Skip to main content

মুত্তাকিদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও জান্নাত

কুরআনের পাঠ ২৮.০৩.২০২১ মানুষের জন্য নারী, সন্তান, সোনা-রূপার স্তুপ, সেরা ঘোড়া, গবাদি পশু ও কৃষিক্ষেতের প্রতি আসক্তিকে বড়ই সুসজ্জিত ও সুশোভিত করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের সামগ্রী মাত্র। প্রকৃতপক্ষে উত্তম আবাস তো রয়েছে আল্লাহর কাছে। বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো, ওগুলোর চেয়ে ভালো জিনিস কী? যারা তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে তাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে জান্নাত, যার নিম্নদেশে ঝরনাধারা সদা প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরন্তন জীবন লাভ করবে। পবিত্র স্ত্রী/স্বামী হবে তাদের সঙ্গী/সঙ্গিনী এবং তারা লাভ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কর্মনীতির ওপর গভীর ও প্রখর দৃষ্টি রাখেন। এসব লোকেরাই বলে, ‘হে আমাদের রব! আমরা ইমান এনেছি, আমাদের গুনাহখাতা মাফ করে দাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের রক্ষা করো।’ এরা সবরকারী, সত্যনিষ্ঠ, অনুগত ও দানশীল এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্য দোয়াকারী। সুরা আলে ইমরান ১৪-১৭ নামকরণ : সুরার ভেতরে আলে ইমরান উল্লেখ থাকায় চিহ্নস্বরূপ এর নামকরণ করা হয়েছে আলে ইমরান। নাজিলের সময়কাল : এ সূরায় চারটি ভাষণ রয়েছে। প্রথম ভাষণ সম্ভবত শুরু থেকে ৪র্থ রুকুর প্রথম দুই আয়াত পর্যন্ত বদর যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে। দ্বিতীয় ভাষণটি ৪র্থ রুকু থেকে ৬ষ্ঠ রুকু পর্যন্ত ৯ম হিজরিতে নাজরান প্রতিনিধি দলের আগমনের সময়। তৃতীয় ভাষণটি ৭ম রুকু থেকে ১২শ রুকু পর্যন্ত। প্রথম ভাষণের সাথে সাথে নাজিল হয়েছে বলে মনে হয়। চতুর্থ ভাষণটি ১৩শ রুকু থেকে শেষ পর্যন্ত ওহুদ যুদ্ধের পরবর্তীকালে। বিষয়বস্তু : আহলে কিতাব (ইহুদি ও খৃষ্টান) ও মুসলমানদের সম্বোধন করে কথা বলা হয়েছে। এই সুরায় মুসলমানদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি ঘটনা বদর ও ওহুদ যুদ্ধের পর্যালোচনা করা হয়েছে। ব্যাখ্যা : মানুষকে বড় দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং দুনিয়ার জীবনটা তার জন্য বেশ লোভনীয়। বিশেষ করে নারী ও সম্পদের প্রতি আকর্ষণ অত্যন্ত তীব্র এবং আল্লাহ তায়ালা এই আকর্ষণ তার প্রকৃতিতেই দিয়ে রেখেছেন। ফলে মানুষ ন্যায়-অন্যায় বোধ ভুলে গিয়ে তা পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। সমাজে গুম-খুন, ধর্ষণ, জুলুম-নির্যাতন ও নানাবিধ পাপাচারের মূলে রয়েছে নারী ও সম্পদের প্রতি তীব্র আকাঙক্ষা। স্রেফ অর্থের লোভে একসাথে সাত খুনেও সে পিছপা হয় না। মানুষের প্রকৃতিতে ভালো ও মন্দ দুই-ই রয়েছে। ভালো/মন্দ কোনো একটি করার জন্য আল্লাহ তাঁর বান্দাকে বাধ্য করেন না। ভালোর পুরস্কার ও মন্দের ভয়াবহ পরিণতি তুলে ধরে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ভালোটি গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। দুনিয়ার জীবনের এই সম্পদ নিতান্ত ক্ষণস্থায়ী। আমরা সবাই দ্রুত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে মানুষ দুই অবস্থার সম্মুখীন