Skip to main content

কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকার মধ্যে রয়েছে রমজানের প্রস্তুতি

 জুমার খুতবা

১১.০৩.২০২২



বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

মাল্টিপ্ল্যান রেডক্রিসেন্ট সিটি (কুশিয়ারা, পদ্মা ও সুরমা ভবন), মিরপুর জামে মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ সাইয়াফ শুরুতে আল্লাহপাকের হামদ ও রসুল সা.-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করেন। তিনি প্রথমেই সুরা আলে ইমরানের ১৩৩-১৩৪ আয়াত অর্থসহ তেলাওয়াত করেন (দৌড়ে চলো তোমাদের রবের ক্ষমার দিকে এবং সেই পথে যা পৃথিবী ও আকাশের সমান প্রশস্ত জান্নাতের দিকে চলে গেছে, যা এমন সব মুত্তাকি লোকদের জন্য যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষ-ত্রুটি মাফ করে দেয়। এ ধরনের সৎ লোকদের (মুহসিন) আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন।

আজ ৭ শাবান এবং পরবর্তী মাস মহা সম্মানিত ও বরকতময় রমজান। এই পবিত্র মাসের আগমন উপলক্ষ্যে রসুলুল্লাহ সা. ও সাহাবায়ে কেরাম রা. পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। সাহাবায়ে কেরাম ও বুজুর্গানে দ্বীন ছয় মাস থেকে রমজান মাস পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। রজব মাস শুরু হলেই রসুলুল্লাহ সা. দোয়া করতেন এই বলে, হে আল্লাহ! তুমি রজব ও শাবান মাসের পুরপূর্ণ বরকত আমাকে দান করো এবং রমজান পর্যন্ত আমাকে পৌঁছে দাও। মা আয়েশা রা. বলেন, শাবান মাস আসলে রসুলুল্লাহ সা. এতো অধিক পরিমাণ রোজা রাখতেন যা অন্য কোনো সময়ে রাখতেন না, ২/১ দিন বাদে প্রায় পূর্ণ মাস রোজা পালন করতেন। আল্লাহপাক প্রত্যেক ওয়াক্তে নির্দিষ্ট রাকাতসহ নামাজ ফরজ করেছেন এবং সেসব নামাজের পূর্ণ হেফাজতের জন্য রসুলুল্লাহ সা. আগে পিছে নফল নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন। ঠিক তেমনিভাবে রমজানের ফরজ রোজা হেফাজতের জন্য তিনি শাবান মাসে অধিক পরিমাণ রোজা রেখেছেন এবং শাওয়াল মাসের শুরুতে ৬টা রোজা পালন করেছেন। আল্লাহপাক প্রতিটি আমলের সওয়াব কমপক্ষে দশগুণ বৃদ্ধি করে দেন। সেই হিসেবে রমজান মাসের পরিবর্তে দশ মাস এবং শাওয়ালের ৬টির পরিবর্তে ৬০দিন অর্থাৎ পুরো বছরই রোজা পালন করা হয়। তিনি তাঁর মুসল্লিদের শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা পালনের কথা বলেন। বিশেষ করে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার এবং আইয়ামে বিজ (চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ) রোজা রাখার জন্য আহবান জানান।

মানুষের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের জন্য নেয়ামত হিসেবে রমজান মাস দান করেছেন। হাদিস উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল অথচ গুনাহ মাফ করে নিতে পারলো না সে যেন ধ্বংস হয়’- রসুলুল্লাহ সা. ও বাণীবাহক ফেরেশতা জিবরাইল আ. এমন ব্যক্তির প্রতি অভিশাপ প্রদান করেছেন ও ধ্বংস কামনা করেছেন। তাই আমাদের সবারই উচিত রমজানকে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকে গুনাহ থেকে মুক্ত করে নেয়া। খতিব মহোদয় বলেন, নামাজের যেমন শর্ত রয়েছে তেমনি রমজানের রোজা কবুল হওয়ার জন্যও কিছু শর্ত রয়েছে। অজু এবং কেরায়াত নামাজের শর্ত আর রমজানের শর্ত হলো কবিরা গুনাহ থেকে নিজেকে দূরে রাখা। কবিরা গুনাহ থেকে মুক্ত হতে না পারলে রমজানের সওয়াব অর্জন সম্ভব নয়। অনেক নফল ইবাদত-বন্দেগি রয়েছে- যেমন তাহাজ্জুদ, জিকির-আজগার, দান-খয়রাত কিন্তু সাথে রয়েছে সুদ, ঘুষ, ভেজাল প্রদান, মানুষকে কষ্টদানের মতো গুনাহ। এমতাবস্থায় এতো আমল কোনো কাজেই লাগবে না। নাজাতের জন্য বেশি বেশি আমল প্রয়োজন নয়, কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং ফরজ-ওয়াজিব পালনের মাধ্যমে জান্নাত পাওয়া সম্ভব।

