আজ কাঁঠালবাগ জামে মসজিদে জু'মার খুতবায়
সম্মানিত খতিব আলহাজ্ব মাওলানা মাহমুদুল হাসান আশরাফী শাওয়াল মাসের দ্বিতীয় জুমায়
আল্লাহর হামদ এবং রসুল (সা)-এর ওপর দরুদ ও সালাম পেশের পর সূরা আলে ইমরানের ১৩৩ নং
আয়াত (অর্থ-তোমরা প্রতিযোগিতা করো তোমাদের রবের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের
দিকে যার প্রশস্ততা আকাশসমূহ ও পৃথিবী সমান, এটি প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকিদের
জন্য)এবং সূরা আনকাবুত ৬৯ নং আয়াত (অর্থ-যারা আমার পথে জিহাদ করে, আমি অবশ্যই
তাদের আমার পথে পরিচালিত করি, নিঃসন্দেহে আল্লাহতায়ালা মুহসিন বান্দাদের সাথে
রয়েছেন’ তেলাওয়াত করেন ।
তিনি বলেন, রমযান মাস আমাদের মাঝে তাকওয়ার গুণ
সৃষ্টি করেছে এবং সেই রমযান আমাদের থেকে বিদায়ও গ্রহণ করেছে। কিন্তু রমযান মাসে
নেক আমলের যে অভ্যাস আমরা গ্রহণ করেছি তা অব্যাহত রাখতে হবে এবং সকল ধরনের নেক কাজ
ও আল্লাহর ক্ষমার জন্য আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হবে। আজ পৃথিবীতে নাম-যশ-খ্যাতি ও
নানাবিধ অন্যায় কাজে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের ওপর প্রাধান্য,
ব্যক্তি অপরকে প্রতিদ্বন্দী বিবেচনা করে তার ওপর প্রাধান্য বিস্তার, এক কোম্পানী
অপর কোম্পানীকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা, সুন্দরী প্রতিযোগিতাসহ নানাবিধ কতই না
প্রতিযোগিতা চলছে। কিন্তু আল্লাহর আহবান তাঁর ক্ষমালাভ বা নেক কাজে প্রতিযোগিতা
করার জন্য।
খতিব মহোদয় সাহাবায়ে কেরামদের (রা) উদাহরণ পেশ
করে বলেন, মুসলমানদের কাছে তাবুক যুদ্ধ ছিল বড় ধরনের পরীক্ষা। রাস্তার দূরত্ব,
ভীষণ গরম এবং বাগানে খেজুর উত্তোলনের সময় আসন্ন। এমনি এক নাজুক মুহূর্তে রসুল (সা)
সাহাবায়ে কেরামদের (রা) প্রতি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের আহবান জানান এবং তিনি
ঘোষণা দেন যে, যারা এই যুদ্ধে শরীক হবে তাদের জান্নাতে যাওয়ার জন্য তিনি জামিন্দার
হবেন। সাহাবায়ে কেরামদের (সা) মাঝে ত্যাগ স্বীকারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।
হযরত আবু বকর (রা)-এর মর্যাদা আল্লাহর রসুল (সা) ও সাহাবায়ে কেরামদের (রা) কাছে
ছিল সর্বোচ্চ। তাঁর নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও ত্যাগ ছিল অতুলনীয়। হযরত ওমর (রা) ভাবলেন
কখনই তো তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না, এবারে একটু দেখি। তাই তিনি তাঁর সব সম্পদ
হিসেব করে অর্ধেক নিয়ে রসুল (সা)-এর দরবারে হাজির হন। রসুল (সা) ওমর (রা)-কে
জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাব দেন, ‘ইয়া
রসুলুল্লাহ (সা)! আমি আমার সকল সম্পদের অর্ধেক পরিবারের জন্য বাড়িতে রেখে এসেছি
এবং অর্ধেক আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা)-এর জন্য নিয়ে এসেছি’। আবু বকর (রা)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান,‘ইয়া রসুলুল্লাহ (সা)! আমি আমার সকল সম্পদ আল্লাহ
ও তাঁর রসুল (সা)-এর জন্য নিয়ে এসেছি এবং বাড়িতে রেখে এসেছি আল্লাহ ও তাঁর রসুল
(সা)-এর ভালোবাসা’।
ওমর (রা) আবু বকর (রা)-কে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘আপনি সবার সেরা, আজও
