বয়স ৬৯ ছুঁই ছুঁই করছে। এই বয়সে কী বা আর করবো? হিসাব মেলানোর সময়। পেছনে ফেলে আসা দিনগুলো কতটুকু কাজে লাগিয়েছি তা একটু দেখার সময়। শুধু আমি নয়, এই বয়সে আমার মতো সবারই ভাবনা একই। আমার বড় সান্ত্বনা যে আমি একজন মুসলিম এবং আমার রয়েছে একজন জবরদস্ত অভিভাবক যাঁর কাছে নিজের সবকিছু পেশ করে প্রশান্তি লাভ করা যায়। আমার অভিভাবক মহান আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু ও ক্ষমাশীল। বান্দাকে ক্ষমা করার মধ্যেই তাঁর যত আনন্দ। এখানেই আমার ভরসা। তাঁর অফুরন্ত নেয়ামত লাভে আমি ধন্য। আমি তাঁর প্রতি অত্যন্ত বিনয়ী ও কৃতজ্ঞ। আমি তাঁর ক্ষমা প্রত্যাশী।
একজন মুসলিম হিসেবে আমি জানি ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর আনুগত্যের পাশাপাশি আল্লাহর বান্দাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া আমার দায়িত্ব। মূলত আমার নবি মুহাম্মদ সা.-এর যে দায়িত্ব তাঁর অনুসারী হিসেবে আমারও একই দায়িত্ব। নবুওয়ত পাওয়ার পরপরই মানুষকে সতর্ক করার জন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবি সা.-কে নির্দেশ প্রদান করেন (সুরা মুদ্দাসসির)। এই সতর্কীকরণ ও দাওয়াতের কাজ কিয়ামত পর্যন্ত নবি মুহাম্মদ সা.-এর উত্তরাধিকাররা করে যাবে এবং এর মধ্যেই রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ। আমরা সুরা আসর পড়ে সেটিই উপলব্ধি করি। আল্লাহপাক কসম খেয়ে তাঁর কথাগুলো বলেছেন। ধ্বংস ও বিপর্যয় থেকে বাঁচতে হলে চারটা গুণ থাকতে হবে। ইমান, নেক আমল, মানুষকে হকের দাওয়াত দান ও ধৈর্য অবলম্বন।
আমরা প্রত্যেকেই এক একজন দ্বায়ী ইলাল্লাহ। আল্লাহরই বাণী, 'তার চেয়ে ভালো কথা আর কার হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে ও নিজে নেক আমল করে এবং বলে যে আমি একজন মুসলিম।' একটি আয়াতও যদি কারো কাছে থাকে তবে সেটি অপরের কাছে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ প্রিয়তম নবি মুাম্মদ সা.-এর।
মানুষের কাছে সুমহান ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার সুযোগ ছাত্রাবস্থা থেকে আমার আল্লাহ আমাকে দান করেছেন। আমার কর্মজীবনেও মসজিদ মিশনের মাধ্যমে আমি সেই সুযোগ লাভ করেছি। আমি সেসময়ে প্রচুর বই ও পত্র-পত্রিকা বিলি ও বিক্রি করেছি। এখন আমার দাওয়াত অনলাইনভিত্তিক। আমার আব্বাকেও দেখেছি এবং বলা যায় তিনি আমার প্রেরণা। তাঁর হাতে সবসময় বই থাকতো এবং নিজের লেখা বা কোনো বই থেকে কপি করে মানুষকে পড়তে দিতেন। আমার অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তিত্ব শাহ আব্দুল হান্নান রহ. মানুষের মাঝে প্রচুর বই ও তাঁর লেখা বিলি করতেন এবং তাঁর লেখা আমিও পেয়েছি।
এই বার্ধক্যে আমি অনলাইনে বেশ সক্রিয়। নিয়মিত লিখি এবং আমার লেখার উপজীব্য ইসলাম। আমার লেখাগুলো আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে শেয়ার করি। ইমেইল, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার বিভিন্ন মাধ্যমে ৫/৬ শতাধিক লোকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করি। আমি জানি, ব্যস্ততার এই সময়ে সবার পক্ষে পড়া সম্ভব নয়। তাতে কোনো সমস্যা নেই। আমি নিজেও প্রচুর লেখা ও ভিডিও পাই, সবগুলো পড়া আমারও সম্ভব হয় না। তবে আমি বুঝি, আমাকে যিনি অনুভব করেন তিনিই পাঠান। আমার সাথে যার একবার সম্পর্ক হয় নিজ থেকে কখনই তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি না। সাময়িক কোনো সমস্যা হলেও আমি কাউকে শত্রু বিবেচনা করি না এবং কারো প্রতি হিংসা-বিদ্বেষও পোষণ করি না। আমি সবাইকে ক্ষমা করতে চাই এবং সবার কাছ থেকে ক্ষমা প্রত্যাশা করি।
অনলাইনে আমার অনেক বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছে যারা আমার লেখা পড়ে ও শেয়ার করেন এবং এটি করেন দ্বীনের প্রতি মোহাব্বতের কারণেই। একাজে দ্বায়ী ইলাল্লাহর সওয়াবে আমরা সবাই ভাগীদার হবো ইনশা-আল্লাহ। যদি একজনও না পড়েন তাতেও সওয়াব রয়েছে এবং সেটি দাওয়াত পৌঁছানোর সওয়াব। ভালো কাজ যত ক্ষুদ্রই হোক মোমিন বান্দা তা উপেক্ষা করতে পারে না।
জীবন সায়াহ্নে আল্লাহর কাছে বিনীত প্রার্থনা, হে পরওয়ারদেগার! তুমি আমাদের সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করো, পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে কল্যাণকামী করে দাও।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দান করো এবং আখেরাতে আমাদেরকে লজ্জিত করো না। আমিন। ১১.১১.২০২১
Comments
Post a Comment