Skip to main content

ফেসবুকে আমার সম্প্রতি লেখা থেকে


একটি সুন্দর সকাল কাটালাম                                                                  ২৪/০৪/২০১৫
ফজরের নামায শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দুর শিক্ষক ড. মুফতি রশীদ আহমদ (খতিব, পল্টন জামে মসজিদ)-এর সাথে রাস্তায় হাঁটার পর স্যার তাঁর বাসায় নিলেন। সেখানে চা পানের ফাঁকে ফাঁকে আল্লাহর সৃষ্টি, তাঁর মহত্ত ও তাঁর দ্বীন নিয়ে বেশ কিছু আলোচনা হলো এবং দু’টি বই (এক মিনিটের মাদ্রাসা ও খাযায়েনে কোরআন ও হাদিস (কোরআন ও হাদিসের রত্নভান্ডার) তিনি প্রদান করলেন। খাযায়েনে কোরআন ও হাদিস বইটির শুরুতে স্থান পাওয়া প্রখ্যাত উর্দু কবি হযরত খাজা আযীযুল মজযূব (র.) (কর্মজীবনে ডিসি ছিলেন)-এর একটি কবিতার ছন্দ ও তার অনুবাদ এবং হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী (র.)-এর একটি নসীয়ত সবার সঙ্গে শেয়ার করার জন্য ফেসবুকে দেয়া হলো।
নসীয়ত
রাহ্ কে দুনয়া মেঁ বাশার কো নাহী যীবা গাফলত
মওত্ কা ধেয়ান ভী লাযেম হায় কেহ্ হার্ আন্ রাহে
জো বাশার আতা হায় দুনয়া মেঁ ইয়ে কাহতী হায় কাযা
মায়ঁ ভী পীছে চলী আতী হোঁ যারা ধেয়ান রাহে।
অনুবাদ
দুনিয়াবাসী মানুষ মাত্র, গাফলত মহাভুল,
মৃত্যু ধ্যান রাখিলে সদা, আখেরাত হয় ফুল।
জগত মাঝে পা রাখিতেই, মৃত্যু কহে ডাকি,
আমিও আছি তোমার পিছে, চলিও ধ্যানে রাখি।

হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী (র.)-এর একটি নসীয়ত (বই-এর একই পাতায় উল্লেখিত)
কুদৃষ্টি থেকে একবার চক্ষু হেফাজত করা, দশ হাজার রাকাত তাহাজ্জুদ অপেক্ষা উত্তম।




মানত কেবল আল্লাহরই নামে হতে হবে
২৪/০৪/২০১৫ তারিখ  বিজয়নগর জামে মসজিদে খতিব মহোদয় যা বললেন-
আজকের জুমায় খতিব মহোদয় বিভিন্ন দরগাহ-মাজার ও পীর সাহেবের দরবারে মানত মানার তীব্র সমালোচনা করে বলেন যে, মানত কেবল আল্লাহরই নামে হতে হবে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে মানত মানা বা সাহায্যপ্রার্থী হওয়া সুস্পষ্ট শিরক। ভালো বা মন্দ কোন কিছু করার ক্ষমতা কারো নেই। সবাই আল্লাহর মুখাপেক্ষি এবং কোন মাধ্যম ছাড়া সরাসরি তাঁর কাছেই চাইতে হবে। তিনি কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন যে, ওরা যাদের কাছে চায় তারা সবাই মিলে একটি মাছিও তৈরী করতে পারে না বা তার কাছ থেকে কিছু কেউ নিয়ে গেলে ঠেকাতেও পারে না। যে চায় সে যেমন দুর্বল এবং যার কাছে চাওয়া হয় সেও দুর্বল। মানে এক ফকির যেন আর এক ফকিরের কাছে চায়। তিনি বলেন যে মানত ও হাদিয়া-তোহফা বন্ধ হয়ে গেলে দেশে পীর সাহেবদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। শাহজালাল (র.), শাহ মখদুম (র.)সহ যে সব আল্লাহর ওলী আল্লাহর দ্বীন প্রচারের লক্ষ্যে এ দেশে এসেছিলেন তাঁরা সবাই লড়াই-সংগ্রাম করেই দ্বীনের প্রচার, প্রসার ও মানুষের পরিশুদ্ধির জন্য কাজ করে গেছেন। কারো পথ চলা নির্বিঘ্ন ছিল না। কিন্তু বর্তমান পীর সাহেবদের জীবন বড় আরাম-আয়েশেই চলে। ইসলাম বিরোধী কোন কার্যক্রমে পীর সাহেবদের কোন বক্তব্য নেই। সব দলেই তাঁদের অনুসারী রয়েছে। আল্লাহর রসূল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.) সবার সংসার পরিচালনার জন্য কোন না কোন ব্যবসা বা চাষাবাদ ছিল, কিন্তু পীর সাহেবদের কিছুই নেই। তাঁরা মানত ও হাদিয়া-তোহফার ওপর নির্ভর করে থাকেন।
