Skip to main content

আমাদের গন্তব্য কোথায়?



স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাত শরীফ হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই শিশু সায়মা মাত্র ৭ বছর বয়সে ধর্ষণসহ হত্যা,আজকের খবর মাগুরায় ক্রিকেটার হত্যা, রাজধানীতে কিশোর খুন, মিরসরাইয়ে যুবক হত্যা, সাভারে স্কুল ছাত্রের (৮ম শ্রেণি) আত্মহত্যা ও চট্টগ্রামে তরুণের লাশ উদ্ধার, চাকরির দ্বন্দ্বে খুন লালবাগে এক মসজিদের খাদেম হানিফ এবং এর বাইরে রয়েছে দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার খবর।পাশাপাশি খবর কক্সবাজার কারাগারে ধারণ ক্ষমতার ৯ গুণ বেশি বন্দী, ঘুমাচ্ছেন পালা করে।
এই হলো আমাদের দেশের চিত্র। দেশে রাজনীতিশূন্যতার মাঝেও আইন-শৃঙ্খলার ক্রমাবনতি সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। ধর্ষণ, খুন ও আত্মহত্যা (আত্মহত্যাকারী নিজেও একজন খুনি) এসব এতো বেড়ে যাওয়ার মূলে কী কারণ আমাদের একটু ভেবে দেখা দরকার। নারীর প্রতি এ সহিংসতা আমাদের স্মরণ করে দেয় ইসলামপূর্ব জাহিলিয়াতের কথা। সে সমাজে নারী ছিল বড় নিরাপত্তাহীন। সমাজ ও অপরাধবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন কঠোর শাস্তি দিলেই অপরাধ নির্মূল হবে না, সাথে সাথে অপরাধ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য তাদের নিয়ে নানাবিধ উদ্বুদ্ধকরণ (মটিভিশন)কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

অনুসন্ধান চালালে দেখা যাবে হত্যা ও আত্মহত্যার পেছনে একটা বড় ভূমিকা রয়েছে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, পরকীয়া ও কিছু পুরুষ নামে জানোয়ারের উদগ্র যৌনলালসা। এ দেশে শতকরা ৯০ জন মুসলিম এবং বাকি হিন্দু সম্প্রদায় তারাও ধর্মে বিশ্বাসী। এই সমাজে ধর্ষণ, খুন বা আত্মহত্যা ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে (হিন্দু ও মুসলিম) জঘন্য অপরাধ এবং দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে এর ভয়াবহ শাস্তি। ইসলামের বিধানে দুনিয়ার জীবনে হত্যার বদলে হত্যা এবং ধর্ষক বিবাহিত হলে প্রকাশ্যে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা। এই কঠোর দন্ড রসুল (সা)-এর দশ বছরের শাসনামলে মাত্র ২/১টা কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে আমার জানামতে এক মহিলা রসুল (সা)-এর কাছে এসে বলে, সে যিনা করেছে এবং যার সাথে যিনা করেছে তাকে নিয়ে আসা হলে সে অস্বীকার করে। যেহেতু মহিলা ৪ জন সাক্ষী হাজির করতে পারেনি তাই পুরুষটাকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং মহিলার ওপর দন্ড কার্যকর করা হয়।

রসুল (সা) আরবের বর্বর সমাজটাকে পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে আখিরাতে বিশ্বাসের ভিত্তিতে পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি আইনের কঠোর ও নিরপেক্ষ প্রয়োগ করে সমাজটাকে অপরাধমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আমাদের সমাজে ধর্ষণ, খুন বা আত্মহত্যার পাশাপাশি আরো যে সমস্ত অপরাধ জনস্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে, যেমন-ওজনে কম দেয়া, ভেজাল দেয়া, ধোকা-প্রতারণা, ঘুষ-দুর্নীতি,ওয়াদা-প্রতিশ্রতি ভঙ্গ (ঋণখেলাপী), আমানতে খেয়ানত, সুদ, মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্যদান সবই ইসলামের দৃষ্টিতে কবিরা গুনাহ এবং তাওবা না করলে শেষ পরিণতি জাহান্নাম। এ সমাজে অপরাধের সাথে বেশির ভাগ জড়িত তথাকথিত মুসলিম জনগোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠী আবার নিজেদের বিশ্বাসী বলেও দাবী করে এবং হালকা হলেও বিশ্বাস কিছুটা রয়েছেও। যেহেতু তারা ধর্মে বিশ্বাস করে (হালকা হলেও) তাদের এই বিশ্বাসটাকে শানিত করতে পারলেই তো অপরাধ থেকে তাদের সরিয়ে আনা সম্ভব।

