Skip to main content

হাজি কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে আলোচনা সভা

ভেড়ামারা জামে মসজিদের দোতলায় উপজেলা হাজি কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আলহাজ মো. আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সম্পাদক হাফেজ মো. খাদেমুল ইসলামের সঞ্চালনায় এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দুই শতাধিক হাজি সাহেবদের উপস্থিতিতে আলোচনা করেন ভেড়ামারা জামে মসজিদের সম্মানিত খতিব ও দারুসসালাম জামে মসজিদের সম্মানিত খতিব, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। 

বাহাদুরপুর ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আলোচনা করেন আলহাজ মো. আবু বকর ও আলহাজ শামীম আহমদ। আরো উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়নের সভাপতি আলহাজ মোক্তার হোসেন বিশ্বাস, আলহাজ আজিজুল হক ও ডা. মীর আবু সাঈদসহ ১০/১২ জন। আমাকেও কিছু বলার সুযোগ দেয়া হয়। আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি সভাপতি ও সম্পাদক মহোদয়কে। আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ছিল নিম্নরূপ। 

স্থায়ী একটি অফিস গড়ে তোলা প্রসঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা বলে মসজিদ, মাদ্রাসা ও কোনো দীনি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করলে অল্প দিনেই তা বাস্তবে রূপ লাভ করে। তার কারণ, এসব দীনি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং এতে থাকে আল্লাহপাকের মদদ। আমার বন্ধু আবু বকর যে প্রস্তাব রাখলেন মজবুত ভিত্তির ওপর বহুতল ভবন নির্মাণের আমিও তার সাথে একমত পোষণ করছি। 

ইসলামের মৌলিক ইবাদতসমূহের মধ্যে নামাজ ও রোজা ধনী-দরিদ্র সকল নর ও নারীর ওপর ফরজ। জাকাত সাহেবে নেসাব (সচ্ছল) সকলের জন্য বছরে একবার ফরজ। বালেগ হলেই নামাজ ও রোজা পালন করতে হয়। সাহেবে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে জাকাত ফরজ হয়। আর কাবা পর্যন্ত সফর, পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা ও সুস্থতা থাকলে হজ ফরজ হয়। অবশ্য হজ জীবনে একবারের জন্য ফরজ। সারা জীবন যে কোনো সময় হজ পালন করলে ফরজ আদায় হয়ে যায়। তবে অনেক ইমামের মতে সামর্থ্য হলেই হজ পালন করা উচিত। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমাদের কেউ হজের নিয়ত করলে বিলম্ব করা ঠিক নয়, কারণ কারো বাহন হারিয়ে যেতে পারে বা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে বা নানা কাজে ব্যস্ততা দেখা দিতে পারে। আমাদের সমাজে ব্যবসা, চাকরি বা সব ব্যস্ততা থেকে অবসর গ্রহণের পর হজ পালন করা হয়। ভাবটা এমন যেন ব্যবসা বা চাকরিতে অনেক অন্যায় হয়ে যায়, তাই হজ করার এখনো সময় হয়নি। অথচ হজ মানুষকে পরিশুদ্ধ করে। ইমাম আবু হানিফা রহ. হজ পালনের পরে বলেছেন, এটিই সেরা ইবাদত। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, হজ মানুষকে সদ্যজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ করে দেয়। হজে মাবরুরের (কবুল) বিনিময় জান্নাত। তিনি আরো বলেছেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে হজ পালন না করে তার মৃত্যু ইহুদি না নাসারা হয়ে হলো সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। 

আল্লাহপাক পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁর বাছাইকৃত  বান্দাদের তাওহিদের কেন্দ্র কাবা ঘরে নিয়ে আসেন। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা হচ্ছে তাওয়াফ ও আরাফায় একত্রিত হওয়া। সাতবার তাওয়াফের মধ্য দিয়ে সকল প্রকার শিরক অস্বীকার করে একজন হাজি মূলত এই ঘোষণাই দান করে যে আমার জীবন হবে কাবাকেন্দ্রিক (আল্লাহকেন্দ্রিক) অর্থাৎ আল্লাহ যা হালাল করেছেন সেটিকে হালাল এবং যেটিকে হারাম করেছেন সেটিকে হারাম জেনে আমল করা। তাই অল্প বয়সে হজ সম্পন্ন করলে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ উপকৃত হয়। আমরা হাজি কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে সামর্থ্য হওয়ার সাথে সাথে হজ পালনের জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারি। সেমিনার/আলোচনা সভা করা যেতে পারে। 

অনেকে বলেছেন, আমরা হাজি কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে সমাজের কল্যাণ করবো। হ্যাঁ, সেই সাথে আমরা নিজেদেরও কল্যাণ করবো। যেমন, আমরা করে থাকি- জানাযায় শরীক হওয়া, অসুস্থ হলে দেখাসাক্ষাৎ করা, দোয়া করা ইত্যাদি। আমাদের মধ্যে কেউ মারাত্মক অসুস্থ হলে যেটা তার পক্ষে সম্ভব নয় সেখানে আমরা সহায়তা করতে পারি। আর সর্বোপরি আমাদের সৃষ্টিই করা হয়েছে মানবজাতির কল্যাণ সাধনের জন্য। মন চাইলেও একাকী কিছু করা সম্ভব নয়, কিন্তু একটি সংগঠন অনেক কিছু পারে। 

আমাদের সভাপতি মহোদয় বলেছেন, হাজি কল্যাণ পরিষদ একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এখানে সব দলের লোক রয়েছে। আমরা যে দলেরই হই না কেন এখানে আমাদের পরিচয় হবে আমরা আরাফাতি ভাই- বোন। আমাদের উদার হতে হবে। হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করতে হবে। হিংসা শুধু কবিরা গুনাহ নয়, হিংসা মানুষের নেক আমল ধ্বংসকারী কঠিন অপরাধ। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, আগুন যেমন শুকনা কাঠকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয় তেমনি হিংসা মানুষের সকল নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। সমাজে মারামারি, গুম- খুন ও গিবতের মূল কারণ হিংসা। শবে কদরসহ বিশেষ বিশেষ রাতে আল্লাহপাক তাঁর অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করেন এবং এই সাধারণ ক্ষমা থেকে বাদ পড়ে সেই হতভাগা যে শিরক করে ও হিংসা করে। হিংসুক আল্লাহর কাছে খুবই ঘৃণিত এবং সুরা ফালাকে আল্লাহ হিংসুকের অনিষ্ট থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে বলেছেন। তাই হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হয়ে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। উদারতা ও ক্ষমাশীলতার কোনো বিকল্প নেই। যার অন্তরে হিংসা আছে সে হয় খুবই সংকীর্ণমনা। সে ক্ষমা করতে জানে না, সে শুধু দোষত্রুটি তালাশ করে।

আল্লাহপাক এই সংগঠনের মধ্য দিয়ে পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য জাগ্রত করুন এবং তাঁর বান্দাদের কল্যাণে ভূমিকা রাখার তৌফিক দান করুন। 

সম্পাদক আলহাজ হাফেজ মাওলানা খাদেমুল ইসলাম প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আ স ম আব্দুল কুদ্দুসের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন ও তাঁর মাগফেরাত কামনা করেন এবং অফিস নির্মাণে তিনি আন্তরিকভাবে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

সভাপতি আলহাজ মো. আমিরুল ইসলাম ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে এ পর্যন্ত আসার ইতিহাস বিশেষ করে অফিসের জায়গা প্রদানের বিষয়ে অনেকের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে সবার জন্য দোয়া করেন। হাজি সাহেবরা সবাই বয়স্ক মানুষ। কষ্ট করে আজকের সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

Comments