঙের পার্থক্য সবকিছু ভুলে গিয়ে একই পোশাকে আল্লাহর ঘরে এক সাথে তাওয়াফ, নামাজ, কুরবানি, পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের এক নজির সৃষ্টি হয়। হাজি সাহেবদের মুখে কেবল আল্লাহরই প্রশংসা এবং তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্বের ঘোষণা উচ্চারিত হয়। এই ঘোষণার মাধ্যমে শিরকের মূলোৎপাটন করে জানান দেয়া হয় যে, রাজত্ব আল্লাহর এবং আল্লাহর এই কর্তৃত্বে কারো কোনো অংশ নেই।

হজের সকল আনুষ্ঠানিকতায় রয়েছে আল্লাহর স্মরণ এবং তাঁরই কাছে আবেদন-নিবেদনের কথা। আল্লাহপাক তাঁর বান্দাকে দিতে চান এবং বান্দাও জানে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ করার ক্ষমতা কেবল আল্লাহরই রয়েছে। নির্ভেজাল তাওহিদের শিক্ষা ও প্রেরণা হজের সকল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে নিহিত। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, কবুল হজের (হজে মাবরুর) বিনিময় জান্নাত। সেই কবুল হজের শর্ত হলো- হালাল রুজি, রসুল সা.-এর দেখানো নিয়মে হজ সম্পন্ন করা এবং আল্লাহরই ইদ্দেশ্যে হজ পালন। 

সকল ইবাদতের মতো হজও রসুলুল্লাহ সা.-এর নিরঙ্কুশ আনুগত্যের নাম। রসুলুল্লাহ সা. যা করেছেন এবং যেভাবে করেছেন সেভাবে সম্পন্ন করার মধ্যেই রয়েছে হজের কবুলিয়াত। ঘর থেকে বের হওয়ার পর থেকে আবার ফিরে আসা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় রসুলুল্লাহ সা.-এর আনুগত্য এবং সকল পাপাচার থেকে মুক্ত থেকে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির এক ছবক নিয়ে হাজি সাহেবরা নিজ নিজ বাড়ি ফেরেন। দীর্ঘ সময়ব্যাপী আল্লাহ ও তাঁর রসুল সা.-এর আনুগত্য এবং সর্বদা আল্লাহর স্মরণ ও ক্ষমা চাওয়ার প্রেক্ষিতে হাজি সাহেব হয়ে পড়েন একেবারে পূত-পবিত্র। এজন্যই হজের এত গুরুত্ব ও মর্যাদা। সরাসরি বলা হয়েছে মকবুল হজের বিনিময় জান্নাত।

রসুলুল্লাহ সা. ও তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী মা আয়েশা রা. সম্পর্কে কটূক্তির প্রেক্ষিতে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব নবির মর্যাদার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় খতিব মহোদয় নবিপ্রেমী মুসলিম জনতাকে অভিনন্দন জানান। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষ জেগে উঠেছে। বাজার করতে গিয়ে অনেক ক্রেতা বিক্রেতাকে জানাচ্ছে যে, ভারতীয় পণ্য বাদ দিয়ে দিন। আবার অনেক দোকানদার ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছে ভারতীয় পণ্য বিক্রি হয় না। নবিপ্রেম সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, মুসলিম উম্মাহ একটি দেহের মতো। শরীরের কোনো অঙ্গে আঘাত লাগলে সারা শরীরে যেমন ব্যথা অনুভূত হয় তেমনি বিশ্বের কোথাও কোনো মুসলমান আঘাতপ্রাপ্ত হলে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ কষ্ট অনুভব করে। এই কষ্ট অনুভবই ঈমানের পরিচায়ক।

ইসলামের শত্রুদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে যে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি মুহাব্বত ও ভালোবাসা মুসলমানরা হারিয়ে ফেলেনি। দেশে দেশে মানুষ সরব প্রতিবাদের মাধ্যমে তা দেখিয়ে দিয়েছে। নবির সা. ভালোবাসা প্রশ্নে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত নেই দলমত নির্বিশেষে সকলে প্রতিবাদ করার মধ্য দিয়ে তাদের ঈমানি চেতনার বহিপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। খতিব মহোদয় সরকারি পর্যায়ে প্রতিবাদ জ্ঞাপন এবং সংসদে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।

সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় খতিব মহোদয় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বন্যার্থদের সাহায্যার্থে সরকারের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহবান জানান। বালা মুসিবত আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং দূরও করেন তিনি। তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার জন্য তিনি সবার প্রতি আহবান জানান এবং নামাজ শেষে বিশেষভাবে দোয়া করেন। সংক্ষেপিত। 

শ্রুতিলিখন : প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী।

Comments