বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
শিরকের পর আল্লাহর
কাছে সবচেয়ে অপছন্দ তাঁর বান্দাদের প্রতি জুলুম। তাঁর বাণী-‘নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল করে ও পেছনে
দোষ প্রচার করে’-সূরা হুমাযা। মানুষকে গালাগাল ও আড়ালে-আবডালে
একটু নিন্দা করলে তার শাস্তি যদি অবধারিত হয়, তাহলে গুম-খুন-জেল-জুলুমের পরিণতি কী
হতে পারে? আল্লাহতায়ালা সূরা হুমাযাতেই বলেছেন তাদের পরিণতি ‘হুতামা-তা আল্লাহর আগুন, প্রচন্ডভাবে উত্তপ্ত-উৎক্ষিপ্ত’। আমার জানামতে কুরআন মজিদে জালেমদের শাস্তি প্রসঙ্গে আল্লাহর আগুন এই
এক জায়গাতেই বলা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে তাঁর প্রচন্ড ক্ষোভ ও ঘৃণাই প্রকাশ পেয়েছে। মানুষ
তো আল্লাহরই প্রতিনিধি। মানুষকে খাওয়ালে, সেবা-যত্ন করলে আল্লাহকেই করা হয় (হাদিসের
ভাষা), তেমনি মানুষের প্রতি আঘাত ও তাকে কষ্ট দেয়া হলে তাতো আল্লাহকেই দেয়া হয়। ঈমানদারদের
প্রতি জুলুম-নির্যাতন আরো ভয়ঙ্কর, আরো ক্রোধ-উদ্রেগকারী। আল্লাহর ভাষায়-‘যারা ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয়, অতঃপর তাওবা করে না, তাদের জন্য
রয়েছে জাহান্নামের আযাব-আছে ভষ্ম হওয়ার শাস্তি’-সূরা বুরুজ।
আল্লাহর দ্ব্যর্থহীন উক্তি জাহান্নামে যাওয়ার জন্য এটিই যথেষ্ট। নমরুদ, ফিরাউন, আবু
জেহেল, আবু লাহাব, হিটলার, মুসোলিনি, সিসি, সূচিসহ যুগে যুগে যত জালেম আল্লাহর এই দুনিয়ায়
তাঁর বান্দাদের প্রতি জুলুম করেছে বা করছে সবারই পরিণতি একই, জাহান্নামই তাদের ঠিকানা।
পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর বান্দাদের সাথে সদাচরণ করে আল্লাহ তাদের প্রতি অত্যন্ত খুশি
হন। রসূল (সা)-‘এর বাণী-যমীনে যারা আছে তাদের সাথে সদাচরণ
করো তাহলে আছমানে যিনি আছেন তিনিও তোমাদের সাথে সদাচরণ করবেন।’
বর্তমান বিশ্বে
মুসলিমরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত এবং এর পেছনে মদদ যোগাচ্ছে ইসলামবৈরী শাসকগোষ্ঠী। কাফির-মুশরিকরা
ইসলামকে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। নিজেরা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করে মুসলমানদের
ঘাড়ে নানা কৌশলে দোষারোপ করছে। পরকালে বিশ্বাসী কোন মুসলমান সন্ত্রাসী বা জঙ্গি হতে
পারে না। কেউ হলে তারা বিভ্রান্ত, ইসলামের দুশমনদের ক্রীড়নক ও তাদের উচ্ছিষ্টভোগী।
ইসলামের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই এবং তারা মুসলমানদের কেউ নন। দেশে দেশে দুশমনদের
সৃষ্ট সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে ইসলামের দুশমনরা মুসলমানদেরকে ঘায়েল করার একটা অপকৌশল
হিসেবে গ্রহণ করছে এবং মুসলিম শাসকরাও তাদের সাথে মিলে ঈমানদারদের প্রতি জুলুম-নির্যাতন
করছে, এর মূলে রয়েছে ক্ষমতার প্রতি দুর্ণিবার আকর্ষণ ও আখিরাতে জবাবদিহির অনুভূতি না
থাকা।
আমরা জানি আমাদের
প্রিয়তম নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেন : তিন জনের দোয়া তাৎক্ষণিক কবুল হয়-সন্তানের জন্য
পিতা-মাতার দোয়া, মজলুমের দোয়া ও মুসাফিরের দোয়া। তিনি আরো বলেছেন : মজলুম ও আল্লাহপাকের
মাঝে কোন আড়াল নেই, অর্থাৎ মজলুমের দোয়া আল্লাহর দরবারে গৃহিত হয়। কিন্তু আমরা দোয়া
কবুলের কোন লক্ষণ দেখি না, তাই হতাশ হয়ে পড়ি। আসলে আল্লাহতায়ালা অতিশয় ধৈর্যশীল, শাস্তি
দানের ব্যাপারে তাঁর মধ্যে কোন তাড়াহুড়া নেই। এ দুনিয়া একটি পরীক্ষাগার। তিনি জালেম
ও মজলুম উভয়কেই পরীক্ষা করছেন। মজলুম কতখানি ধৈর্যশীল তা তিনি দেখছেন (তিনি নিজেই বলেছেন
যে, তাঁকে দেখে নিতে হবে) এবং এ পথে যারা অগ্রসর আল্লাহ তাদেরকে অপরিসীম ধৈর্য ও সহনশীলতা
দান করছেন, হাসিমুখে ফাঁসির মঞ্চে এগিয়ে যাওয়ার মত মনোবল ও শক্তি-সাহস যোগাচ্ছেন (এটা
আল্লাহতায়ালারই অনুগ্রহ)। জান্নাতে বিভিন্ন শ্রেণি রয়েছে। ঈমান ও নেক আমলের বিনিময়ে
যে কোন ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে। কিন্তু উচ্চ মর্যাদা তাদেরই জন্য যারা আল্লাহর
পথে নির্যাতিত হয়। এ সব ঈমানদাররা সমাজে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। নামাযী, রোযাদার,যাকাত
আদায়কারী, আমানতদার, প্রতিশ্রুতি পালনকারী, নেশামুক্ত ও মানবীয় সকল সৎ গুণাবলীর অধিকারী।
আল্লাহর প্রতি ঈমান আনায়নই তাদের অপরাধ, (আল্লাহর ভাষায়)-‘তাদেরতাদের অপরাধ এই যে,তারা ঈমান এনেছে পরাক্রমশালী আল্লাহর প্রতি’-সূরা বুরুজ। যুগে যুগে নবী-রসূল ও তাঁদের সঙ্গী-সাথীদের প্রতি একই কারণে
নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়েছে সম-সাময়িক জালেমরা এবং তা এখনো অব্যাহত রয়েছে ও কিয়ামত পর্যন্ত
চলবে। পক্ষান্তরে জালেম কতখানি সীমালঙ্ঘন করে সেটাও আল্লাহকে দেখে নিতে হবে। তাই তাদেরকে
অবকাশ দেয়া হয়। আল্লাহতায়ালার এটাও পরীক্ষা যে, কে জালেমের পক্ষে আর কে মজলুমের পক্ষে
সেটা যাচাই করা। মজলুমের প্রতি জুলুম-নির্যাতনে কারো মধ্যে যদি সুখানুভূতি জাগে তবে
তার বোঝা উচিৎ যে, তার ঈমান সংশয়পূর্ণ, সে আর মু’মিন নয় মুনাফিক।
মু’মিন ও মুনাফিক বাছাই-এর এটাও একটি মানদন্ড। কাতরভাবে আমরা আমাদের মহান
রবের কাছেই ধর্ণা দেই-হে আমাদের পরোয়ারদেগার! তুমি আমাদের অক্ষমতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি
ও দুর্বলতা ক্ষমা করে দাও, জালেমের সকল প্রকার জুলুম থেকে আমাদেরকে হেফাজত করো, এমন
বিপদ দিয়ো না যা আমরা সহ্য করতে না পারি, তুমি আমাদেরকে দ্বীনের ওপর অবিচল রাখো ও মুসলমান
হয়ে মৃত্যু দান করো।হে আমাদের মালিক! একবার যাদেরকে হেদায়াত দান করেছো তাদেরকে কখনই
বিপদাপদ দিয়ে হেদায়াত থেকে বিচ্যুত করো না এবং কিয়ামতের দিন তুমি আমাদেরকে অপদস্ত করো
না। হে রব! তুমি আমাদেরকে তোমার পথে কবুল করো ও মজলুমদের অভিভাবক হয়ে যাও। তুমিই তো
সর্বোত্তম অভিভাবক এবং তুমিই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আমরা যেন তোমার পথেই এগিয়ে যেতে পারি।
আমিন। ১০/১০/২০১৭
Comments
Post a Comment