মুকুল ও বেলির (শ্যালক ও শ্যালকবৌ) আগ্রহেই বার্ধক্য বয়সে এক দুঃসাহসিক জার্নি হয়ে গেল। বিরতিহীন ছিল আমাদের চলা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে প্রথম দিনে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে আমরা ছুটেছিলাম পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। সেখানে আমাদের সাথে বাড়তি আনন্দ ছিল শ্যালিকার মেয়ে, জামাই ও নাতনি (তনু-মিলন এবং হুমায়রা ও আফিফা)। সমুদ্রের কিনারা দিয়ে সুন্দর রাস্তা এবং সমুদ্র সৈকত ছিল মনোরমভাবে সজ্জিত। পানির স্পর্শ পেতে পাথর ডিঙিয়ে কষ্ট ও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল উঠানামা। উঠানামায় সহযোগিতা করেছিল মুকুল ও মিলন।
এর পরের দিন ছুটেছিলাম কক্সবাজার। পূর্ব থেকে বিলকিস (ভাইয়ের মেয়ে) প্রস্তুত ছিল। সমুদ্র সৈকতে ঘুরাঘুরি রাতেই সারতে হয়েছিল। বিশ্রাম নেই। সেখান থেকে পরের দিন গিয়েছিলাম বান্দরবান। সামান্য বিশ্রাম নিয়ে বিকেলেই ছুটেছিলাম বান্দরবানের আকর্ষণ মেঘলা ও নীলাচলে। মেঘলায় এতো উঁচু পাহাড়ে আরোহন ও স্বল্প সময়ে দৃষ্টিনন্দন দুটি স্পট ঘুরা আমাদের জন্য ছিল বেশ কষ্টসাধ্য। আবার পরের দিন বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম ফিরে আসা এবং সেদিনই ঢাকায় ফিরে আসতে হয়েছিল। রাত দেড়টায় বাসায় পৌঁছার পর দারুণ ক্লান্তি অনুভব করছিলাম।
ভ্রমণের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টির বৈচিত্র্য এবং তাঁর শক্তিমত্তা উপলব্ধি করা যায়। পাহাড় ও সমুদ্রের বিশালতা এক বিস্ময়। আল্লাহপাকের অপূর্ব সৃষ্টি। এই পাহাড় ও সাগর বারবার মানুষকে কাছে ডাকে। কতো নিখুঁত তাঁর সৃষ্টি। আল্লাহপাক তাঁর সৃষ্টি নিয়ে ভাবতে বলেছেন। সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিনয়াবনত হতে হয়।
আমি ছিলাম বয়সের ভারে একটু দুর্বল। মহিলারা সাধারণত দুর্বল হলেও তারা ভ্রমণপিপাসু। আমাদের সাথের দু'জন মহিলাকে সামনে আর যাবে- এমন প্রশ্নে কখনো না বলেনি। তাদের মনোবলের কারণেই সম্ভব হয়েছিল এই কষ্টকর ট্যুর। তাদের সাহস দেখে আমার মনোবলও তখন চাঙা হয়েছে। তাদের প্রতি অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা।
মুকুল-বেলি দুজনেই খুবই আন্তরিক ও উদার। তারা নিজেরা অল্পে তুষ্ট এবং সবসময় সঙ্গীদের অগ্রাধিকার দান করে। বেলি মেহমানদারি খুব পছন্দ করে। তার বাসায় গেলে সে খুব উৎফুল্ল হয়ে উঠে এবং যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করে। দানের হাতটা তার খুবই প্রশস্ত।
ঈমানদার নর ও নারী পরস্পরের বন্ধু ও সাথী। মুকুল- বেলি দুজন পরস্পরের পরিপূরক এবং ইসলাম মূলত সেটিই চায়। একে অপরের পছন্দের প্রতি গুরুত্ব দিতে হয়। এব্যাপারে তাদের মধ্যে রয়েছে চমৎকার সমঝোতা।
পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে যেমন সন্তানের জান্নাত তেমনি স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর সন্তুষ্টিতে রয়েছে পরস্পর জান্নাত। পরস্পরের পছন্দ ও সন্তুষ্টির প্রতি দৃষ্টি রেখে চলার মধ্যেই রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ। রসুল সা.- এর উক্তি, কিয়ামতের দিন স্বামী সম্পর্কে স্ত্রীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে আবার স্বামীকে অসন্তুষ্ট রেখে স্ত্রীর রাত্রি যাপন মূলত অভিশপ্ত হিসেবেই রাত যাপন করা হয়।
আল্লাহপাক সকল কাজেকর্মে তাঁকে স্মরণ ও ভয় করে চলা এবং পারিবারিক জীবনকে আনন্দপূর্ণ করে তোলার তৌফিক দান করুন। আমিন।
Comments
Post a Comment