জুমার খুতবা
০২.১২.২০২২
আজ রূপনগর ৭ নং রোড জামে মসজিদে জুমার খুতবায় খতিব মাওলানা মো. মজিবুর রহমান আল্লাহর হামদ ও রসুল সা.-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশের পর সুরা জুমার দুটি আয়াত তেলাওয়াত করে বলেন, সালাত সর্বোত্তম জিকির এবং আল্লাহর ফরজ ইবাদত হিসেবে প্রস্তুতির লক্ষ্যে জুমার আজানের সাথে সাথে সবধরনের কর্মকাণ্ড হতে নিজেকে পৃথক করে ফেলতে হবে। আল্লাহর বাণী, ‘হে ইমানদার লোকেরা! জুমাবারে যখন তোমাদেরকে সালাতের জন্য আহবান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর জিকিরের (সালাতের) দিকে দৌড়াও এবং স্থগিত রাখো ব্যবসায়িক কার্যক্রম। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে। তারপর সালাত শেষ হলে তোমরা ছড়িয়ে পড়ো জমিনে এবং সন্ধান করো আল্লাহর অনুগ্রহ, আর বেশি বেশি স্মরণ করো আল্লাহকে, অবশ্যই সফলকাম হবে তোমরা’- সুরা জুমা ৯-১০।
খতিব মহোদয় বলেন, জুমার দিনে প্রধান আমল হলো জুমার খুতবা শ্রবণ ও সালাত আদায়। প্রয়োজন ছিল আজান হওয়ার পর তাৎক্ষণিক দোকানপাট ও ব্যবসা- বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়ে সকাল সকাল মসজিদে হাজির হওয়া। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আজান শোনার পরও মানুষ অপেক্ষা করে শেষ মুহূর্তে মসজিদে উপস্থিত হয়। অথচ রসুলুল্লাহ সা. মসজিদে প্রথমে হাজির হওয়া এবং প্রথম কাতারে আসন গ্রহণের অনেক ফজিলতের কথা বলেছেন। (খতিব মহোদয় ১২-৪০ মি. খুতবা প্রদানের সময় মাত্র এক কাতার মুসল্লি উপস্থিত ছিল অথচ ফরজ নামাজের সময় মসজিদ পূর্ণ হয়ে রাস্তায় মুসল্লি ছিল)। জিকির বলতে খুতবা এবং খুতবা ও সালাত দুটোকেই বোঝায়। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, মুসল্লিদের আগমনের ক্রমানুসারে ফেরেশতারা সওয়াব লিখতে থাকেন এবং খতিব মহোদয় খুতবা দান উদ্দেশ্যে মিম্বরে আরোহনের সাথে সাথে ফেরেশতারা সওয়াব লেখা বন্ধ করে খুতবা শুনতে থাকেন। খতিব মহোদয় তাঁর মুসল্লিদের জুমার গুরুত্ব উপলব্ধি করে সকাল করে আসার জন্য আহবান জানান।
জিকিরের দিকে দৌড়াও অর্থ খুতবা ও সালাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে মসজিদে চলে আসো। বাস্তবিক অর্থে দৌড়ায়ে আসতে হবে এমন নয় বরং মসজিদে আসার ক্ষেত্রে তৎপর হতে হবে। হাদিছে বলা হয়েছে, নামাজ শুরু হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবে নামাজে শরিক হতে হবে এবং যতটুকু বাদ পড়ে ততটুকু একাকী আদায় করে নিতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য স্থগিত রাখো বলতে শুধু দোকানপাট ও বাজারঘাট বন্ধ নয় সকল কর্মতৎপরতা বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। এটা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ। জুমার দিনে আজানের পর খুতবা শ্রবণ ও নামাজ আদায় ছাড়া সকল কার্যক্রম হারাম। খতিব মহোদয় হাদিস উদ্ধৃত করে বলেন, সঙ্গত কারণ ছাড়া কোনো ব্যক্তি পরপর তিন জুমা ত্যাগ করলে আল্লাহপাক তার দিলে মোহর মেরে দেন। আবার এমনও বলা হয়েছে তার দিলকে মুনাফিকের দিল বানিয়ে দেন। জুমার নামাজে অবহেলা করলে রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তার নামাজ, জাকাত, রোজা, হজ এবং তার কোনো কাজ আর নেক কাজ থাকে না।
জুমার নামাজ শেষ হলে মানুষ জমিনে ছড়িয়ে পড়বে অর্থাৎ রিজিক অনুসন্ধানসহ নানাবিধ কর্মে নিয়োজিত হবে এবং সেসময়ে আল্লাহপাককে বেশি বেশি করে স্মরণ করার কথা বলেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি বা যা কিছুই করুক সেখানে যেন আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘিত না হয়। আল্লাহর নির্ধারিত সীমা রক্ষা করে চলাই মূলত আল্লাহর স্মরণ। ব্যবসায়ী হলে ওজনে কম বা ভেজাল না দেয়া এবং ধোকা-প্রতারণার আশ্রয় না নেয়া। নামাজে যেমন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় তেমনি কর্মজীবনে তাঁকে স্মরণে রেখে সকল নাফরমানি থেকে নিজেকে দূরে রাখার নামই যথার্থ জিকির। দুনিয়া কর্মক্ষেত্র এবং ফলভোগের জায়গা হলো আখেরাত। আল্লাহপাক আখেরাতে তাঁর বান্দাদের জন্য নেক আমলের প্রতিদান হিসেবে জান্নাত এবং বদ আমলের বিনিময়ে দেবেন জাহান্নাম। খতিব মহোদয় আল্লাহকে ভয় করে বদ আমল পরিহার করে সর্বদা নেক আমলের মাধ্যমে জীবনটা পরিচালনার জন্য তাঁর মুসল্লিদের প্রতি আহবান জানান। ঈষৎ পরিমার্জিত।
Comments
Post a Comment