আপনাকে অতিক্রম করতে পারলাম না’।
রসুল (সা)-এর প্রতি মুহাব্বতের ক্ষেত্রে হযরত
আবু বকর (রা) ছিলেন অনন্য। রসুল (সা)-এর ইন্তেকালের খবরে সাহাবায়ে কেরাম (রা)
হতবিহবল হয়ে পড়েন। উন্মুক্ত তরবারি হাতে ওমর (রা) বলে উঠেন, যে বলবে রসুল (সা) আর
নেই, এই তরবারি দ্বারা মস্তক বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। হযরত আবু বকর (রা) সকল
মুহাব্বত বুকে চেপে রেখে সকলের উদ্দেশ্যে কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন, ‘মুহাম্মদ একজন রসুল বৈ আর কেউ নন, যদি তিনি মারা
যান বা নিহত হন তাহলে কি তোমরা উল্টা দিকে ফিরে যাবে’? তাঁর এই উচ্চারণে সবাই সম্বিত ফিরে পান। খতিব
মহোদয় বলেন, সাহাবায়ে কেরাম আমাদের জন্য উদাহরণ। তাই রমযান শেষ গেলেও মুত্তাকির
বৈশিষ্ট্য নিজেদের মধ্যে ধারণ করে আমরা নেক কাজে পরস্পর প্রতিযোগিতা করবো এবং একে
অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো। আল্লাহতায়ালা তাঁর মুত্তাকি বান্দার জন্য আকাশসমূহ
ও পৃথিবী সমান প্রশস্ত জান্নাত তৈরী করে রেখেছেন; সেটা লাভের জন্য সবার মাঝে
প্রতিযোগিতা থাকা দরকার।
খতিব মহোদয় সূরা আন কাবুতের শেষ আয়াত উদ্ধৃত করে
বলেন, আল্লাহর রাস্তায় চলতে গেলে বাধা-বিপত্তি আসবে এবং সে ক্ষেত্রে আল্লাহর
সহযোগিতাও পাওয়া যাবে। তিনি এ প্রসঙ্গে হযরত ইউসুফ (আ)-এর ঘটনা তুলে ধরেন। হযরত
ইউসুফ (আ) একজন টগবগে যুবক এবং জুলেখা ছিলেন মিশরের ফার্স্ট লেডি ও পরমা সুন্দরী।
বদ্ধ ঘরে জুলেখা ইউসুফ (আ)-কে কুকর্মে আহবান জানালে আল্লাহর ভয় ছাড়া তাঁর সম্মুখে
আর কোন বাধা ছিল না এবং সে সময়ে জুলেখার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিনি আল্লাহর
ওপর ভরসা করে দৌড় দেন ও দরজাসমূহ একে একে খুলে যায়। এমতাবস্থায় রক্ষা পাওয়াটা
আল্লাহপাকের অনুগ্রহেই কেবল সম্ভব। তাই আমাদের উচিৎ আল্লাহর ওপর ভরসা করে আমাদের
এগিয়ে যাওয়া এবং পথ দেখানোর দায়িত্ব তাঁর। আল্লাহর ওপর ভরসাকারী মুহসিন বান্দাদের
সাথে তিনি রয়েছেন বলে জানিয়েও দিয়েছেন। তাই ভয়-শঙ্কা সবকিছু উপেক্ষা করে আল্লাহর
পথে অবিচল থেকে তাঁর পথে প্রচেষ্টা চালানো বান্দাহ হিসেবে আমাদের কর্তব্য।
যিনা-ব্যাভিচার প্রসঙ্গে বলেন, আল্লাহর বক্তব্য
যিনা-ব্যাভিচারের ধারে কাছেও যেও না। পর্দা যিনা-ব্যাভিচার থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি
উপায়। সমাজে পর্দাহীনতা প্রসারের লক্ষ্যে একদল ব্যক্তি বিশেষ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
সমাজে নগ্নতা-বেহায়াপনার সয়লাব বয়ে চলেছে। এ অবস্থায় সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তির
পক্ষ থেকে পর্দা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য পর্দার বিপক্ষে যাদের অবস্থান তাদের উৎসাহ
বেড়ে যাবে।পর্দাসহ ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলার জন্য তিনি সবার প্রতি আহবান জানান
।
আজ শাওয়াল মাসের দ্বিতীয় জুমা এবং এ মাসে ৬টি
নফল নামাযের অনেক ফজিলত উল্লেখ করে তা আদায়ের জন্য তিনি আল্লাহর তাওফিক কামনা
করেন। সংক্ষেপিত।
শ্রুতিলিখনে- প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী,
উপাধ্যক্ষ (অব), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ।
Comments
Post a Comment