আমরা সবাই বিশ্বাস করি যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন এবং তাদের জন্য রয়েছে আখিরাতে চিরস্থায়ী সুখের আবাস জান্নাত। দুনিয়াতেও সুখী ও সুন্দর জীবন যাপনের প্রতিশ্রুতি তিনি ব্যক্ত করেছেন। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা করতে বলেছেন। তাঁর ভাণ্ডার অফুরন্ত এবং তিনি কৃপণ নন, তিনি উদার ও তাঁর বান্দাদের মুক্তহস্তে দিতে চান। নিচে আমি দুটি আয়াত উদ্ধৃত করতে চাই যেখানে আল্লাহপাক মুমিনদের বিজয়ী করার ও খেলাফত দানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন। শর্ত হচ্ছে প্রকৃত মুমিন হওয়া ও নেক আমল করা।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
‘মনমরা হয়ো না, দুঃখ করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হও’- আলে ইমরান ১৩৯।
‘আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনবে ও সৎ কাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দান করবেন যেমন পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদেরকে দান করেছিলেন, তাদের জন্য তাদের দ্বীনকে মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন, যে দ্বীনটি আল্লাহ তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের (বর্তমান) ভয়-ভীতির অবস্থাকে নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা যেন শুধু আমার ইবাদত করে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করে। আর যারা এরপরও কুফরি করবে তারাই ফাসেক’- আন নূর ৫৫।
উপরের আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বিপদাপদে দুঃখভারাক্রান্ত হওয়ার দরকার নেই; সত্যিকার মুমিন হলে বিজয় তাদের ধরা দেবে এবং দ্বিতীয় (নূর ৫৫) আয়াতে বলা হয়েছে ঈমান ও নেক আমলে সমৃদ্ধ হলে আল্লাহর পক্ষ থেকে খেলাফত দান করা হবে। খেলাফত পাওয়ার অর্থ সকল ভয়ভীতি দূরীভূত হয়ে মুমিনরা নিরাপদ হয়ে যাবে। দুটি আয়াতে মুমিনদের বিজয়ের (দুনিয়ায় কর্তৃত্ব) সুসংবাদ শোনানো হয়েছে। ঈমান আনা বলতে আমরা বুঝি কালিমায়ে তাইয়্যেবা বিশ্বাস করা অর্থাৎ সকল ইলাহ (হুকুমকর্তা) অস্বীকার করে কেবল আল্লাহকে ইলাহ মানা। তাগুতকে অস্বীকার করে কেবল আল্লাহর আনুগত্য কবুল করা।
বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের যে দুরবস্থা (অর্থবৃত্ত, মান-ইজ্জত-সম্মান, কর্তত্ব, প্রভাব-প্রতিপত্তি সব থেকে বঞ্চিত) তাতে মনে হয় আল্লাহপাকের প্রতিশ্রুতি লাভের মতো যে মানের মুমিন হওয়া দরকার জাতিগতভাবে আমরা তা হতে পারিনি। কোনো ব্যক্তি যথার্থ মুমিন কি না তা যাচাইয়ের মানদণ্ড চরিত্র। ঈমানের বহিপ্রকাশ ঘটে তার আমলে। ঈমান ও আমল বীজ ও বৃক্ষের সাথে তুলনীয়। জমিনে বীজ বপন করা হলে চারা বের হয়। চারা বের না হলে বুঝতে হবে বীজটি ত্রুটিপূর্ণ। হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, মিথ্যা-শঠতা, ধোকা-প্রতারণা, আমানতে খেয়ানত, ওয়াদা- প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, ঘুষ-দুর্নীতি, ওজনে কম-ভেজাল প্রদান, যিনা-ব্যাভিচার-পর্দাহীনতা, মানুষের প্রতি জুলুম-নির্যাতন, হত্যা-রাহাজানি যা সব উল্লেখ করা হলো এর কোনো একটি একজন মুমিনের জীবনে থাকতে পারে না। সাথে সাথে ইতিবাচক আরো কিছু কাজ নামাজ-রোজা-হজ-জাকাতের মতো মৌলিক ইবাদত এবং সৃষ্টির সাথে সদাচরণসহ জনকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। এমনটি হলেই সে হবে সাচ্চা মুমিন।
আমাদের মধ্যে সবাই একবাক্যে বলবেন- না না আল্লাহ কখনো মিথ্যা বলতে পারেন না এবং বলেনও না, বরং আমরাই মুমিন নয়। আমরা আছি ফালতু (অমৌলিক) বিষয় নিয়ে ঝগড়া-ঝাটি করতে এবং পরস্পরকে কাফির আখ্যায়িত করে একটি প্রশান্তি লাভ করতে। মাসালা-মাসায়েল নিয়ে কতো চর্চা ও কতো কিতাব রচনা অথচ মানুষের চরিত্র সংশোধন এবং বাতিলকে হটিয়ে হকের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কোনো কর্মসূচি নেই। আমরা আছি বাতিলকে না চটিয়ে আল্লাহকে খুশি করার এক কৌশল নিয়ে। আল্লাহপাক আমাদেরকে হেদায়াত দান করুন।
Comments
Post a Comment