মানত প্রসঙ্গে রসূল (সা.) হাদিস উদ্ধৃত করে তিনি বলেন যে, মানত তকদিরের কোন পরিবর্তন করে না, বরং কৃপণের কিছু অর্থ খসাই মাত্র। মানত মানতে চাইলে তা যেন আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যেই হয়। বিসিএস পরীক্ষায় চাকুরী হলে বা অমুক ব্যবসায়ে উন্নতি হলে আল্লাহর জন্য মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করবো ইত্যাদি না বলাটাই ভালো। কারণ মানত যেহেতু তকদিরের কোন পরিবর্তন করে না। বরং আল্লাহর জন্য মসজিদ-মাদ্রাসা-ইয়াতিমখানা ইত্যাদি নেক কাজে দান, নফল ইবাদত-বন্দেগী সম্পাদন করে সে সব নেক কাজকে ওছিলা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। এ প্রসঙ্গে হাদিসের বর্ণনানুসারে তিনি বণি ইসরাইলের তিন জন লোকের এক গুহায় আটকে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন। ঝড়-ঝঞ্জা বা কোন বিপদে তিন ব্যক্তি এক গুহায় আশ্রয় নিলে এক খন্ড পাথর গুহার মুখে পড়লে বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। তখন তারা একেবারে অসহায় হয়ে তাদের অতীত ভালো কাজকে ওছিলা করে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে থাকেন। একজন তাঁর পিতা-মাতাকে অত্যন্ত ভক্তি-শ্রদ্ধা করতেন এবং তাঁদেরকে খাওয়ানোর পরই তাঁর সন্তানসহ নিজেরা খেতেন। একদিন ছাগল চরায়ে আসতে বিলম্ব হয় এবং দেখেন যে তাঁর পিতা-মাতা ঘুমিয়ে পড়েছেন। দুধ দহন করে তিনি তাঁর পিতা-মাতার শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং পিতা-মাতা জাগার পর তাঁদেরকে খাওয়ানোর পরই তাঁর সন্তানসহ নিজেরা খান। তিনি বলেন, পরোয়ারদেগার আমার এ কাজ যদি তোমার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হয়ে থাকে তাহলে এ বিপদে আমাদেরকে সাহায্য করো। দ্বিতীয় জনের কাছে এক ব্যক্তি শ্রম দিয়ে পারিশ্রমিক না নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। কিছুদিন অপেক্ষার পর সেই লোক সে অর্থ দিয়ে একটি ছাগল ক্রয় করেন এবং তা থেকে বংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে অনেক ছাগল হয়। সেই মজুর ফিরে আসলে তাকে বলা হয় এ সব ছাগলই তোমার এবং তুমি চাইলে আমাকে কিছু দিতে পারো। তিনি বলেন, পরোয়ারদেগার আমার এ কাজ যদি তোমার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হয়ে থাকে তাহলে এ বিপদে আমাদেরকে সাহায্য করো। তৃতীয় জন তার এক আত্মীয়কে কূপ্রস্তাব করলে সে বলে যে, তুমি আল্লাহকে ভয় করো। আমি সেদিন কেবল তোমারই ভয়ে সে অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে ফিরিয়ে রেখেছিলাম। তিনি বলেন, পরোয়ারদেগার আমার এ কাজ যদি তোমার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হয়ে থাকে তাহলে এ বিপদে আমাদেরকে সাহায্য করো। এভাবে তাদের ভালো কাজকে ওছিলা করে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার ফলে আল্লাহ পাথর খন্ডটি সম্পূর্ণ সরিয়ে দেন এবং তারা বেঁচে যান। হাদিসের এ বর্ণনা থেকে আমরা এ শিক্ষাই পায় যে আমরা আগে নেক কাজ করবো এবং সে কাজের ওছিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে চাইবো।
তিনি নেতা-নেত্রী ও পীর সাহেবদের প্রতি অতি ভক্তির তীব্র সমালোচনা করেন। অতি ভক্তির ফলে তাঁরা যা নন তাঁদেরকে তাই বলা হয়। মুরীদরা তাদের পীর সাহেবদের ভক্তি-শ্রদ্ধার আতিশয্যে অনেক সময় সাহাবায়ে কেরামদের ওপরে স্থান দিয়ে থাকে। হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (র.) নিয়ে অনেক অতিরঞ্জিত কেচ্ছা-কাহিনী রয়েছে। তাঁদের কারো মর্যাদা সাহাবায়ে কেরামদের সাথে তুল্য নয়। সাধারণ মুসলমানদের ধারণা, চাইতে হবে আল্লাহর কাছে তা ঠিক, কিন্তু কোন মাধ্যম ছাড়া কি সম্ভব? তাই পীর ধরতে হবে এবং তাঁরা তাদের জন্য সুপারিশ করবে। এ ধারণা একেবারেই ভুল। তিনি কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন যে, আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে না এবং সুপারিশের একক কর্তৃত্ব আল্লাহর হাতে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাঁর রসূল (সা.)-কে সুপারিশের জন্য প্রথম অনুমতি দান করবেন এবং পরবর্তিতে শহীদ, আলেম-উলামা, হাফেজ ও আল্লাহর নেক বান্দাহদেরকে তিনি সুপারিশের জন্য অনুমতি দিবেন; যাদের জন্য তিনি সুপারিশ শুনতে পছন্দ করবেন। আল্লাহর ওলি নির্দিষ্ট কোন শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যে কেউ আল্লাহর আনুগত্য, নিষ্ঠা-আন্তরিকতা-একাগ্রতার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে। এটা কোন দাবী করার বা প্রচার করার বিষয় নয়। এটা আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত এবং তিনিই ভালো জানেন কে আল্লাহর ওলী এবং কে নন।
