ধানমন্ডি তাকওয়া
মসজিদে ফজর বাদ প্রায়ই তেলাওয়াতকৃত কুরআনের অংশবিশেষ বা হাদিসের সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়।
আজকে আলোচনা করেন হাফেজ মাওলানা আব্দুল হাফিজ মারূফ। হাদিসটির সরল অর্থ-
‘ঐ ব্যক্তির
ঈমান নেই যার মধ্যে আমানতদারী নেই এবং ঐ ব্যক্তির ধর্ম নেই যার ওয়াদা-প্রতিশ্রুতির
ঠিক নেই।’
আমানত অত্যন্ত
ব্যাপক। কারো কাছে টাকা-পয়সা বা কোন কিছু গচ্ছিত রাখলে তা যথাসময়ে ফেরৎ দেয়া বা কোন
কথা বললে তা সংরক্ষণ করাকে আমরা আমানত হিসেবে জানি, কিন্তু এতটুকুর মধ্যেই আমানত সীমাবদ্ধ
নয়। বরং কারো ওপর কোন দায়িত্ব অর্পিত হলে (পারিবারিক, ধর্মীয়, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়)
তা পূর্ণ দায়িত্বানুভূতির সাথে পালনও আমানত। যার মধ্যে আমানত সংরক্ষণ নেই হাদিসে তার
মধ্যে ঈমান নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার যার মধ্যে অঙ্গীকার পালনের বাধ্যবাধকতা
নেই হাদিসে তাকে অধার্মিক বা ধর্ম নেই বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে আমানত
সংরক্ষণ ও ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি পালনের তাওফিক দান করুন।
আমরা এই হাদিসের
আলোকে নিজেদেরকে একটু যাচাই করি।(এই অংশটুকু ইমাম সাহেবের আলোচনার অতিরিক্ত)।
হাদিসটি আমাদের
ব্যবহারিক জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে উল্লেখিত দু’টি গুণ আমাদের ব্যবহারিক জীবনে নেই বললেই চলে। আমানত সংরক্ষণ ও ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি
পালনের অভাবে আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, রাজনীতিক জীবনে কোন স্বচ্ছতা বা শৃঙ্খলা নেই
এবং অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য কোথাও সেবা নেই। আমরা বর্তমানে আস্থা ও বিশ্বাসহীনতায়
ভুগছি এবং মানুষ সেবাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত। ঘুষ, দুর্নীতি, ধোকা-প্রতারণা, ভেজালদান,
ওজনে কারচুপি সব ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডে আমরা জড়িয়ে পড়েছি। রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে যারা
নিয়োজিত তাদের এ দায়িত্বপ্রাপ্তি আরাম-আয়েশ ও সুখভোগের জন্য নয়, বরং এটা আমানত এবং
জনগণের সেবাদানে তারা বাধ্য। ঘুষ নেয়ার তো প্রশ্নই ওঠেনা, বরং যে কাজ দশ মিনিটে হওয়া
সম্ভব সে কাজে আধা ঘন্টা লাগানো একটা জুলুম। অফিস-আদালতে জনগণ গেলে মনে হয় যেন প্রভূর
দরবারে গোলাম হাজির হয়েছে। ঘুষ ও নানাভাবে হয়রানি একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২/১টা ব্যতিক্রম ছাড়া সর্বত্রই জনহয়রানি বিরাজমান। অথচ সরকারি এ দায়িত্ব একটি আমানত।
কোন ঈমানদার এ দায়িত্ব পালন উপেক্ষা করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে রসূল (সা)-এর কঠোর হুশিয়ারী
রয়েছে-‘আমরা কাউকে কোন কাজে দায়িত্ব প্রদান করলে
সে তার নিজের কাজ যত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে করে সরকারি দায়িত্ব যদি সেভাবে পালন
না করে তাহলে কিয়ামতের দিন উল্টা করে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ তিনি আরো বলেছেন-‘আমরা যদি কাউকে কোন দায়িত্ব প্রদান করি,
আর সে যদি এক টুকরো সূতা বা তার চেয়েও কোন
ক্ষুদ্র জিনিস খেয়ানত করে তাহলে কিয়ামতের দিন খেয়ানতের বোঝা মাথায় করে সে উত্থিত হবে।’ আমানত সংরক্ষণের গুরুত্ব কত তীব্র এ সব উক্তিতে সহজেই বোঝা যায়। মোট
কথা কারো আমানতদারীতা না থাকা রসূল (সা)-এর ঘোষণা মোতাবেক সে আর ঈমানদার থাকে না। ঈমানই
যদি না থাকে তাহলে নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত বা অন্য কোন নেক আমল তার কোন কাজে লাগবে?
ব্যাংকে ঋণখেলাপী বহুল প্রচলিত শব্দ অর্থাৎ সময় মত ঋণ ফেরৎ না দেয়া এবং এই ঋণখেলাপীর
সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে সমাজের উঁচুস্তরের মানুষগুলো। আমাদের সমাজে যারা নেতৃত্বের আসনে
বসে আছে তাদের মধ্যে এই দু’টি গুণ নেই বললেই চলে। আরো ভয়ঙ্কর কথা
বলেছেন আমাদের প্রিয়তম নবী (সা)-মুনাফিকের মধ্যে কয়েকটি স্বভাব : ‘কথা বললে মিথ্যা বলে, আমানতে খেয়ানত করে ও ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে।’ আমাদের চরিত্রের এই অধপতন নিয়ে আমরা কিভাবে মাথা তুলে দাঁড়াবো! সারা
বিশ্বে মুসলমানদের যে জিল্লতি তা তাদের প্রাপ্য। আমাদের নামায, আমাদের রোযা আমাদের
মধ্যে আল্লাহর স্মরণ ও আল্লাহর ভয় জাগ্রত করতে সমর্থ হচ্ছে না, তাই আমাদের চরিত্রেও
কোন উন্নতি নেই। আল্লাহ আমাদেরকে ব্যবহারিক জীবনে ইসলাম মানার তাওফিক দান করুন। আমিন।
১১/১০/২০১৭
Comments
Post a Comment