Skip to main content

The Role of Faith-based Organizations in Promoting Sustainable Development Goals (SDGs)



Bangladesh Institute of Islamic thought (BIIT), Asian Resource Foundation (ARF) and Asian Muslim Action Network (AMAN)-এর যৌথ উদ্যোগে ১৫/০৪/২০১৭ তারিখ দিনব্যাপী এক ওয়ার্কশপে The Role of Religions in Promoting Sustainable Development Goals (SDGs) শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপনের এক  সুযোগ আমার হয়েছিল। নিম্নে তা দেয়া হলো।

১৭০টি সদস্য দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘ ১৫ বছরমেয়াদী (জানুয়ারি ২০১৬ থেকে ২০৩০ সাল) ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে যা Sustainable Development Goals (SDGs) নামে পরিচিত। এর মধ্যে দারিদ্রবিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্ঘটনাজনিত ঝুঁকি, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং গণতান্ত্রিক শাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠা উল্লেখযোগ্য যা নিয়ে আমাদের আজকের এই ওয়ার্কশপ। এ সব সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে বিশ্বাসনির্ভর সংগঠনসমূহ কী ভূমিকা পালন করতে পারে এবং এর সাথে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়েই মূলত আমাদের আলোচনা। ২০১২ সনে এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, বিশ্বের জনগোষ্ঠীর প্রতি দশ জনের আটজন বিশ্বাসী অর্থাৎ কোন না কোন ধর্মে বিশ্বাসী।

বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরস্পর আস্থাসৃষ্টি এবং একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বি না হয়ে পরস্পরের সহযোগী হয়ে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সমাজের সমস্যা সমাধানের উপায় বের করাও এই ওয়ার্কশপের অন্যতম লক্ষ্য। ধর্মীয় আচার-আচরণে পার্থক্য থাকলেও অনেক বিষয়ে বিশেষ করে নীতি-নৈতিকতা ও সৎ জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে সকল ধর্মের মাঝে ঐকমত্য রয়েছে। যেমন, কর্মে সততাবলম্বন, ঘুষ-দুর্নীতি থেকে নিজেকে দূরে রাখা, ধোকা-প্রতারণা না করা, ওজনে কম বা ভেজাল না দেয়া এবং ওয়াদা-প্রতিশ্রুতিপালন ও আমানতসংরক্ষণ সকল ধর্মেরই মৌলিক শিক্ষা। এ ছাড়া প্রায় ধর্মেই পরকাল বিশ্বাসের কোন না কোন ধারণা রয়েছে, অর্থাৎ ভালো কাজের উত্তম বিনিময় এবং মন্দ কাজের শাস্তি সম্পর্কে বিশ্বাস রয়েছে। সমাজে দারিদ্র ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের অন্যতম কারণ দুর্নীতি। সমাজ থেকে সকল প্রকার দুর্নীতি অপসারণ করতে পারলে আয়-বৈষম্য ও দারিদ্র অনেকাংশে কমে যাবে। যে সব প্রক্রিয়ায় মানুষকে শোষণ করা হয় ইসলামের দৃষ্টিতে তা সবই হারাম বা অবৈধ এবং এর পরিণতি জাহান্নাম। আমাদের সমাজের মানুষকে ধর্মপরায়ণ বলা হলেও ধর্ম সম্পর্কে একটি অস্পষ্ট ধারণা এবং ব্যবহারিক জীবনে ধর্মবিশ্বাসের কোন প্রতিফলন অধিকাংশের ক্ষেত্রে নেই। যেমন, ইসলামে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা হয়েছে ঘুষ গ্রহণকারী ও দানকারী উভয় দোযখী। এখানে কোন অস্পষ্টতা না থাকলেও অধিকাংশ অফিস-আদালত ও কোর্ট-কাচারিতে ঘুষের লেনদেন রয়েছে, যা আয়-বৈষম্য সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ। মানুষের অধিকারহরণ একটি জুলুম এবং জুলুমের পরিণতি (যদি মজলুম ক্ষমা না করে) জাহান্নাম। ইসলাম মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যেমন সোচ্চার, তেমনি সকল ধর্মের আবেদনও তাই। মানুষকে অন্যায় থেকে দূরে রাখার ক্ষেত্রে শাস্তিদানের পাশাপাশি নানা প্রক্রিয়ায় উদ্বুকরণ (Motivation) এখন সার্বজনীনতা লাভ করেছে। ধর্মীয় বিশ্বাস শানিতকরণ এবং এর শিক্ষা ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে মানুষকে সহজেই মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন করা সম্ভব। এই মূল্যবোধসম্পন্ন জনগোষ্ঠী দ্বারা শোষণ ও বঞ্চণামুক্ত সমাজ গড়ে তোলা খুবই সহজ। এ ছাড়াও প্রত্যেক ধর্মে সদাচরণের জোর তাগিদ রয়েছে। পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি, অধীনস্থ, ইয়াতিম-মিসকিনসহ সকল শ্রেণির মানুষের সাথে সদাচরণ প্রত্যেক ধর্মেরই শিক্ষা এবং তাদের প্রয়োজন পূরণের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান প্রাপ্তির বিশ্বাস সকল ধর্মপরায়ণ জনগোষ্ঠীর রয়েছে। ইসলামে যাকাতবিধান দারিদ্রবিমোচনে বড় হাতিয়ার। গরীবের প্রতি কোন অনুগ্রহ নয়, বরং ধনী ব্যক্তিদের জন্য যাকাত প্রদান বাধ্যতামূলক ইবাদত এবং সরকার নিজে যাকাত আদায় ও বন্টনের দায়িত্ব পালন করলে সহজেই দারিদ্রবিমোচন সম্ভব। যাকাতের আটটি খাতের মধ্যে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হলো ফকির-মিসকিনের হক আদায় অর্থাৎ তাদের দারিদ্রবিমোচন। বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় যাকাত বিলি-বন্টন হয় তা যাকাতের উদ্দেশ্যের সাথে মোটেই সামঞ্জস্যশীল নয়। যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে একজনকে এত পরিমাণ দিতে হবে যাতে সে স্বাবলম্ভী হয়ে উঠতে পারে এবং পরবর্তী বছরে সে নিজেই যাকাত প্রদানে সক্ষম হয়। সমাজের সর্বস্তর থেকে দুর্নীতির অপসারণ এবং যাকাতের মাধ্যমে সহজেই আয়-বৈষম্য দূর ও দারিদ্রবিমোচন সম্ভব। 

জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্ঘটনাজনিত নানাবিধ ঝুঁকি অনেকটা মনুষ্যসৃষ্ট। বেপরোয়া পাহাড় কর্তন ও গাছ-পালা নিধন এবং নদীতে বাঁধনির্মাণ করে এর স্বাভাবিক গতি ব্যহতকরণ ও ময়লা-আবর্জনা পানিতে ফেলে একে দুষিতকরণ, যানবাহনের ধোঁয়া ও যত্রতত্র কলকারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। এ সব প্রাকৃতিক বিপর্যয় লাঘব করার জন্য ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। যেমন, নবী মুহাম্মদ (সা.) গাছ লাগানোকে ছদকা হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন যে, এর ছায়া ও ফলমূল দ্বারা মানুষ ও অন্যান্য সৃষ্টি উপকৃত হয়। তিনি বৃক্ষরোপণকে ছদকায়ে জারিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া গাছের ছায়ায়, রাস্তার ধারে ও পানির কিনারায় মলমূত্র ত্যাগকারীর প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। আমরা নিজেদেরকে মুমিন বলে দাবী করি, (আল্লাহরও এক নাম মুমিন যার অর্থ নিরাপত্তাদানকারী) অর্থাৎ আমাদের দ্বারা আল্লাহর সকল সৃষ্টি নিরাপদ। শুধু মানুষ নয়-আমাদের দ্বারা জীব-জানোয়ার, কীট-পতঙ্গ, গাছ-পালা, নদী-নালা কোন কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না-মুমিন শব্দটি উচ্চারণের মাঝে এমন ভাবই প্রকাশ পায়।