খতিব মহোদয় বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম-এর পরিবর্তে ৭৮৬ লেখার তীব্র সমালোচনা করেন। পরিবর্তে বাংলা অর্থ বলাটাও বিকল্প হতে পারে না। যে কোন কাজের শুরুতে আরবী বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম-ই উচ্চারণ করতে হবে। তিনি শিরকমুক্ত ইবাদতের জন্য সবার প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।




হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (র.) বলেন-
কু-দৃষ্টি থেকে একবার চক্ষু হেফাজত করা, দশ হাজার রাকআত তাহাজ্জুদ অপেক্ষা উত্তম।
সুন্নাত-নফল ইবাদতের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামায সর্বোত্তম। আল্লাহর রসূল (সা.) নিজে যেমন নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করেছেন, তেমনি তাঁর অনুসারীদেরকেও উৎসাহিত করেছেন। এমন কি তিনি বলেছেন যে, নারী তার স্বামীকে তাহাজ্জুদের নামায আদায়ের জন্য জাগাবে এবং না জাগলে চোখে-মুখে পানি ছিটাবে। এমনিভাবে পুরুষকেও বলেছেন। সেই নামাযকে উল্লেখ করে মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (র.) বলেন ‘দশ হাজার রাকআত তাহাজ্জুদ নামায অপেক্ষা কূ-দৃষ্টি থেকে একবার নিজের চক্ষুকে হেফাজত করা অনেক উত্তম।‘ মানুষ যখন পর্দাহীন অবস্থায় চলাফেরা করে বা পর্দাহীন ছবি যত্রতত্র প্রদর্শন করে তখন স্বাভাবিকভাবে মানুষের কূ-দৃষ্টি তার ওপর পড়ে। অবশ্য আল্লাহর রসূল (সা.) বলেছেন-প্রথম দৃষ্টি ক্ষমার যোগ্য, কিন্তু তারপরের দৃষ্টি গুনাহ। একজন মুসলিম নারী যে পরকালে বিশ্বাস করে তাকে বুঝতে হবে যে পর্দা তার জন্য ফরজ-আল্লাহর পক্ষ থেকে অবশ্যম্ভাবী পালনীয় বিধান। সুনির্দিষ্ট নিকটতম কিছু আত্মীয়-স্বজন ছাড়া সবার সাথে পর্দা পালন বাধ্যতামূলক ইবাদত। মুখমন্ডল, হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা ছাড়া সমগ্র শরীর ঢেকে রাখা বা আবৃত করে রাখা হলো নারীর ছতর। গায়ের মুহাররম পুরুষের সামনে আসতে হলে তাকে অবশ্যই ছতর আবৃত করে আসতে হবে। এটা যেমন একজন ব্যক্তির জন্য পালনীয়, তেমনি তার ছবি প্রদর্শনের ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য। ফেসবুকে অর্ধনগ্ন ছবি প্রদান খুবই ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় (ইসলামের দৃষ্টিতে) কাজ। অনেক সময় ছবির নীচে অশ্লীল ও কূ-রুচিপূর্ণ মন্তব্য লক্ষ্য করা যায়। মুসলিম নারীদের এ সর্বনাশা আচরণ থেকে বিরত থাকা উচিৎ। আজ নারীদেরকে রাস্তা-ঘাটে উত্যক্ত করা, যৌন-নিপীড়ন, বস্ত্রহরণ সব কিছুর মূলে রয়েছে অশালীন পোশাক-পরিচ্ছদ ও পর্দহীনতা। প্রগতিশীল সমাজে পরকীয়া বড় সর্বনাশা রূপ নিয়েছে যার ফলশ্রুতিতে দাম্পত্যকলহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, আত্মহত্যা, হত্যার মত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এরও মূলে রয়েছে পর্দার প্রতি উদাসীনতা ও বেপরোয়া চলাফেরা। যে পুরুষ চায় যে তার স্ত্রী পর্দাহীন চলাফেরা করুক হাদিসের ভাষায় সে স্বামীকে বলা হয়েছে দায়ূস এবং দায়ূস কখনই জান্নাতে যাবে না ও জান্নাতের ঘ্রাণও সে লাভ করবে না। নারীর আসল কর্মক্ষেত্র তার গৃহ এবং সন্তানের জন্মদান, দুগ্ধপান, লালন-পালন, শিক্ষাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। নারীর এ মূল্যবান খেদমতের জন্য পুরুষ জাতির নারীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ। দুর্ভাগ্য বস্তবাদী সমাজে তার এ খেদমতের মূল্যায়ন নেই। বরং বলা হয় অর্ধেক জনশক্তিকে কর্মহীন ও বেকার রেখে জাতি অগ্রসর হতে পারে না। আসলে বলার দরকার ছিল-তাদের এ খেদমত টাকার অংকে পরিমাপযোগ্য নয়। মায়ের স্নেহ-মমতা-দরদ ও স্ত্রীর ভালোবাসা-এ সব কি আর টাকা দিয়ে মাপা যায়? সামাজিক অবমূল্যায়নের কারণেই আজ নারী বহির্মুখী। ইসলাম নারীকে সম্মান দিয়েছে এবং উভয়ের সম্পর্ক বর্ণনা করেছে এভাবে ‘ঈমানদার নর ও নারী পরস্পরের বন্ধু ও সাথী।