ফেরাউন ছিল একজন স্বৈরশাসক। বনী ইসরাঈলকে সে দাসে পরিণত
করে রেখেছিল। সীমাহীন জুলুম-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে একটি জাতিকে ধ্বংস করে দিতে
চেয়েছিল। তার ক্ষমতা নিষ্কন্টক করার জন্য বনী ইসরাঈলের পুত্র সন্তানদেরকে সে হত্যা
করছিল। এ রকম একটি পরিবেশে মুসা (আ.)-এর জন্ম হয় এবং আল্লাহ তাঁকে ফেরাউনের ঘরেই
লালন-পালন এবং সেখানে তাঁর মায়ের দুধ পানেরও ব্যবস্থা করেছিলেন। এ সবই
আল্লাহতায়ালার কুদরত। এক পর্যায়ে আল্লাহ মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের কাছে দাওয়াত নিয়ে যেতে বলেন। মুসা (আ.) অতীতের কিছু
ঘটনার জন্য তার কাছে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন এবং তাঁর ভাই হারুনকে সাথে নেয়ার অনুমতি
চান। আল্লাহতায়ালাকে একমাত্র রব ও ইলাহ হিসেবে মেনে নেয়ার জন্য ফেরাউনকে দাওয়াত
প্রদান করলে জবাবে ফেরাউন বলে-’তুমি যদি
আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে মা’বুদ বলে মেনে
নাও, তাহলে কারাগারে যারা পচে মরছে তোমাকেও তাদের দলে ভিড়িয়ে
দেবো।‘
মুসা (আ.) বলেন-‘আমি যদি তোমার সামনে একটি সুস্পষ্ট জিনিস আনি তবুও।‘ ফেরাউন বলে-‘বেশ, আনো যদি তুমি সত্যবাদী
হও।‘ এ কথার প্রেক্ষিতে মুসা (আ.) তাঁর হাতের লাঠিটা নিক্ষেপ
করলে সেটা একটি অজগর হয়ে পড়ে এবং হাত বগলের মধ্য থেকে বের করে আনলে তা চকমক করে
উঠে। এ সব নিদর্শনাবলী দেখে ঈমান না এনে সে এটাকে বড় ধরনের যাদু বলে এবং সব
যাদুকরদের একত্র করে তা মোকাবেলা করার জন্য মুসা (আ.)-কে চ্যালেঞ্জ করে। তারপর
একদিন বিশাল ময়দানে এক বড় জনসমাবেশে মুসা (আ.)-এর সামনে যাদুকরদের উপস্থিত করা হয়।
যাদুকররা ফেরাউনকে বলে-‘আমরা কী
পুরস্কার পাব যদি আমরা বিজয়ী হই।‘ যাদুকররা বড়
আত্মবিশ্বাসী ছিল। মুসা (আ.) যাদুকরদের বলেন-তোমাদের যা কিছু আছে তা নিক্ষেপ করো।
যাদুকরদের দড়ি, লাঠিসোটা যা ছিল তা
তারা নিক্ষেপ করে এবং মুসা (আ.) তাঁর লাঠিটা ছেড়ে দিলে মুহূর্তেই তা সব গ্রাস করে
ফেলে। সাথে সাথে সব যাদুকররা সেজদাবনত হয়ে বলে উঠে-‘মেনে নিলাম আমরা রব্বুল আলামীনকে-মুসা ও হারুনের রবকে।‘
এ ঘটনার পর ফেরাউন বলে-‘আমি অনুমতি দেয়ার আগেই তোমরা মুসার কথা মেনে নিলে। নিশ্চয়ই এই ব্যক্তি
তোমাদের প্রধান, সে তোমাদের যাদু
শিখিয়েছে। বেশ, এখনই তোমরা জানবে। আমি
তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলবো এবং সবাইকে শুলবিদ্ধ করবো।‘
তারা জবাব দিলো-‘কোন পরোয়া নেই, আমরা তো নিজেদের রবের
কাছেই পৌঁছে যাবো। আর আমরা আশা করি, আমাদের রব
আমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন, কেননা সবার
আগে আমরা ঈমান এনেছি।‘ সূরা আশ শূয়ারা ২-৩
রুকু থেকে।
এখানে আল্লাহতায়ালা তাঁর এক মহান নবী মুসা (আ.)-কে
মুখোমুখি করেছেন এক বড় জালেম ও স্বৈরশাসক ফেরাউনের। মুসা (আ.) ও হারুন (আ.)
নিশ্চয়ই কোন সন্ত্রাসী বা জঙ্গী ছিলেন না বা যুদ্ধাপরাধেরও কোন অভিযোগ তাঁদের
বিরুদ্ধে ছিল না। আল্লাহর নির্দেশক্রমে দু’ভাই ফেরাউনের কাছে যান আল্লাহকে ইলাহ (কালেমা তাইয়্যেবার দাওয়াত) হিসেবে
মেনে নেয়ার দাওয়াত নিয়ে। জবাবে তাঁদেরকে জেলে পচানোর ভয় দেখানো হয়। আর বলা হয় এ
সবই যাদু। যাদুকরদের কাছে সত্য যখন স্পষ্ট হয়ে গেল, কোন ভয়-ভীতি ছাড়াই তারা তাৎক্ষণিক ঈমান আনলেন জীবনের কোন পরোয়া না করেই।
সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম ও তাঁদের অনুসারীদের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে আজও তাঁদের
উত্তরসূরীদের সাথে হুবুহু তাই করা হচ্ছে।
সত্য-মিথ্যার এ দ্বন্দ্ব চিরন্তন। ভয়-ভীতি, লোভ-লালসা কোন কিছুই সত্য পথ থেকে ঈমানদারদেরকে টলাতে পারেনি। ৩০/০৩/২০১৫
Comments
Post a Comment