শাবান মাসকে রসুলুল্লাহ সা. ও সাহাবায়ে কেরাম রা. রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে বেশি বেশি করে রোজা রাখতেন, নফল নামাজ ও দান-সাদাকা করতেন অথচ আমরা রমজানে দ্রব্যের দাম বাড়বে মনে করে বেশি বেশি করে মজুদ করে থাকি। বেশি বেশি ক্রয়ের কারণে বাজারে দ্রব্যের দাম বেড়ে যায় এবং তাতে মানুষের কষ্ট বাড়ে। অবশ্য কেউ যদি মনে করে রমজান মাসে বাজারে গেলে নিজের দৃষ্টিকে হেফাজত করা যাবে না এবং ইবাদত-বন্দেগি ব্যাহত হবে, তবে তার বিষয়টি স্বতন্ত্র। খতিব মহোদয় প্রস্তুতি হিসেবে বলেন, আমরা এতদিন একরকম চলে আসছি, এখন রমজানের পুরো ফায়দা অর্থাৎ গুনাহ থেকে পবিত্র হওয়ার লক্ষ্যে আমাদের উচিত সুদ, ঘুষ ও হারাম কাজের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকলে তওবা করে নিজেকে সংশোধন করে নেয়া। যাদের দাঁড়ি কাটার অভ্যাস রয়েছে তাদের উচিত রমজানকে সামনে করে দাঁড়ি রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া। খতিব মহোদয় হাদিস উদ্ধৃত করে বলেন, যেসব আমল মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে তন্মধ্যে টাকনুর নিচে পোশাক পরা অন্যতম। টাকনুর নিচে পোশাক না পরার জন্য তিনি তাঁর মুসল্লিদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেন।

খতিব মহোদয় বলেন, দুনিয়ার জীবনটা খেল-তামাশা মাত্র। আমাদের মধ্য থেকে কতজনই না হারিয়ে গেল। তাদের অর্থবৃত্ত কোনো কাজেই আসলো না। খালি হাতে বিদায় গ্রহণ করলো। আমাদের জীবনটাও বড় অনিশ্চিত। আল্লাহর ক্ষমা দুনিয়া থেকেই লাভ করা সম্ভব। তিনি কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন, দৌড়ে চলো তোমাদের রবের ক্ষমার দিকে এবং আসমান ও জমিনের সমান প্রশস্ত জান্নাতের দিকে। এই জান্নাত প্রস্তুত রয়েছে মুত্তাকিদের জন্য। কুরআন মজিদে মুত্তাকিদের নানা চরিত্রবৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে। যার অঢেল সম্পদ রয়েছে সে বেশি বেশি দান করবে এবং যে হতদরিদ্র সে তার সামান্য উপার্জন থেকেই ব্যয় করবে। গরীবের এক টাকা এবং ধনির লক্ষ টাকা ব্যয়ের সমান। মুত্তাকির আরো যে সব গুণ এখানে উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো সে বদমেজাজী নয়। ক্রোধ হলে সে তা দমন করে এবং অপরের দোষ-ত্রুটি সহজেই ক্ষমা করে দেয়। এমন গুণবৈশিষ্টের অধিকারী ব্যক্তিকে আল্লাহপাক মুহসিন বান্দা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

খতিব মহোদয় আল্লাহপাকের দরবারে তাঁর মুসল্লিদের গুনাহ থেকে তওবা এবং রমজানের পুরো হক আদায় করার তৌফিক কামনা করেন।

Comments