‘ এখানে কেউ কারো প্রভূও নয় আবার কেউ কারো গোলামও নয়। আমি এর ব্যাখ্যা করি এভাবে-গৃহরূপ রাষ্ট্রে পুরুষ হলো রাষ্ট্রপ্রধান আর স্ত্রী হলো তার অধীন প্রধানমন্ত্রী, যেখানে পরিবারে তার নিম্নের সবাই তাকে মেনে চলবে। নারী ঘরের বাইরে যেতে পারবে না-এ কথা ইসলাম কখনই বলে না। বাইরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলেই তো শরীয়ত পর্দার বিধান দিয়েছে। নারী আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি। সৌন্দর্য বলতে যা বুঝায় তা সবই নারীকে দেয়া হয়েছে। তার এ সম্পদ হেফাজত করা তারই দায়িত্ব। শয়তানের লোলুপ দৃষ্টি থেকে নিজেকে আড়াল করে আল্লাহর একজন অনুগত গোলাম হয়ে দুনিয়া ও আখিরাতে অশেষ কল্যাণের অধিকারী হওয়ার জন্য আমাদের সবারই সর্বাত্মক চেষ্টা করা দরকার। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। ২৫/০৪/২০১৫


একটি বিরল ঘটনা

গতকাল বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবী তালিকাভূক্তিকরণ ( বারের সনদ) প্রিলিমিনিয়ারি পরীক্ষা হয়ে গেল। ১৯,৮৭৬ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। তন্মধ্যে পাস করেছে ৫৮০৮ জন। মজার ব্যাপার হলো গতকাল বিকেল ৩-৩০ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং Result হয় গতকাল রাতেই। ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল একটা রেকর্ড সৃষ্টি করলো। বাকি রয়েছে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। প্রিলিমিনিয়ারি পরীক্ষায় তারা যে স্বচ্ছতার পরিচয় দিয়েছেন তার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। দেশে পরীক্ষা ও নিয়োগসহ সকল ক্ষেত্রে চরম দুর্নীতি চলছে। আমরা আশা করছি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল হবে তার ব্যতিক্রম। এবারের পরীক্ষায় আমার মেয়ে অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে। আলহামদু লিল্লাহ। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় যাতে আমার মেয়ে উত্তীর্ণ হতে পারে সে জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। ২৫/০৪/২০১৫



সিফাত আইডিয়াল একাডেমীতে আমরা যেন একটা পরিবার। আমাদের পরিবারটা খুব ছোট নয়। ত্রিশ জনের এক বড় পরিবার। আল্লাহপাকের মেহেরবানীতে আমাদের মধ্যে বেশ হৃদ্যতা। আমাদের স্যার-ম্যাডামরা প্রায়ই আপ্যায়ন করে থাকেন। এদিক দিয়ে ম্যাডামরা বেশি অগ্রসর। পরিবারের প্রধান হিসেবে আমি সবার পেছনে। বাসায় এসে আমার স্ত্রীর কাছে গল্পও করি। আজকে আমার স্ত্রী আমার সহকর্মীদের জন্য পায়েস রান্না করে পাঠিয়েছিলেন। স্যার-ম্যাডেমরা দারুণ প্রশংসা করলেন এবং তাঁদের ধন্যবাদ পৌঁছে দেয়ার জন্য আমাকে অনুরোধ করলেন। আমি অবশ্য আমার সহকর্মীদেরকে বললাম যে আমি বলে আসছি-‘তোমার পায়েসের দারুণ প্রশংসা হবে, কারণ Principal Sir এর স্ত্রী রান্না করেছেন।‘ ম্যাডামরা আমার কথা শুনে বললেন-‘না স্যার Really সুন্দর হয়েছে।‘ আমার সহকর্মীরা খুশি হওয়াতে আমিও খুশি। সকালে পরিশ্রম করে খেদমতটুকু করার জন্য আমি আমার ও আমার সহকর্মীদের পক্ষ থেকে আমার স্ত্রীকে জানাই ধন্যবাদ। ২৭/০৪/২০১৫




ভূমিকম্প

অফিসে একাকী ছিলাম। হঠাৎ করে দেখি মাথা ঘুরছে। ভাবলাম হয়তোবা গ্যাসের কারণে এমনটি হচ্ছে। নিজেই উঠে এক গ্লাস পানি খেলাম। তারপর দেখি, শিক্ষার্থীরা সব বিল্ডিং থেকে নীচে নেমে আসছে ও হৈ চৈ হচ্ছে। তখন বুঝলাম গ্যাসের কারণে মাথা ঘুরছে না; মাথা ঘুরছে ভূমিকম্পের কারণে। ভূমিকম্পের উৎপত্তি নেপালে। মাত্রা ৭.৯। ইতোমধ্যে দুই সহস্রাধিক লোক নিহত, অসংখ্য আহত এবং ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা মাটির সাথে মিশে গেছে। সব কিছু ঘটেছে মাত্র ১ মিনিটের মধ্যে। মানুষের সব গর্ব-অহংকার চুরমার হয়ে গেছে এবং তার  চরম অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে।