হবে- অফুরন্তু নেয়ামতেপূর্ণ জান্নাত বা ভয়াবহ আজাবের স্থান জাহান্নাম এবং জান্নাত ও জাহান্নাম উভয় স্থানে জীবন হবে চিরন্তন, যার কোনো শেষ নেই। যারা দুনিয়ার জীবনে আল্লাহকে ভয় করে চলে তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত যার নিচ দিয়ে ঝরনাধারা প্রবাহমান। বিপরিত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ প্রকৃতিগত এবং যার জন্য মানুষ অনেক সময় জীবন দিতে প্রস্তুত, জান্নাতে অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে পবিত্র স্ত্রী/স্বামী প্রাপ্তিও ঘটবে। সর্বোপরি তারা লাভ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। দুনিয়ার জীবনে মানুষের কর্মনীতি আল্লাহ তায়ালা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। কোনো কিছু তাঁর থেকে আড়াল করার সুযোগ নেই। এই জ্ঞান ও উপলব্ধি মানুষকে অন্যায়-অত্যাচার ও নানাবিধ পাপাচার থেকে দূরে রাখে। ভালো আমলের জন্য মুত্তাকি লোকদের মধ্যে কোনো অহমিকা কাজ করে না। তারা সর্বক্ষণ আল্লাহর ভয়ে তটস্থ থাকে এবং তাঁর কাছে গুনাহের ক্ষমা ও জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষার জন্য সর্বদা প্রার্থনা করে। রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘মানুষ তার আমলের বিনিময়ে জান্নাতে যাবে না।’ সাহাবায়ে কেরাম জানতে চেয়েছেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ (সা)! আপনিও। তিনি জবাবে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমিও।’ আসলে আল্লাহর ক্ষমার বিনিময়েই মানুষ কেবল জান্নাতে যাবে। ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমেই বান্দার মধ্যে বিনয় সৃষ্টি হয়। আর অহঙ্কারী নয়, বিনয়ী বান্দাকে আল্লাহ পছন্দ করেন। এখানে মুত্তাকি বান্দার কিছু গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। এদের প্রথম গুণ, এরা সবরকারী। সবর সাফল্যের চাবিকাঠি। সবর বা ধৈর্য ছাড়া আল্লাহর পথে একটি মুহূর্তও টিকে থাকা সম্ভব নয়। ভয়-ভীতি, প্রলোভন প্রতিনিয়ত বান্দাকে তাড়া করে। পরম ধৈর্যই বান্দাকে হকের ওপর অবিচল রাখে। দ্বিতীয় গুণ হলো অনুগত অর্থাৎ এরা বিদ্রোহী নয়, আল্লাহর হুকুমের কাছে তারা পুরোপুরিই আত্মসমর্পণ করে। তৃতীয় গুণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, এরা দানশীল অর্থাৎ এরা অর্থলোলুপ-কৃপণ নন। নিজের, পরিবারের, আত্মীয়-স্বজনের ও আল্লাহর পথে ব্যয়ের ক্ষেত্রে এসব মুত্তাকি বান্দারা অত্যন্ত উদার ও প্রশস্ততার অধিকারী। সর্বোপরি আল্লাহর এসব মুত্তাকি বান্দারা রাতের শেষভাগে গুনাহ মাফের জন্য তাদের মহান রবের সম্মুখে দণ্ডায়মান হয়। প্রতি রাতের শেষভাগে মহান আল্লাহ নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে জানতে চান, কে আছে তাঁর কাছে রিজিক চায়------? তিনি বান্দাকে দিতে চান। শিক্ষা : কয়টি আয়াতে মানবপ্রকৃতি (দুনিয়ায় নারী ও সম্পদের মোহ) বিশ্লেষণ করার সাথে সাথে আখেরাতকে অগ্রাধিকার দানের কথা বলা হয়েছে। আখেরাতে জান্নাত তাদেরই জন্য যারা আল্লাহকে ভয় করে চলে। মুত্তাকি বান্দারা হয় বিনয়ী এবং সর্বদা তারা তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। সবর, সততা, আনুগত্য ও দানের ক্ষেত্রে মুত্তাকি বান্দারা সবসময় অগ্রগামী থাকে।

Comments