আজ ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদে জু'মার খুতবায় সম্মানিত খতিব আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি সাইফুল ইসলাম প্রথমে আল্লাহর হামদ ও রসুল (সা)-এর উপর দরুদ ও সালাম পেশ করেন এবং আল্লাহর ঘরে হাজিরা দেয়ার তাওফিক ও ইসলামের মত নেয়ামত দান করার জন্য আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করে পড়েন আলহামদু লিল্লাহ।
চরম নৈতিক অধপতন ও দেশে খুন-খারাবি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন শিশু থেকে আশি বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত পাশবিকতার শিকার হচ্ছে, তুচ্ছ কারণে মানুষ খুন হচ্ছে এবং সম্প্রতি বরগুনায় প্রকাশ্যে ও বিরাট সংখ্যক মানুষের উপস্থিতে স্ত্রীর সামনে তার স্বামীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা আমাদের চরম নৈতিক অধপতনেরই প্রমাণ বহন করে। মানুষ দাঁড়িয়ে দেখেছে কিন্তু কেউ সাহস করে এগিয়ে আসেনি। আমি-আপনি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে ভিন্নতর কিছু ঘটবে না। এই অশান্তি শুধু আমাদের দেশেই নয়, এ অশান্তি এখন বিশ্বব্যাপী। শান্তি পেতে হলে ইসলামেই ফিরে আসতে হবে। সমাজে শান্তি পারতিষ্ঠার জন্য মটিভিশনের পাশাপাশি ইসলামের দন্ডবিধি প্রয়োগের কোন বিকল্প নেই। আল্লাহতায়ালা কিসাসের বিধান জারি করেছেন এবং বলেছেন এতেই রয়েছে তোমাদের প্রাণ। ইসলামের এ শাস্তি প্রকাশ্য এবং তা দৃষ্টান্তমূলক। একজনকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হলে সেটা দেখে বাকিরা সাবধান হয়ে যাবে।
দেশে সুনাগরিক তৈরীর লক্ষ্যেই আল্লাহপাক বিভিন্ন ইবাদতসমূহ ফরজ করেছেন। মাবরুর হজ্ব সম্পন্ন করে কেউ দেশে ফিরে আসলে তার থেকে সবাই নিরাপদ হয়ে যায়। তিনি হজ্ব নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করছেন।
খতিব মহোদয় বলেন একজন মানুষ হজ্বের নিয়ত করার সাথে সাথে তার মাঝে পরিবর্তন শুরু হয়ে যায়। একজন হজ্বযাত্রী দেনা-পাওনা সব পরিশোধ করে তার নিকটবর্তী সব লোকজনের কাছ থেকে ক্ষমা ও বিদায় গ্রহণ করে হজ্ব উদ্দেশ্যে রওনা হন। হজ্ব উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে পথিমধ্যে কেউ মারা গেলে তাকে এহরামের কাপড় দিয়ে দাফন ও সুগন্ধি ব্যবহার না করার জন্য রসুল (সা) বলেছেন এবং সে লাব্বাইক আল্লাহম্মা বলতে বলতে কিয়ামতের দিন উঠবেন।
আমাদের সমাজে মানুষ বার্ধক্যবস্থায় হজ্বে যান। হজ্ব একটি কষ্টকর ইবাদত। হজ্বে যাওয়ার মতো সামর্থ হলে তাকে বিলম্ব না করার জন্য রসুল (সা) বলেছেন। কারণ সে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে বা বাহন হারিয়ে যেতে পারে। আমাদের সমাজে ছেলেমেয়ের আর্থিক সংগতি হলে নিজে হজ্বে না যেয়ে পিতামাতাকে পাঠান। এটা ঠিক নয় বলে উল্লেখ করে যার উপর হজ্ব ফরজ তাকে আগে হজ্ব করার জন্য তিনি বলেন।
হজ্ব প্রসঙ্গে তিনি অনেকগুলো হাদিস উদ্ধৃত করেন। সামর্থ থাকা সত্তেও হজ্ব না করাটাকে ইহুদী বা নাসারা হিসেবে মরার সাথে হাদিসে তুলনা করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ওমর (রা) তাদের ওপর জিজিয়া আরোপের কথা বলেছেন। খতিব মহোদয় বলেন মাবরুর হজ্বের প্রতিদান হলো জান্নাত। মাবরুর হজ্ব অর্থ আল্লাহর কাছে কবুল হওয়া হজ্ব। আর এর জন্য যথাযথ নিয়মে হজ্ব পালনের সাথে সাথে আল্লাহর বান্দাদের কষ্ট না দেয়া ও সব ধরনের নিষিদ্ধ কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা বুঝায়।
হজ্বের একটি বড় দিক হলো মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করা। সেখানে ঝগড়া-ঝাটি, মারামারি করা যায় না, কটুু কথাও বলা যায় না। হজ্বে এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে হাজী সাহেবে দেশে ফিরে আসার পর তাঁর কাছ থেকে কল্যাণ বৈ আর কিছু আশা করা যায় না। একজন মুসলমানের কাছ থেকে তার হাত ও জবান দ্বারা কখনই আর একজন কষ্ট পেতে পারে না। কারণ রসুল (সা) বলেন, 'ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়, মুমিন নয়, মুমিন নয় যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে অন্যরা নিরাপদ নয়।'
এ বছর যারা হজ্বে যাচ্ছেন তাদের সবার হজ্ব যাতে হজ্বে মাবরুর হয় সেজন্য তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেন এবং যারা এখনও হজ্ব করতে পারেননি তিনি আল্লাহর কাছে তাদের হজ্ব করার সামর্থ কামনা করেন। সংক্ষেপিত।
Comments
Post a Comment