মানুষের এ সব বিপদাপদের নানাজনে নানা ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে। তবে আমরা যারা ঈমানদার তাদের বিশ্বাস যে আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কিছু ঘটে না। আল্লাহর বাণী-‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন বিপদ কখনই আসে না।‘ আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাহদেরকে সতর্কীকরণের জন্য বিভিন্ন সময় নানা বিপদাপদ দিয়ে থাকেন। একটি শ্রেণি আছে যাদেরকে সতর্ক করা বা না করা উভয়ই সমান, তারা কখনই ঈমান আনবে না। একটা জনপদের মানুষ যখন জিনা-ব্যভিচারসহ নানাবিধ নাফরমানিমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে বা যে জনপদে আল্লাহর দ্বীনের পথে আহবানকারীদের প্রতি সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন হতে থাকে সেই জনপদের ওপর আল্লাহপাক বিপদ-মুছিবত দিয়ে থাকেন। এখানে সূরা ইয়াসিনে বর্ণিত একটি কাহিনী উল্লেখ করা যায়। মানুষকে হেদায়াত দানের জন্য একটি জনপদে আল্লাহপাক তিন তিনজন রসূল প্রেরণ করেন। তাঁদের চেষ্টা-প্রচেষ্টার মাধ্যমে সেই জনপদের একজন লোক ঈমান আনেন।  ঈমান আনার সাথে সাথে তিনি তাঁর জাতির কাছে ছুটে এসে বলেন-‘হে জাতির লোকেরা! তোমরা আনুগত্য করো সেই রসূলদের যাঁরা নিজেরা হেদায়েতের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং যাঁরা কোন বিনিময় চান না।‘ প্রত্যুত্তরে সেই জাতির লোকেরা তাঁকে হত্যা করে। জাতির সেই কল্যাণকামী বন্ধু নিহত হওয়ার পরও জাতির কোন অকল্যাণ কামনা করেননি। বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে যখন বলা হয়-‘দাখিল হও জান্নাতে।‘ তখন সেই শরীফ ব্যক্তি বলে উঠেন-‘হায়! আমার জাতির লোকেরা যদি বুঝতো কিসের বদৌলতে আমার রব আমাকে ক্ষমা করলেন ও সম্মানিত লোকদের মধ্যে গণ্য করলেন।‘ তিনি নিজে কোন বদদোয়া করেননি বরং কামনা করেছেন যে তাঁর শাহাদতের মধ্য দিয়ে যদি তাঁর জাতির লোকদের উপলব্ধি হত। সেই জাতির কাছে আল্লাহর রসূল ও ঈমানদার লোকেরা ছিলেন অত্যন্ত ঘৃণিত। রসূলদের সম্পর্কে আল্লাহর দুশমনদের মূল্যায়ন ছিল-‘আমরা তোমাদেরকে দুর্ভাগ্যের কারণ মনে করি। তোমরা যদি বিরত না হও আমরা তোমাদেরকে প্রস্তরাঘাত করবো এবং আমাদের পক্ষ থেকে রয়েছে কঠিন শাস্তি।‘ জবাবে রসূলগণ বলেছিলেন-‘আমরা নই, তোমরা নিজেরাই তোমাদের দুর্ভাগ্যের কারণ।‘ একই চিত্র বর্তমানেও। ইসলামপন্থী জনগোষ্ঠীর জীবন বড় সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। আজ তাদেরকে দুর্ভাগ্যের কারণ মনে করা হয়। সমাজের সবচেয়ে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ লোকদেরকে বলা হয় জঙ্গী ও সন্ত্রাসী এবং কুরআন-হাদিস ও ইসলামী সাত্যিকে বলা হয় জিহাদী বই। যে কোন জায়গায় কোন অন্যায়-অপকর্ম সংঘঠিত হলেই সাথে সাথে ইসলামপন্থীদের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করা হয়।
আমরা দেখি ইসলাম গ্রহণকারী আল্লাহর সেই প্রিয় বান্দাহর হত্যার বদলা আল্লাহ কিভাবে নিলেন। আল্লাহর পথে আহবানকারীরা হলেন আল্লাহর সাহায্যকারী ও তাঁর প্রতিনিধি। তাঁদের প্রতি আঘাতকে আল্লাহ তাঁর প্রতি আঘাত হিসেবে গ্রহণ করে নিজেই তার বদলা নেন। তিনি বলেন- ‘তার (হত্যাকান্ডের) পর তাদেরকে শায়েস্তা করার জন্য আসমান থেকে কোন বাহিনী পাঠাইনি, আর পাঠানোর প্রয়োজনও ছিল না। শুধুই একটা প্রচন্ড শব্দ, আর সবাই নিথর-নিস্তব্য হয়ে গেল।‘ আর আখেরাতের শাস্তি তো রয়েছেই। আল্লাহ বলেন-‘যারা ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয়, অত:পর তাওবা করে না; তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি।‘ অতীতকালে বিভিন্ন জনপদ আল্লাহ ধ্বংস করেছেন সেই জনপদসমূহের প্রতি রসূল প্রেরণের পর। রসূলকে যখন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে ও সীমালংঘন করা হয়েছে (রসূলদেরকে হত্যা পর্যন্ত করেছে) তখনই আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করেছেন। সকল বাধা-বিপত্তি ও জুলুম-নির্যাতনের মধ্যেও আল্লাহর একদল নিবেদিতপ্রাণ বান্দাহ তাঁর পথে মানুষকে ডাকা ও তাদেরকে পরিশুদ্ধ করার কাজ অব্যাহত রেখেছেন বিধায় আল্লাহ এ জনপদকে হেফাজত করছেন। ঈমানের উপর অবিচল থাকতে পারাটাও ঈমানদারদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার একটা রহমত। আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরনের গজব থেকে হেফাজত করুন। আমিন। ২৬/০৪/২০১৫


গণতন্ত্র কি অধরাই রয়ে যাবে?
গণতন্ত্র মানে জনগণের শাসন। জনগণের কাছে জবাবদিহিতা গণতন্ত্রের বড় বৈশিষ্ট্য। জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি কতটা পালন করেছে বা জনগণের কতটুক কল্যাণ করেছে বা ভবিষ্যতে করার পরিকল্পনা রয়েছে সে সম্পর্কে জনগণের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে জনগণের দ্বারে হাজির হওয়া মানে ভোটে অংশগ্রহণ করা। তাই গণতন্ত্রে ভোট অবশ্বম্ভাবী। সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ।  নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বা নির্বাচনে কারচুপি বা কোন কলা-কৌশলের মাধ্যমে বিজয়ী হলে সে সরকার অবশ্বম্ভাবী স্বৈরাচারী হয়ে পড়ে। গত ৫ই জানুয়ারি প্রকৃত অর্থে কোন নির্বাচন বা ভোটই হয়নি। ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হওয়া এবং বাকিরা সামান্য ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়ে আসাকে নির্বাচন বলে না। দেশে-বিদেশে সে নির্বাচনের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সে সময় বলেছিলেন যে, এ নির্বাচন নিয়ম রক্ষার নির্বাচন এবং শীঘ্রই সকলের অংশগ্রহণমূলক একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর তিনি সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচনের লক্ষ্যে বিরোধী দল দীর্ঘ একটি বছর (এর পেছনে কূটনীতিকদের ভূমিকা রয়েছে) অপেক্ষা করার পর গত ৫ই জানুয়ারি ২০১৫ নতুন করে আন্দোলন শুরু করে। রাজনীতিক এ সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে না যেয়ে সরকার শক্তি প্রয়োগ করে সমাধান করতে গেলে দেশে লাগাতার অবরোধ-হরতাল শুরু হয় এবং তাতে দেশে লোক ও সম্পদের বিপুল ক্ষতি সাধিত হয়। তার চেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে দেশে গণতন্ত্রের। সরকার এ আন্দোলন-সংগ্রাম দমন করতে যেয়ে  আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় ক্যাডার দ্বারা ব্যাপকভাবে গুম-খুন-জেল-জুলুম শুরু করেন এবং তা অব্যাহত রয়েছে। দেশের কারাগারগুলোয় ঠাঁই নেই এবং দেশে এক চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য-চাকুরি হারিয়ে অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ অবস্থা কারো জন্য সুখকর নয়। একটি সরকারের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো দেশের জনগণের নিরাপত্তা বিধান। মানুষ তার বাসা বাড়ীতে নিরাপদে অবস্থান করবে, চাকুরী ও ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন করবে এটাই নিয়ম এবং তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু সে দায়িত্ব পালনের প্রতি সরকারের কোন মনযোগ নেই। এই শ্বাসরুদ্ধকার অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্র এবং দেশের সুশীল সমাজের একটি অংশ সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপের জন্য বারবার আহবান জানানোর পরও সরকার তাতে রাজী হননি। আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে জনগণকে সরিয়ে আনার কৌশল হিসেবে সরকার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। ইতোপূর্বে ৫টা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় সরকার ঢাকায় আর নির্বাচন দিতে সাহস করেনি। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের অনুপস্থিতিতে সরকার ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চাইলেও এখন আর সম্ভব হয়ে উঠছে না। গতকাল  চ্যানেল আই-এর মধ্যরাতের জনপ্রিয় টকশো তৃতীয় মাত্রার ভোটে তাবিথ আউয়াল জয়ী হন। তাবিথ আউয়াল পান ৬৩ ভোট ও আনিসুল হক পান ৩৬ ভোট। এক জন ভোটার দু’জনের কাউকেই সমর্থন করেননি। চ্যানেল আই আওয়ামী ঘরণার টিভি। মূলত সারা দেশের চিত্রটা এমনই। সীমাহীন জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রায় প্রদানের জন্য জনগণ মুখিয়ে আছেন। কিন্তু সে সুযোগ কি জনগণ পাবে? বাংলাদেশে ভোট মানেই একটা উৎসব। কিন্তু সেই উৎসবমুখর পরিবেশ আর নেঈ। লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ডের পরিবর্কে এক তরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বিরোধী দলের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, কর্মীদের আটক ও হুমকী-ধমকীর কারণে ব্যাপক ভোট কারচুপির সম্ভাবনা রয়েছে। সেনাবাহিনী নামানো হলে জনগণের মধ্যে সাহস সঞ্চার হত। নির্বাচন কমিশন প্রথমে ঘোষণা দিয়েও চাপে পড়ে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন। এখন সাধারণ মানুষের জিজ্ঞাসা আদৌ কি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে? সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন এখন বেপরোয়া। আজকের নিউজ-নারায়নগঞ্জে থানায় ঢুকে পুলিশ কর্মকর্তাকে পেটানো এবং জবিতে শিক্ষিকাকে লাঞ্চিত ও লাঞ্চণাকারী ক্যাডারকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া। যত স্তরের নিরাপত্তাই দেয়া হোক এরা গেলে প্রতিরোধ করার মত নৈতিক বল র‌্যাব-পুলিশের নেই এবং তাতে তাদের সমূহ বিপদ রয়েছে। তারা বড় পারঙ্গম বিরোধী দল ঠেঙানেয়। বর্ষবরণে নারীর শ্লীলতাহানি ও বই মেলায় অভিজিতকে হত্যা কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই ঘটেছে। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার গাড়ীবহরে হামলা ও মাননীয় মন্ত্রীর উক্তি-‘নির্বাচনে কিভাবে জয়ী হতে হয় আওয়ামী লীগ তা জানে’ স্পষ্টতই নির্বাচন  সুষ্ঠু না হওয়ারই ইংগীত প্রদান করছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতি একটি সুস্থধারায় আসার একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারতো। তাতে গণতন্ত্রেরই জয় হত এবং মানুষ হয়তো স্বস্তি পেত। আমাদের সকল সন্দেহ-ভয়ের অবসান হয়ে আগামীকালের নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হোক-সে প্রত্যাশায় রইলাম। ২৭/০৪/২০১৫






হতাশ দেশবাসী
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে রাজনৈতিক অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একটা উপায় হিসেবে দেখছিলেন বিদেশী কূটনীতিক ও দেশের সুশীল সমাজ। ৫ই জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর থেকে দেশের রাজনীতি সুস্থ ধারার পরিবর্তে হরতাল-অবরোধের মত সহিংস পথে অগ্রসর হয়। বিদেশী কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক নানা সংস্থা সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করলে বিএনপি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার দিকে চেয়ে একটি বছর তেমন কর্মসূচি না দিলেও ২০১৫ সনের ৫ই জানুয়ারি বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় একটি বড় ধরণের সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সরকার অনুমতি না দিয়ে সড়ক ও জলপথ অবরোধ করে তা ভন্ডুল করে দেয় এবং তখন থেকেই রাজনীতি সংঘাতপূর্ণ হয়ে পড়ে। লাগাতার অবরোধ ও হরতাল এবং সরকারের পক্ষ থেকে চরম দমন-পীড়নের ফলে জনজীবনে চরম বিপর্যয় নেমে আসে। বিরোধী দলের আন্দোলন থামানোর কৌশল হিসেবে সরকার হঠাৎ করে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ঘোষণা দেন। দেশের সুশীল সমাজ ও কূটনীতিকরা রাজনীতির অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনতে সক্ষম হন। বেগম খালেদা জিয়ার জামিন ও অফিস থেকে বাসায় ফেরৎ যাওয়া রাজনীতির অঙ্গনে ইতিবাচক হিসেবে সবাই দেখছিলেন। আসলে এ নির্বাচন ছিল সরকারের পক্ষ থেকে একটি দূরভিসন্ধিমূলক পদক্ষেপ। বিরোধী দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এবং সহজেই সরকার রাজধানী ও বাণিজ্যিক নগরী নিজেদের করায়ত্বে নিয়ে নিবেন। কিন্তু ২০ দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে সরকারের সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে যায়। তারপর নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া প্রচারণায় নামলে দ্রুত নির্বাচনী হাওয়া পাল্টে যায়। তখনই সরকার প্রমাদ গুণেন। নির্বাচন কমিশন সেনা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারের চাপে পড়ে পরক্ষণেই আবার মত পাল্টান। বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ীবহরে পরপর তিনদিন হামলা, মন্ত্রী মহোদয়ের স্পষ্ট উক্তি-‘নির্বাচনে কিভাবে জয়ী হতে হয় তা আওয়ামী লীগ জানে’ এবং সেনাবাহিনী না থাকাতে জনগণের মধ্যে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছিল। একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করতে নির্বাচন কমিশন প্রথম থেকেই ব্যর্থ হয়। বিরোধী দলের প্রতি পুলিশের ভূমিকা ছিল বড় আক্রমণাত্মক এবং পুলিশ আসামী ধরার একটি মোক্ষম সুযোগ হিসেবে এ নির্বাচনকে গ্রহণ করে। ফলে বিরোধী দল নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা চালাতে ব্যর্থ হয়। নির্বাচন এ দেশে একটা উৎসব ও বলা যায় একটা বিনোদনও। কিন্তু এবারে তা ছিল না। রাস্তাঘাট বা চলাফেরায় নির্বাচন বা বর্তমানে বর্জন কোন কিছুতে জনগণ মুখ খুলছে না। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা বাড়ীতেও অবস্থান করতে পারছিল না। একটা ভয় সব সময় কাজ করছিল। তারপরও বিরোধী দল ভেবেছিল ভোটের দিন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে মানুষ ভোট দিতে পারলে একটি নীরব বিপ্লব ঘটে যাবে। হ্যাঁ, তাই ঘটতো। কিন্তু ভোটের দিন কেন্দ্র ও আশে-পাশের রাস্তা-গলি ও কেন্দ্রের ভেতরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সরকারী দল নিয়ে নেন এবং বিরোধী দলের এজেন্টদের জোরপূর্বক বের করে দিয়ে এককভাবে অবস্থান করে ভোট ডাকাতি সম্পন্ন করে। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশও এজেন্ট ও কর্মীদেরকে আটক করে। পুলিশ ভোট কারচুপি ও অনিয়ম প্রতিহত না করে অনেকটা সহযোগীর ভূমিকা পালন করে। ফলে দুপুরের মধ্যেই বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে। আবারও প্রমাণ হলো দলীয় সরকারের অধীনে এ দেশে আর কোন নির্বাচন সম্ভব নয়।
এখন প্রশ্ন-দেশে কী হতে যাচ্ছে। আবার কি সেই হরতাল-অবরোধ, ভাংচুর ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড। দেশে যে সংকট তা একান্ত রাজনীতিক। এটা আইন-শৃঙ্খলাজনিত কোন সংকট নয়। এর থেকে উত্তরণের উপায় হলো আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতা। শক্তি প্রয়োগ করে বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করা কখনই সম্ভব নয়। যদিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বিরোধী দল আর মাজা সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না। ভোট ডাকাতি ও ভোট বর্জনের পরও বিরোধী দলের যে ভোটপ্রাপ্তি, তাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নয় কেবল ভোটের দিন জনগণ ভোটদানের সুযোগ পেলেই ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারতো। তাই গণতন্ত্র, দেশ ও আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ দেশের স্বার্থে অবশ্যই সরকার ও বিরোধী দলকে ছাড় দিয়ে হলেও একটি সমঝোতায় পৌঁছতেই হবে। রাত এখন গভীর, একটি সুন্দর সকালের প্রত্যাশায় আমরা জনগণ। ২৯/০৪/২০১৫


Comments