যিনা-ব্যাভিচার সব ধর্ম ও সমাজে একটি ঘৃণ্য অপরাধ। নারী-পুরুষের মাঝে পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ প্রকৃতিগত। এটাকে ইসলাম অস্বীকার করে না। এজন্য ছেলে-মেয়ে বয়োপ্রাপ্ত হলে ইসলামে বিবাহে উৎসাহ দান ও সহজ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে যিনা-ব্যাভিচারকে কঠিন করে তোলা হয়েছে। কুরআনের বাণী-তোমরা ব্যাভিচারের ধারে-কাছেও যেও না। যে সব জিনিস মানুষের মাঝে যৌন সুড়সুড়ি জাগায় এমন সকল কার্যক্রম এবং সব ধরনের নগ্নতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা হারাম করা হয়েছে। ইসলাম পর্দাপালনকে ফরজ করেছে এবং নিভৃতে একজন পুরুষ ও একজন মহিলাকে একত্রিত হওয়াকে ইসলামে ঘোর আপত্তি জানানো হয়েছে এবং বলা হয়েছে শয়তান হয় সেখানে তৃতীয় জন। মৌলিক ইবাদত পালন ও স্বামীর আনুগত্যের মাধ্যমে নারী জাতির জান্নাতে গমন সহজ করে দেয়া হয়েছে এবং মা, স্ত্রী, বোন ও মেয়ে হিসেবে নারীকে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করা হয়েছে এবং সাথে সাথে রসুল (সা)-কে মিরাজের রাত্রে জাহান্নামে মহিলাদের আধিক্য দেখানো হয়েছে। কারণ হিসেবে মহিলাদের পর্দাহীনতার (তাদের চুল খোলাবস্থায়)কথা বলা হয়েছে।

ইসলাম মানুষের মাঝে উদারতা,ক্ষমাশীলতা, সহনশীলতা ও প্রশস্ততা দেখতে চায়। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সর্বত্রই এসব গুণের চর্চা দরকার। এসব সৎ গুণাবলীর পরিবর্তে আমাদের মাঝে বিরাজ করছে হিংসা-বিদ্বেষ এবং একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা। ফলে সামান্যতেই মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে পড়ে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি যারা ইসলাম নিয়ে ভাবে ও কাজ করে তাদের কাজের সুযোগও বড় সীমিত হয়ে পড়েছে। ফলে দেশের মানুষের নৈতিক মান ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। ধর্ষণ, খুন ও আত্মহত্যার মত অপরাধের পেছনে নারী সংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি মাদকও একটি বড় কারণ। ইসলামী মূল্যবোধই পারে মানুষকে মাদকমুক্ত করতে। আমাদের দুর্ভাগ্য, ইসলামকে বাদ দিয়ে আমরা উদ্বুদ্ধ করতে চাই।

মাদ্রাসা সুপার বা ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিতরাও তো এসব অপকর্মের সাথে জড়িত। যদিও সংখ্যা কম, তারপরও রয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হলে তাদের মাঝে যৌনাকাঙ্ক্ষা বিলুপ্ত হয়ে যাবে বিষয়টি এমন নয়। আল্লাহর বিধান মেনে চলা সবার জন্য সমভাবে ফরজ। সেখানেও দেখা যাবে আল্লাহর বিধান অনুসরণের ক্ষেত্রে শৈথিল্যের কারণেই শয়তান সুযোগটা গ্রহণ করেছে। আল্লাহর বিধানের ব্যত্যয় ঘটলে বা আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন বিশেষ হেফাজত না থাকলে পদস্খলনের সমূহ সম্ভাবনা থাকে। হযরত ইউসুফ (আ)-কে দিয়ে আমাদের দেখানো হয়েছে, জুলেখার প্রলোভন থেকে নিজেকে রক্ষা করার মধ্যে তাঁর নিজের কোন ক্রেডিট নেই, বরং আল্লাহই তাঁকে রক্ষা করেছেন। ইউসুফ (আ) অকপটে স্বীকার করে বলেছেন-আমি আমার নির্দোষিতার কথা কিছুই বলি না, মানুষের নফস তো মন্দ কাজে প্ররোচিত করেই, তবে আমার প্রভু যদি কারো প্রতি দয়া করেন। সমাজে নগ্নতা, বেহায়াপনা, পর্দাহীনতা, অশ্লীলতার সয়লাব বয়ে চলবে আবার পাশাপাশি ধর্ষণ, খুন ও আত্মহত্যার মতো অপরাধ শূন্য হবে এটা কখনই হতে পারে না। আল্লাহর বিধানের কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সম্ভব আমাদের মতো মুসলিমপ্রধান দেশে শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তা। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দান করুন।


Comments