রনির আমেরিকা
যাওয়া পাঁচটি বছর (৪ঠা জুলাই ২০১২) অতিক্রম করেছে। মাঝে ওহী ও মাহের ঘুরে গেলেও এই
পাঁচ বছরের মধ্যে মা-ছেলে একত্রিত হতে পারেনি। ছেলে, ছেলেবৌ ও নাতির সাথে মিলিত হবার
একটি বাসনা খুবই স্বাভাবিক এবং এই যাওয়ার মাঝে সেটা পূরণ হওয়ার একটি আনন্দ। পক্ষান্তরে
আমি সঙ্গী হতে না পারা এবং নাতি-নাতনী (তাসিফা, আহমদ ), ছেলে-মেয়েসহ তার আব্বা-আম্মা-শাশুড়ি,
ভাই-বোন, দেবর-ননদ ও অগণিত কাছের মানুষকে ছেড়ে যাওয়ার বেদনা। ফলে এই ভ্রমণে রয়েছে মিশ্র
প্রতিক্রিয়া। আর এটাই দুনিয়ার নিয়ম। নিরবচ্ছিন্ন সুখ বা দুঃখ বলে কিছু নেই।
রনি আমাদের
চার ভাই-এর প্রথম সন্তান (অর্থাৎ বংশের তৃতীয় প্রজন্মের প্রথম) এবং তার নানার পরিবারেরও
(ছেলে-মেয়ে উভয়ের) প্রথম। ফলে উভয় পরিবারে তার প্রতি একটু বাড়তি দরদ ও ভালোবাসা বিদ্যমান।
খুবই স্বল্প সময়ের নোটিশে রনির আম্মা আমেরিকা রওয়ানা হলো। রনির চাচা-চাচী, মামা-মামী
ফুফু-ফুফা,খালা-খালু ও ভাই-বোন সবারই মাঝে ছিল আন্তরিকতা ও দরদের ছোঁয়া। আমেরিকা যাওয়ার
কথা শুনলেই একটি ভয় কাজ করে। তাহলো ভিসাজনিত জটিলতা ও মোটা অংকের ব্যয়। আল্লাহর মেহেরবানীতে
খুব সহজে ভিসাপ্রাপ্তি ও কাতার এয়ারওয়েজের যাতায়াত টিকেটে ৪০% কমিশন এবং বেয়াইনের
(রাজিবের শাশুড়ি) সঙ্গী হওয়া-সবকিছু ছিল খুবই অনুকূলে।
আমরা দুজনই
নিজ নিজ পরিবারের প্রথম সন্তান। ফলে উভয় পরিবারে আমাদের রয়েছে একটু বাড়তি সম্মান ও
মর্যাদা। আমরা চেষ্টা করি সেটাকে ধরে রাখতে। রনির আম্মা দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে বেশ
সচেতন। পুত্রবধু হিসেবে সে তার শ্বশুর-শাশুড়ির অত্যন্ত প্রিয়পাত্রী। তার দ্বীনী চরিত্র
এবং একজন দ্বায়ীর ভূমিকা পালনের কারণে আব্বা তাকে খুবই স্নেহ করতেন। বাড়ি গেলে আমার
সকল ভাইবৌ ও বোনদেরকে নিয়ে তার তালিম-তারবিয়ত আব্বার খুব পছন্দ ছিল যেটা আব্বা নিজেও
করতেন এবং এই সিলসালা এখনো অব্যাহত রয়েছে (আমার আব্বা সূচনা করায় এর ছওয়াব অন্যান্যদের
সাথে তিনিও পাচ্ছেন)। সে অত্যন্ত ভাগ্যবতী যে, আমার আব্বার শেষমুহূর্তগুলোয় কাছে থাকার
সৌভাগ্য তার হয়েছিল। আল্লাহর মেহেরবানীতে আমরা এখনো একান্নভূক্ত এবং এর মূলে রয়েছে
বাড়ির বৌদের ভূমিকা। সাধারণত বৌদের পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষের কারণে যৌথপরিবার আমাদের
সমাজে টিকে না। আল্লাহতায়ালার অশেষ মেহেরবানী যে,আমাদের পরিবারে সেটার পরিবর্তে রয়েছে
পরস্পর সৌহার্দ-সম্প্রীতি। বাড়ির বড়বৌ হিসেবে রনির আম্মা এব্যাপারে বেশ সচেতন। আমি
প্রতিদিন চেষ্টা করি আমার মা’র সাথে কথা কথা বলার এবং স্মরণ করে দেয়ার
দায়িত্বটা মূলত রনির আম্মাই করে থাকে। মা’র সাথে কথা
বলার মাঝে মা জিজ্ঞেস করেন-রিনা নেই। আমার মা তার পুত্রবধুর সাথে কথা বলায় বেশী স্বাচ্ছন্দ
বোধ করেন। তার অনুপস্থিতিটা আমার মা খুব বেশী অনুভব করবেন। আসার সময়ে আমার মায়ের চেহারায়
সেটা পরিস্ফুট হচ্ছিলো। আল্লাহপাক আমার মাকে সুস্থতাসহ হায়াত বাড়িয়ে দিন। এমনিতেই রনির
আম্মা সেবাগ্রহণে নয়, সেবাদানেই তৃপ্ত। তাই দেখা যায় আমাদের উভয় পরিবারে কারো কোন সমস্যা
হলে তার ডাক পড়ে এবং এ ব্যাপারে সে খুবই স্বতস্ফুর্ত। এ ছাড়াও পরিচিত অনেকে তার কাছে
আর্থিক সহায়তার আবেদন করলে সে তার প্রিয়জনদের কাছ থেকে নিয়ে প্রদানের জন্য সাধ্যমত
চেষ্টা করে। দীর্ঘ ৬টা মাস আমরা তাকে এবং সেও আমাদের বিচ্ছেদটা অনুভব করবে। তারপরও
আমাদের চলতে হবে। আমরা আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করি, তিনি যেন আমেরিকায় অবস্থানরত রনির
আম্মাসহ আমাদের পরিবারের একটি ক্ষুদ্র অংশকে এবং আমার মা, রনির নানা-নানী ও নাতি-নাতনীসহ
তার প্রিয়জন যাদেরকে রেখে গেলেন সবার পূর্ণ হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আল্লাহই আমাদের
অভিভাবক, তিনি সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠতম অভিভাবক এবং তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট।
এই জার্নিটা
ছিল টানা ৩৮ ঘন্টার। ২-৫৫ কাতার এয়ারওয়েজ ধরার জন্য বাসা থেকে বের হয় ০৬ তারিখ শুক্রবার
রাত ১০টায় এবং প্লেন ছাড়ে পরের দিন অর্থাৎ ০৭/১০/২০১৭ রাত ৩-০৫মি. এবং দোহা (কাতার)
পৌঁছে আমাদের সময় সকাল ৯-০০ টায়। সকাল ১১টায় আর একটি প্লেন ছেড়ে একটানা ১৫ ঘন্টা চলার
পর আমাদের সময় ০৮ তারিখ রাত ২-০০টায় শিকাগো পৌঁছে। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা (ইমিগ্রেশন)
শেষ করে রনির গাড়িতে (সাথে মাহের ও রনির বন্ধু সালাহ উদ্দীন) আমাদের সময় দুপুর ১২টায়
(আমেরিকায় রাত ২টা) কেন্টাকি রনির বাসায় পৌঁছে।
Comments
Post a Comment