বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
মুসলমান এক কর্মপাগল
জাতি। আলোস্য তার স্বভাববিরুদ্ধ। সে আল্লাহর গোলাম এবং তাকে সৃষ্টিই করা হয়েছে
আল্লাহর গোলামী করার জন্য। কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয় সার্বক্ষণিক গোলাম। একটি
সেকেন্ডের জন্যও গোলামির বাইরে নয়। তার সকল কাজই ইবাদত। আহার নিদ্রা সবই ইবাদত। এমনকি
বিনোদনের জন্য যা করা হয় তাও ইবাদত। শুধু খেয়াল করবে তাতে আল্লাহর কোনো নাফরমানি
যেন না হয়। বিনোদনের সর্বোত্তম মাধ্যম হলো আপন পরিবারকে সময় দান। আর ইসলাম যে
শিষ্টাচার শিক্ষা দেয় তা হলো সকল কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা।
আল্লাহ চান তার
সাম্রাজ্য যেন সুষ্ঠুভাবে চলে। সেজন্য সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজন শৃঙ্খলা ও আনুগত্য।
পরিবার, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, মিল কলকারখানা সর্বত্রই দরকার
শৃঙ্খলা। আর শৃঙ্খলার পূর্বশর্ত আনুগত্য। আমরা কখনো কর্তৃত্বশীল আবার কখনো অধীন।
আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, রসুলের আনুগত্য করো ও তোমাদের
মধ্যে যারা কর্তৃত্বশীল তাদের আনুগত্য করো। অবশ্য এই আনুগত্য শর্তাধীন। আল্লাহ ও
তাঁর রসুল সা.-এর নাফরমানি করে কারো আনুগত্য নেই।
এই আনুগত্য হতে হবে
স্বতঃস্ফূর্ত ও সন্তুষ্টচিত্তে। হাদিসে আসছে, যে আল্লাহর আনুগত্য করলো ও তার মালিকের
আনুগত্য করলো সে মালিক অপেক্ষা সত্তর বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অধীনকে বলা
হচ্ছে পিট বাঁকা হয়ে গেলেও আনুগত্য করো। আবার মালিক/নেতাকে বলা হচ্ছে অধীনের প্রতি
দয়ার্দ্র হও। তার কাজ হালকা করে দাও, ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করো। দৈনিক সত্তর বার
হলেও অধীনের অপরাধ ক্ষমা করে দাও। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই উত্তম যে তার
অধীনস্হদের কাছে উত্তম।
ইসলামে কর্তব্য পালনে
গাফিলতির কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহর রসুল সা.-এর উক্তি, কাউকে কোনো ব্যাপারে দায়িত্ব
প্রদান করা হলে সে তার নিজের কাজ যতো নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে সম্পন্ন করে আমাদের
প্রদত্ত দায়িত্ব সেভাবে পালন না করলে উল্টো করে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
আর খেয়ানতের তো প্রশ্নই ওঠে না। হাদিসে বলা হয়েছে, এক টুকরো সূতা বা তার চেয়েও
ক্ষুদ্র জিনিস কেউ খেয়ানত করে তাহলে কেয়ামতের দিন খেয়ানতের বোঝা মাথায় করে সে
উত্থিত হবে।
ঘুম থেকে জেগে আমাদের
দিন শুরু হয় ফজরের নামাজ দিয়ে। এটি যেমন ইবাদত তেমনি চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্য যাই
করি তার মধ্যে আল্লাহর নাফরমানির কিছু না থাকলে সবই ইবাদত। নামাজে গাফিলতি যেমন
গুনাহ ঠিক তেমনি গুনাহ কর্মক্ষেত্রে কোনো ধরনের গাফিলতি করলে। সুরা মাউনের এমনি
একটি দরস শুনেছিলাম জননেতা মরহুম শামসুর রহমানের কাছ থেকে। মানুষ যদি তার কাজকে
ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করে তাহলে আর ক্লান্তি অনুভূত হবে না এবং বিরক্তও হবে না। সে
হবে স্বতঃস্ফূর্ত ও নিষ্ঠাবান (মুহসিন)। আর আল্লাহ মুহসিন বান্দাদেরকেই পছন্দ
করেন।
আমরা যে যেখানেই
দায়িত্ব পালন করি না কেন, যদি মুখলিস বান্দা হতে পারি তাহলে সেখানকার কর্মপরিবেশ
হবে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিতে পূর্ণ। সেখানে হিংসা-বিদ্বেষ থাকতেই পারে না। মুসলিম
ক্ষমা করতে জানে। আর যে ক্ষমা করতে পারে না সে আল্লাহর ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত হবে।
আল্লাহর বান্দাদের সেবাদানে সে হবে কর্মতৎপর। সে জানে আল্লাহর প্রতিনিধিকে
সেবাদানের মাধ্যমে আল্লাহকেই সেবাদান করা হয় এবং আখেরাতে তার পরিপূর্ণ বিনিময় মহান
রবের কাছ থেকে পূর্ণমাত্রায় পাবে।
দুর্ভাগ্যই আমাদের,
সেবার প্রশ্নে আমরা বড় কৃপণ, বড় উদাসীন। অমুসলিমরা অনেকটা অগ্রসর। আল্লাহর সুন্নাত,
জনকল্যাণে যারা এগিয়ে থাকবে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সমাজের নেতৃত্ব ও সমৃদ্ধি দান
করবেন। পার্শ্ববর্তী ভারত চিকিৎসায় এগিয়ে যাচ্ছে, এর বড় কারণ ডাক্তার, নার্স ও
সংশ্লিষ্টদের উত্তম ব্যবহার। আমার স্ত্রীর কাছ থেকে শোনা, অসুস্থ হয়ে এক রাত
আমেরিকায় হাসপাতালে ছিলেন। কতো সেবাযত্ন এবং এক সময় তার সেন্ডেলটি ডাক্তার নিজ
হাতে পায়ের কাছে এগিয়ে দিচ্ছেন। তারা সেবা করে তৃপ্ত আর আমরা সেবা পেয়ে তৃপ্ত। ঘুষ
কী? তারা জানেই না। ধিক আমাদের মতো নাদান মুসলমানদের! দোযখে এরাই যাবে আগে।
আল্লাহর ভাষায় দুনিয়ার জীবনে এদের জন্য রয়েছে জিল্লতি এবং আখেরাতে রয়েছে ভয়াবহ
আজাব। আল্লাহপাক আমাদের হেফাজত করুন।
Comments
Post a Comment