বিশ্ববাসীর বড় চাওয়া গণতান্ত্রিক শাসন (সুশাসন) ও শান্তি নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে ধর্মের কোন বিকল্প নেই। সকল ধর্মেরই মূলমন্ত্র শান্তি। ইসলাম শব্দগত অর্থ আনুগত্য এবং পরিভাষাগত অর্থ শান্তি। ইসলাম পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সর্বত্রই শান্তি চায় এবং এই চাওয়াটা পারস্পরিক মিলেমিশে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জীবন-যাপনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করতে চায়। আল কুরআনের বাণী-তারা তাদের ব্যাপারসমূহ পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন করে। আল্লাহর বান্দাদের এটা চরিত্রবৈশিষ্ট্য। তারা স্বৈরাচার বা একনায়ক নয়। যেখানেই একাধিক ব্যক্তির স্বার্থসংশ্লিষ্টতা রয়েছে সেখানেই পরামর্শ। পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর পরামর্শ এবং সন্তান বড় হলে তাকে পরামর্শে শরীক করানো, বংশীয় বিষয় হলে সেখানে বংশের সবাইকে বা প্রতিনিধিস্থানীয়দের নিয়ে পরামর্শ করা ইসলামের রীতি। এভাবে ক্লাব, মসজিদ-মাদ্রাসা-বাজার সমাজের সকল ক্ষেত্র বা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্তরে পরামর্শের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হলে সেখানে শান্তি আসতে পারে। এটাই ইসলামের গণতান্ত্রিক আচরণ এবং এর মাধ্যমে সমাজে সুশাসন ও শান্তিপ্রতিষ্ঠা সম্ভব। বর্তমান সমাজে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ব্যাপকরূপ লাভ করেছে। অনেকে এর সাথে ধর্মের সংশ্লিষ্টতা তালাশ করে। আমার জানামতে কোন ধর্মই সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না। আমার দেখা হিন্দু হোক বা মুসলমান হোক সে যদি ধর্মপরায়ণ হয় তাহলে অবশ্যই তাকে বিনয়ী হিসেবে পাওয়া যাবে। আল্লাহতায়ালার বাণী-নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল ও পেছনে দোষ প্রচার করে। মানুষকে একটু গালি দেয়া ও অসাক্ষাতে দোষ প্রচার করায় যদি ধ্বংস নিশ্চিত হয়, তাহলে গুম-খুনের পরিণতি কী হবে? এই সূরা হুমাযাতেই বলা হয়েছে মানুষকে কষ্টদান ও সম্মানহানির পরিণতি হুতামা এবং তার পরিচয় হলো আল্লাহর আগুন-প্রচন্ডভাবে উত্তপ্ত-উৎক্ষিপ্ত, অন্তর পর্যন্ত স্পর্শ করে। আমার জানামতে কুরআন মজিদে এই এক জায়গাতেই জাহান্নামের আগুনকে আল্লাহর আগুন বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর বান্দাদের সাথে যারা জুলুম করে তাদের প্রতি আল্লাহর চরম ক্রোধ প্রকাশ পেয়েছে। রসূল (সা.)-এর বাণীও স্মরণযোগ্য-ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়, মুমিন নয়, মুমিন নয় যার হাত ও মুখের অনিষ্ঠ থেকে অন্যরা নিরাপদ নয়। এতে বোঝা যায় যে- যারা কথা, আচরণ ও লেনদেনে মানুষকে কষ্ট দেয় তারা মুমিনও নয়, মুসলমানও নয় এবং ইসলামের সাথে তাদের কোন সম্পর্কও নেই। যারা সন্ত্রাস করে ও মানুষের শান্তি বিনষ্ট করে তারা ইসলামের দুশমন ও মানবতার দুশমন; তারা হয় বিভ্রান্ত নয়তো ইসলামের দুশমনদের ভাড়াটে হিসেবে কাজ করে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সর্বস্তরের মানুষের কাছে আলেম-উলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদদের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তুলে ধরতে হবে।

ইসলাম মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ও বৈষম্য স্বীকার করে না। ভাষা, লিঙ্গ, বর্ণ ও পেশার ভিত্তিতে কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। সবাই আদমের সন্তান এবং আদম মাটির তৈরী। আল্লাহর বাণী-তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই উত্তম যে আল্লাহকে বেশি ভয় পায় (অর্থাৎ নীতিবান)। নর ও নারী কেউ কারো প্রভূও নয় আবার দাসও নয়। ইসলাম নারী ও পুরুষের সম্পর্কটা এভাবে ব্যক্ত করেছে-ঈমানদার নর ও নারী পরস্পরের বন্ধু ও সাথীতোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। কিয়ামতের দিন স্বামীর পক্ষে স্ত্রীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। পিতা অপেক্ষা মাতার মর্যাদা তিনগুণ বেশি। যে তার কন্যা সন্তানদেরকে ভালোভাবে লালন-পালন করে সৎ পাত্রে পাত্রস্থ করবে জান্নাতে তার ও আমার (রসূল সা.) অবস্থান হবে একত্রে। বিয়েতে যৌতুক নয়, নারীর জন্য মহরানা নির্ধারণ করে নারীর সম্মান, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে নারীর প্রতি যে অবিচার ও সহিংসতা তা মানুষের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে সহজেই দূর করা সম্ভব।

ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার এবং ধর্মীয় আচার-আচরণ অনুশীলনের মাধ্যমে বর্তমান বিশ্বে আমরা যে সব সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছি তা দূর করে সহজেই একটি গ্রহণযোগ্য ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। আল্লাহপাক আমাদের মধ্যে বান্দাসুলভ গুণাবলীর বিকাশ ঘটিয়ে একটি সুখি ও সমৃদ্ধশালী সমাজ গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। আমিন। ১৫/০৪/২০১৭


Comments