করোনা সম্পর্কে আমার উপলব্ধি :
শুরু থেকেই করোনা নিয়ে আমি প্রচুর লেখালেখি করেছি এবং লিখেছি আমার বিশ্বাস থেকে। আমরা প্রথমেই একটু তুলনামূলক চিত্র দেখি-
গত ৩১ মার্চ ২০২০ পোস্ট থেকে নেয়া
বিশ্বব্যাপী মোট শনাক্ত : ৮,০১,০৬৪
মোট মৃত্যু : ৩৮,৭৬৯
মোট সুস্থ : ১,৭২,৩১৯
বাংলাদেশ : মোট শনাক্ত ৫১, মোট মৃত্যু ০৫, মোট সুস্থ ২৫
২৪ ঘন্টায় স্পেনে মৃত্যু ৮৪৯, আমেরিকায় ৫৪০
বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি বাড়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত।
গতকালের চিত্র ৩০ মার্চ ২০২১
বিশ্বব্যাপী শনাক্ত : ১২,৮৩,১৭,৯৪৮
মৃত্যু : ২৮,০৬,১৫৯
সুস্থ : ১০,৩৫,৩০,২৫৭
বাংলাদেশ : শনাক্ত ৬,০৫,৯৩৭, মৃত্যু ৮,৯৯৪, সুস্থ ৫,৪০,১৮০
বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৮ মার্চ এবং মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। ৩০ মার্চ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয় মাত্র ৫১ এবং মৃত্যু ০৫ জন। বিশ্বের সাথে আমরাও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। সাধারণ ছুটি ঘোষণার ফলে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছিল। মানুষ সব ঘরে আবদ্ধ ছিল। গত বছর সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড ছিল ২ জুলাই ৪,০১৯ জন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিপজ্জনক অবস্থা অতিক্রম করছে। গত ২৯ তারিখ ২৪ ঘন্টায় শনাক্ত ৫,১৮১ এবং ৩০ তারিখ ৫,০৪২ জন। গত দুই দিনে মৃত্যু ৪৫ জন করে। কিন্তু পূর্বের মতো মানুষের মধ্যে ভীতি বা সতর্কতা নেই।
এই পৃথিবীতে আমাদের জীবনযাপন একটি প্রাকৃতিক নিয়মের (আল্লাহরই নিয়ম) অধীন। এই নিয়মের ব্যতিক্রমও ঘটে এবং সেটি ঘটান আল্লাহ। যেমন, আগুনের ধর্ম (কাজ) পুড়িয়ে ফেলা। ইবরাহিম (আ)-কে না পোড়ানো আল্লাহর হুকুম। মহামারি, ঝড়-জলোচ্ছাস সাধারণত গরীব ও আশ্রয়হীন মানুষজন বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এটি প্রাকৃতিক নিয়ম। মহামারিতে (করোনায়) সাধারণত আক্রান্ত ও বেশি মারা যাওয়ার কথা বস্তিতে বাস, অতি দরিদ্র, স্বাস্থ্যসুবিধা থেকে বঞ্চিত, অসচেতন জনগোষ্ঠীর। এটিই প্রাকৃতিক নিয়ম। কিন্তু এবারে করোনা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পরিবর্তে ইউরোপ-আমেরিকাকে একযোগে আঘাত হেনেছে এবং তাদের উন্নয়ন, নিত্য-নতুন আবিষ্কার, চিকিৎসা শাস্ত্রের অভাবনীয় উন্নতিতে তাদের সকল গর্ব-অহঙ্কার ভেঙ্গে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছেন না। এটাকে আমি দেখি, নমরুদের মশার কামড়ে মৃত্যু এবং লাঠির আঘাতে সমুদ্রের পানি দু’ভাগ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে মুসা (আ)-এর পার হয়ে যাওয়া ও ফেরাউনের সদলবলে ডুবে মরাকে। এসব বিষয় ব্যাখ্যাতিত।
ইউরোপ-আমেরিকায় করোনা নিয়ে গবেষণা, টিকা আবিষ্কার এবং ক্রমান্বয়ে করোনাকে জয় করা আল্লাহর দেয়া প্রাকৃতিক নিয়মেরই অধীন। মানুষ যখন চরমভাবে সীমালঙ্ঘন করে ও পাপাচারে ডুবে যায় বিশেষ করে হত্যা ও জিনা-ব্যাভিচার-ধর্ষণ-সমকামিতার মতো গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ে তখনই আল্লাহ তায়ালা গজব দিয়ে থাকেন। আল্লাহর ভাষায়-এসব তোমাদের হাতের কামাই।
দুনিয়া শাস্তি ভোগের জায়গা নয়। আসল শাস্তি আখেরাতে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সতর্ক করার জন্যই এসব বিপদাপদ দিয়ে থাকেন। বলা যায়, মুসলিম বিশ্ব করোনা থেকে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য শুকরিয়া আদায় করা দরকার। কিন্তু আমরা দেখছি শুকরিয়ার পরিবর্তে বাড়াবাড়িই চলছে। সাধারণত কোনো জনপদের মানুষ যদি আল্লাহকে ভয় করে চলে ও তাঁর বান্দাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকে সেই জনপদে আল্লাহ গজব দেন না বা দিলে হটিয়ে দেন। এই পৃথিবীতে আল্লাহ মানুষকে ফিরে আসার সুযোগ দেন। ইমানদার জনগোষ্ঠী আল্লাহ অত্যন্ত প্রিয় এবং যারা ইমানদারদের ওপর জুলুম-নির্যাতন করে তাদের প্রতি তাঁর চরম ক্রোধ। তাঁর বাণী, ‘যারা ইমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয় অতপর তাওবা করে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব, আছে ভষ্ম হওয়ার শাস্তি।’
‘অতপর তাওবা করে না’- এটি থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি, অপরাধ যত বড়ই হোক আল্লাহর ক্ষমা ও করুণা তার চেয়ে অনেক বেশি। এই জালেমেরও ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে। আখেরাতে আল্লাহর আরশের ছায়ায় আশ্রয়প্রাপ্তদের মধ্যে ন্যায়পরায়ণ শাসকের অবস্থান রয়েছে। শাসক যদি জালেম হয় তাহলে তার অবস্থান হবে কোথাায়? এ প্রশ্ন তো জাগারই কথা।
করোনা মানুষকে ক্ষমা চাওয়ার একটি সুযোগ দান করেছে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে তার মধ্যে মৃত্যুভয় জাগ্রত হয়। এই সময়ে যদি সে তাওবা করে এবং যাদের প্রতি জুলুম করেছে তাদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয় বা তাদের প্রাপ্য ফেরত দিতে পারে তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। সমাজে কিছু জালেম আছে যারা সত্যকে সত্য জানে না এবং সর্বদা মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তাদের নসিবে তাওবা হয় না। আবার হক ও বাতিলের দ্বন্দ্ব সংগ্রামে সমর্থন দেখেও (কে জালেমের পক্ষে এবং কে মজলুমের পক্ষে) উপলব্ধি করা যায় কে সত্যিকার মোমেন এবং কে মুনাফেক?
ইমানদার জনগোষ্ঠীর ফরিয়াদ আল্লাহ কখনই ফেরৎ দেন না। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি- হে পরোয়ারদেগার! তুমি করোনার মতো মহামারি থেকে আমাদের হেফাজত করো এবং জালেমের জুলুম থেকে আমরা তোমার আশ্রয় কামনা করি। ৩১.০৩.২০২১
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment