জুমার খুতবা
২১.০১.২০২২
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
মাল্টিপ্ল্যান রেডক্রিসেন্ট সিটি (কুশিয়ারা,
পদ্মা ও সুরমা ভবন), মিরপুর জামে মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ
সাইয়াফ শুরুতে আল্লাহপাকের হামদ ও রসুল (সা)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করেন। নতুনভাবে
করোনা বিস্তার লাভ করায় তিনি তাঁর মুসল্লিদেরকে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে চলার পাশাপাশি
বেশি করে আল্লাহর কাছে তওবা-ইস্তেগফার এবং বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে দোয়া করার
জন্য আহবান জানান। তিনি একটি দীর্ঘ হাদিসের অংশবিশেষ নিয়ে আলোচনা করেন। রসুলুল্লাহ
সা. সাহাবাদের মজলিসে বলেন, আমি কি তোমাদের কাছে এমন পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে বলবো যা
তোমরা নিজেরা আমল করবে এবং এমন লোকদের কাছে পৌঁছে দিবে যাতে তারাও আমল করতে পারে। আবু
হুরাইরা রা. জবাবে বলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ সা.! আমি আমল করবো।
রসুলুল্লাহ সা. বলেন, তোমাদের মধ্যে ঐ
ব্যক্তি যথার্থ আবেদ (পরহেজগার) যে গুনাহ থেকে দূরে থাকে। তাকওয়ার বড় দাবী আল্লাহর
নাফরমানি অর্থাৎ গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। সমাজের মানুষ এই সহজ বিষয়টি না বুঝে
অনেক নফল ইবাদত-বন্দেগি করেন আবার সেই সাথে গুনাহের কাজেও জড়িয়ে পড়েন। সমাজের মানুষ
মিথ্যা, শঠতা, ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, আমানতে খেয়ানত, ঘুষ দুর্নীতিসহ নানাবিধ পাপাচারে
লিপ্ত। পাশাপাশি মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ, দান-খয়রাত, নফল নামাজ, রোজা, কুরআন তেলাওয়াত,
তাসবিহ-তাহলিলসহ নানাবিধ নেক আমল করে থাকেন। গুনাহ ত্যাগ না করে এমন সব নফল ইবাদত আল্লাহর
কাছে তেমন মূল্য বহন করে না। নফল ইবাদত-বন্দেগি কম করেও মানুষ যদি গুনাহ থেকে নিজেকে
পৃথক রাখতে পারে সেটিই আল্লাহর কাছে বেশি গ্রহণীয়। অর্থ উপার্জন ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে
সততা এবং সদাচরণ সর্বোত্তম নেক আমল। এখানে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে আর কোনো নেক আমল সেটি
পূরণ করতে পারে না। আমাদের আর্থিক লেনদেন ও মানুষের সঙ্গে আচরণে মনে হয় না যে আমরা
বিশ্বাসী জাতি। ব্যবহারিক জীবনে ইসলাম মানার ক্ষেত্রে আমাদের সাংঘাতিক দুর্বলতা রয়েছে।
খতিব মহোদয় একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করেন। আমরা সব বলকারক খাদ্যখানা গ্রহণ করে
শরীরকে মোটাতাজা করলাম কিন্তু সেই সাথে যদি এক ফোটা বিষ খাওয়া যায় সেটি যেমন সবকিছু
পণ্ড করে দেয় এবং জীবনহানি ঘটায়, তেমনি অসংখ্য ভালো কাজের পাশাপাশি যদি গুনাহের কাজও
করা হয় তাহলে সবই মূল্যহীন হয়ে যায়। আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে সর্বাগ্যে প্রয়োজন
গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা।
রসুলুল্লাহ সা. আরো বলেন, আল্লাহপাক প্রদত্ত
রিজিকে যে ব্যক্তি সন্তুষ্ট সেই ধনী। মানুষের অভাবের শেষ নেই। যার যত আছে সে তত চায়।
আল্লাহর নবি সা. বলেন, মানব সন্তান এমন যে তাকে এক উপত্যকা পরিমাণ স্বর্ণ দেয়া হলে
সে আর একটি চায় এবং দুটি পেলে তৃতীয় আর একটি চায়। মাটি ছাড়া কোনো কিছু তাকে পরিতৃপ্ত
করতে পারে না। সম্পদের নেশায় মানুষ পাগলের মতো ছুটে। কেউ শান্তিতে নেই। যার শত কোটি
টাকা রয়েছে সে চায় হাজার কোটি টাকা। আল্লাহর রসুল সা. বলেন, মনের ঐশ্চর্যই প্রকৃত ঐশ্চর্য।
অর্থবৃত্তের দিকে যারা নিচে অবস্থান করে তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে আল্লাহর প্রতি
কৃতজ্ঞতায় হৃদয় ভরে যায়। পক্ষান্তরে তাকওয়া-পরহেজগারিতে যারা অগ্রসর তাদের প্রতি খেয়াল
করলে নিজেকে এগিয়ে নেয়ার প্রেরণা পায়। আমরা প্রায়ই শুনি, এই সমাজের মানুষ হাজার হাজার
কোটি টাকা পাচার করছে। এরা আসলে শুধু সমাজেরই শত্রু নয়, নিজেরও শত্রু, এরা কেউ শান্তিতে
নেই। অবৈধ উপার্জনে গড়ে তোলা সম্পদ মানুষকে প্রশান্তি দিতে পারে না। তকদিরের প্রতি
বিশ্বাস রেখে অল্পে তুষ্টির মধ্যেই রয়েছে প্রশান্তি। আল্লাহর উপর নির্ভর করে হালাল
রুজিতে সন্তুষ্ট থাকার জন্য তিনি তাঁর মুসল্লিদের প্রতি আহবান জানান।
Comments
Post a Comment