Skip to main content

হাদিস (তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস)

হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন একদিন আমি নবি করিম (সা.)-এর পেছনে উটের পিঠে চড়ে যাচ্ছিলাম। তখন তিনি বললেন : হে বালক! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিক্ষা দিচ্ছি -


(১) আল্লাহকে স্মরণ রাখো আল্লাহ তোমার রক্ষক হবেন,

(২) আল্লাহর দ্বীনের হেফাজত করো, তাহলে আল্লাহকে বা আল্লাহর রহমতকে তোমার সামনে দেখতে পাবে,

(৩) যখন কোনো কিছুর জন্য প্রার্থনা করার প্রয়োজন মনে করবে তখন আল্লাহর নিকট তা চাইবে,

(৪) যখন কোন সাহায্য পেতে চাও তখন এক আল্লাহর নিকটই তা চাইবে,

(৫) এই কথা মনে রাখবে যে, সমস্ত লোক যদি তোমার উপকার করার জন্য একত্রিত হয় তবুও তারা তোমার কোনো উপকার করতে পারবে না অবশ্য শুধু ততটুকুই পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সকল লোক যদি তোমার ক্ষতি করার জন্য একযোগে উঠে পড়ে লেগে যায় তবুও তারা তোমার ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহর নিকট নির্দিষ্ট আছে, তার বেশি নয়।
মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি।

ব্যাখ্যা :

হজরত ইবনে আব্বাস রা. রসুলল্লাহ সা.-এর আপন চাচাতো ভাই। হাদিসটিতে কয়েকটি বিষয়ে তিনি নসিহত করেছেন। প্রথমত, সর্বদা আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করা এবং এর বিনিময়ে আল্লাহ বান্দার জন্য রক্ষক হয়ে যাবেন। আল্লাহ বলেছেন, তোমরা আমাকে স্মরণ করো আমিও তোমাকে স্মরণ করবো। বান্দা হিসেবে আল্লাহকে স্মরণ করার অর্থ তাঁর হুকুম মেনে চলা। আল্লাহর স্মরণ অর্থ হলো বান্দার সকল প্রয়োজন পূরণ করা ও তাকে রক্ষা করা।
বান্দা শোয়া-বসা-চলা-ফেরা সর্বাবস্থায় কখনো বলবে সুবহানাল্লাহ, কখনো বলবে আলহামদু লিল্লাহ আবার কখনো আল্লাহু আকবর এবং সকল কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলবে। বান্দা সকল সময়ে আল্লাহকে অনুভব করবে যে তিনি তাঁর মহান রবের দৃষ্টির বাইরে নন এবং এই স্মরণই তাকে আল্লাহর নাফরমানি থেকে দূরে রাখবে।

আল্লাহর দ্বীনকে হেফাজত করো এবং তাতে তাঁর রহমত লাভ করবে। দ্বীনকে হেফাজত অর্থ আল্লাহর নির্দিষ্ট সীমা মেনে চলা এবং সকল প্রকার নাফরমানি পরিহার করা। দ্বীন মেনে চলার মধ্যেই রয়েছে আল্লাহর রহমত।

বান্দা তার সকল প্রয়োজন কেবল আল্লাহরই কাছে পেশ করবে। বান্দার প্রার্থনা শোনার জন্য আল্লাহ প্রস্তুত হয়ে রয়েছেন। তাঁর বাণী, 'হে নবি! আমার বান্দারা আমার সম্পর্কে জানতে চায়? বলে দাও, আমি তাদের অতি নিকটে। যে ডাকে তার ডাক শুনি ও জবাব দেই, কাজেই আমার আহবানে সাড়া দেয়া ও আমার প্রতি ঈমান আনা তাদের একান্ত কর্তব্য।' আল্লাহর ভাণ্ডার অফুরন্ত এবং দেয়ার মধ্যেই তাঁর যতো আনন্দ। তাই সর্বদা আল্লাহরই কাছে চাইতে হবে।

আল্লাহর কাছে চাওয়ার পাশাপাশি একথাও স্মরণ করে দেয়া হয়েছে যে বান্দার তকদির আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত। দুনিয়ার সব মানুষ চেষ্টা করে ততটুকুই পারে যতটুকু আল্লাহ তায়ালা চান- তা ভালো হোক বা মন্দ হোক। তাই মানুষকে ভয় করা বা নির্ভর করা নয় বরং ভয় করবে কেবল আল্লাহকে এবং নির্ভর করবে তাঁরই উপর।

শিক্ষা :
হাদিসে আমাদের উদ্দেশ্যে যা বলা হয়েছে তা হলো বান্দা হিসেবে আমরা সর্বদা আল্লাহকেই স্মরণ করবো, তাঁর দ্বীনের হেফাজত করবো এবং আমাদের সকল প্রয়োজন তাঁরই কাছে পেশ করবো। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর একনিষ্ঠ বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

Comments