কুশলাদি জানার
পর তার সাংসারিক হালহাকিকত জানতে চাইলাম। বৃত্তি পায় ১৮০০ ডলার (বাংলাদেশী টাকায় এক
লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার টাকা)। এর মধ্যে ৩০০ ডলার ট্যাক্স হিসেবে কেটে রাখার পর নগদ পায়
১৫০০ ডলার (বাংলাদেশী টাকায় এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা) আমাদের দেশীয় হিসেবে কম নয়। ব্যয়টা
হলো বাসা ভাড়া ৬৫০ ডলার, মাহেরের স্কুলের বেতন ৬২৫ ডলারে এবং গাড়ি ও ইন্সুরেন্স বাবদ
ব্যয় ৩০০ ডলার। এতেই চলে যায় ১৫৭৫ ডলার (তার মানে ৭৫ ডলার বেশি)। এরপর সংসারের বাজার,
ছেলের লেখাপড়ার আনুষঙ্গিক ব্যয় ইত্যাদি হিসেব করে কোনভাবেই আমি মেলাতে পারছিলাম না।
কিভাবে চলছো, জিজ্ঞেস করলে হেসে দিয়ে জানালো যে, চলে যাচ্ছে এবং একটু ধারদেনা হচ্ছে।
তার কথা হলো, গবেষণাটা এগিয়ে নিতে পারলে সবকিছু ম্যানেজ হয়ে যাবে। গবেষণায় যে পরিমাণ
সময় ও মনোযোগ দেয়া দরকার তা সে দিতে পারছিলো না। এখন সকাল ৮টার মধ্যে বাসা থেকে বের
হয়ে মাহেরকে স্কুলে দিয়ে তার ল্যাবরেটরিতে চলে যায় (দুপুরের খাবার বাসা থেকে নিয়ে সেখানে
খায়) এবং বিকেল ৪টার সময় মাহেরকে নিয়ে বাসায় ফিরে। একটু বিশ্রাম নিয়ে বা বাজার করার
প্রয়োজন হলে সেরে আবার রাত্রে চলে যায় এবং দীর্ঘ রাত ল্যাবরেটরিতে কাটায়। সে চাচ্ছে
তার আম্মা থাকাবস্থায় (৬ মাস)তার গবেষণা কর্মকে একটু এগিয়ে রাখতে। আশা করা যায় তা সে
পারবে। আর রনির আম্মা সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যাপারে বেশ সিরিয়াস এবং ছেলে-মেয়েরাও এ
ব্যাপারে তাদের আম্মাকে একটু বেশিই মূল্যায়ন করে। রনি উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছে নাটোরে তার
মামা-মামীর কাছে। সেখানে বিজ্ঞানের বিষয়সমূহ তার মামা-মামী (মামী রাবি থেকে গণিতে মাস্টার্স)ও
আব্দুল গফুর স্যারের কাছে পড়তো। টেস্ট পরীক্ষার ফলাফলে রনির আম্মা সন্তুষ্ট হতে না
পারায় ছেলেকে নড়াইলে বাসায় চলে আসতে বলে। সত্যি সত্যি দেখি ২/৩ দিনের মধ্যে বইপত্র
সব বেঁধে ছেলে চলে আসছে। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা, এভাবে চলে আসাটা আমার পছন্দ ছিল না।
নতুন জায়গা, বন্ধু-বান্ধব-শিক্ষক কেউ পরিচিত নয়। মুকুলও পেরেশান হয়ে উঠলো এবং তাড়াতাড়ি
চলে যেতে বললো। দেখলাম যে কয়দিন ছিলো সে কয়দিন রনির আম্মা ছেলেকে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি,
বায়োলজি, ম্যাথ সবই পড়াচ্ছে। জীবনে বিজ্ঞান না পড়লেও ছেলেকে বিজ্ঞানের জটিল জটিল বিষয়
পড়ানোর কথা শুনে সবার আশ্চর্য হওয়ারই কথা। তার পড়ানোর কৌশল অভিনব। বলে কেমিস্ট্রি বই
বের করো। স্যার পরীক্ষার জন্য কোনটা কোনটা পড়তে বলেছে? ওর মধ্যে থেকে মুখস্ত করে তাকে
শোনাতে হত। অবশ্য বেশিদিন আর তাকে কষ্ট করতে হয়নি। কিছুদিন পরে রনি আবার নাটোরে চলে
যায়। এখন অবশ্য রনির আম্মাকে ল্যাবরেটরিতে যেয়ে বসে থাকতে হবে না; রনিকে সংসারের ঝামেলা
থেকে শাশুড়ি ও বৌমা মিলে পুরোপুরি ফ্রি করে দিতে পারলেই রনি পারবে। আসলে লেখাপড়ার জন্য
প্রয়োজন অনুকূল পরিবেশ ও প্রশান্ত মন। মনে দুশ্চিন্তা ভর করলে লেখাপড়ায় বেশি এগোনো
যায় না। সেটা এখন রনি পাচ্ছে। আলহামদু লিল্লাহ।
রনির আয়-ব্যয়ের
মধ্যে কোন সামঞ্জস্যতা নেই। প্রতি মাসেই তার ধার হচ্ছে। অবশ্য এতে তার মধ্যে কোন পেরেশানী
নেই। লেখাপড়া শেষ করে চাকুরী করে তা পরিশোধ করতে পারবে। আর আমেরিকান অর্থনীতিটাই এমন।
সেখানে খরচ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং প্রচুর ঋণ দেয়া হয়। খরচের মধ্যে রয়েছে তাদের
অর্থনীতির প্রাণ। যেখানে ব্যাপক উৎপাদন সেখানে ব্যাপক ভোগ না থাকলে অচলাবস্থা দেখা
দেবে (অর্থনীতির ভাষায় মন্দা)। আমেরিকায় ১৯৩০ এর দশকে মহামন্দা দেখা দিয়েছিল। অনেক
লোক পুঁজি হারিয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছিল এবং তাদের জাতীয় আয় এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছিল।
ফলে ঋণ নিয়ে আমেরিকায় টেনশন করার মত অবস্থা নেই। মাসে ৫০০ ডলার করে ঋণ হলে বছরে বড়জোর
৬০০০ ডলার ঋণ হবে। ফলে সব ধরনের টেনশন মুক্ত হয়ে রনিকে পুরো মনোযোগটা গবেষণায় দিয়ে
এক বছরের মধ্যে যাতে শেষ করতে পারে সেদিকে খেয়াল করতে হবে। আমরা আল্লাহর কাছে রনি,
রনির আম্মা, ওহী ও মাহেরসহ আমেরিকায় অবস্থানকারী আমাদের প্রিয়জনদের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ
কামনা করি এবং দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদের পূর্ণ অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন। আমিন। ২২/১০/২০১৭
Comments
Post a Comment