Skip to main content

মুসলমান কি কখনো মিথ্যা বলতে পারে?

একটি গল্প দিয়ে শুরু করি। জনৈক বুজুর্গকে এক লোক বললো, 'হুজুর, আপনার স্ত্রী তো বিধবা হয়ে গেছেন।' এ কথা শুনে সেই বুজুর্গ খুব কান্নাকাটি করলেন। শেষে লোকটি বললো, হুজুর আপনি বেঁচে থাকতে আপনার স্ত্রী বিধবা হবেন কিভাবে? বুজর্গের জিজ্ঞাসা, 'মুসলমান কি কখনো মিথ্যা বলতে পারে?' অর্থাৎ স্বামী বেঁচে থাকতে স্ত্রীর বিধবা হওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি অসম্ভব একজন মুসলমানের পক্ষে মিথ্যাবাদী হওয়া।

রসুলল্লাহ সা. বলেছেন, মিথ্যা সকল পাপের মা। তিনি আরো বলেছেন, আমার উম্মতেরা সব পারে, পারে না মিথ্যা বলতে ও বিশ্বাসঘাতকতা করতে। মুনাফিকের প্রথম বৈশিষ্ট্য, সে কথা বললে মিথ্যা বলে। আর মুনাফিকের অবস্থান হবে জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে। তার জন্য জান্নাতে এক ইঞ্চি পরিমাণ জায়গাও বরাদ্দ নেই।

মিথ্যা বলতে আমাদের কোনো দ্বিধা-আপত্তি নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস ও আইন-আদালত সর্বত্রই মিথ্যার ছড়াছড়ি। শপথ করে সাক্ষী অনর্গল মিথ্যা বলছে। এরা নিরেট মুশরিক বৈ আর কেউ নন। মিথ্যা মামলা, মিথ্যা সাক্ষী, মিথ্যা সাক্ষীর পক্ষে ওকালতি গুনাহের ব্যাপারে সবাই সমান। ওরা কিছু বৈষয়িক স্বার্থের বিনিময়ে জাহান্নাম খরিদ করে নিয়েছে। এই শ্রেণির মানুষের নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, কুরবানি একেবারেই মূল্যহীন। এটি স্পষ্ট যে, জালেমের জন্য জাহান্নাম অবধারিত (যদি না তওবা করে)।

ইসলাম আমাদের রক্ষাকবজ- দুনিয়া ও আখেরাতে। একজন মুসলমান মাত্রই দ্বায়ী ইলাল্লাহ। জান্নাতের প্রত্যাশী একজন মুসলমান অবশ্যই মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকবে। যারা মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকার ক্ষেত্রে বাধা দিবে তারা অবশ্যম্ভাবী আল্লাহর দুশমন। আল্লাহর ভাষায়, তিনি তাঁর দুশমনদের কঠিন আজাবের স্বাদ আস্বাদন করাবেন। আর সেটি হলো জাহান্নাম।

অতীতকালে কোনো বিশেষ অপরাধে আল্লাহপাক এক একটি জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। যেমন, শোয়াইব আ.-এর জাতিকে ওজনে কারচুপি, লুত আ.-এর জাতিকে অশ্লীলতা (সমকামিতা), ফেরাউনের জাতিকে জুলুম-নির্যাতনের কারণে ধ্বংস করে দিয়েছেন।

বর্তমানে জাতিগতভাবে ধ্বংস না করার অন্যতম কারণ হলো, শত নিপীড়ন-নির্যাতন উপেক্ষা করে আল্লাহর একদল বান্দা মানুষকে তাঁর দিকে ডাকছেন। যারাই মানুষকে সৎ পথে আহবান জানাচ্ছে আল্লাহর দুশমনরা তাদের ওপরই হামলে পড়ছে। অথচ এই দায়িত্ব পালন না করলে পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখার আল্লাহর কোনোই প্রয়োজন নেই। কুরআন হাদিস আমাদেরকে তাই বলে। অর্থাৎ মানুষকে অন্যায় থেকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে জগতবিখ্যাত বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এর উক্তি লক্ষণীয়, 'এই পৃথিবী কখনো খারাপ মানুষের খারাপ কর্মের জন্য ধ্বংস হবে না, যারা খারাপ মানুষের খারাপ কর্ম দেখেও কিছু করে না তাদের জন্যই পৃথিবী ধ্বংস হবে।'

যারা মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে আল্লাহর ভাষায় তারা সর্বোত্তম ব্যক্তি। তারা আল্লাহর যথার্থ প্রতিনিধি। এসব ইমানদারের সাথে যারা দুর্ব্যবহার করে, কষ্ট দেয় তারা আসলে নিজেদের স্থান জাহান্নামেই করে নেয়। আল্লাহর বাণী, 'যারা ইমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয় অতঃপর তওবা করে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি'।

এখানে আল্লাহ তায়ালা তওবার সুযোগ রেখেছেন। আসুন, আমরা অতীতের গুনাহ থেকে তওবা করে আল্লাহর পথে একনিষ্ঠভাবে চলার চেষ্টা করি। আমিন।

Comments