বিসমিল্লাহির রহমানির
রহীম
বৃষ্টির কারণে এবারের
ঈদুল ফিতর মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। নামাযের পূর্বে সমবেত মুছল্লীদের ঈদগাহ ও মসজিদ
কমিটির পক্ষ থেকে ঈদশুভেচ্ছা-'ঈদ মুবারক' জানিয়ে আমার পক্ষ থেকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য
রাখা হয়।
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম
সাধনার পর আজকের এই ঈদ। মুসলমানদের জীবনে দু'টি আনন্দোৎসব- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা।
আজকের ঈদ হলো রোযা ভাঙ্গার আনন্দ, গুনাহমাফের আনন্দ। রোযার উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া
অর্জন। অর্থাৎ সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করে চলা। রোযার দিনে পানাহার থেকে বিরত
থাকা এ কারণেই যে, আল্লাহ রোযাবস্থায় পানাহার নিষিদ্ধ করেছেন। দীর্ঘ এক মাসের
প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হলো মানুষ যেন আল্লাহর সকল নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকে।
প্রসঙ্গক্রমে ফেসবুকের একটি লেখা আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
এক কোরিয়ান এক
মুসলমানকে বলে, 'তোমরা রোযার দিনে কি কিছুই খাও না? এক গ্লাস পানি বা একটি
সিগারেটও না বা গোপনেও কিছু খাও না? জবাবে মুসলমান বলে, 'আমরা কিছুই খাই না এবং
গোপনে খাই না এ কারণে যে আল্লাহ দেখেন।' কোরিয়ান বিস্মিত হয়ে বলে, 'তাহলে তো
তোমাদের দেশে কোন অন্যায় হয় না এবং নিশ্চয়ই তোমাদের দেশে কোন পুলিশ নেই'।
কোরিয়ানের ধারণা মতো
এমন একজন মানুষ তৈরী করাই রোযার উদ্দেশ্য অর্থাৎ যার দ্বারা গোপনে ও প্রকাশ্যে কোন
অন্যায় হওয়া আদৌ সম্ভব নয়।
কিন্তু বাস্তব অবস্থা
সম্পূর্ণ ভিন্ন। এমন কোন অন্যায়-অপকর্ম নেই যা আমরা না করি। আমাদের আচার-আচরণ ও
লেন-দেন দেখে বিধর্মীরা লজ্জা পায়। ঘুষ আমাদের দেশে এক সাধারণ ব্যাপার হয়ে পড়েছে।
অথচ রসুল (সা) বলেছেন, 'ঘুষ দানকারী ও গ্রহণকারী উভয়ই দোযখী।' আমরা সীমাহীন
দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছি। অথচ আমরা নামায পড়ি ও রোযা রাখি।
ঈদ এসেছে আমাদের মাঝে
ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা জাগ্রত করার জন্য। আজকের এ দিনে আমাদের একটিই পরিচয়, আমরা
মুসলমান ও পরস্পরের ভাই। আমাদের মাঝে কোন হিংসা-বিদ্বেষ নেই, কোন অকল্যাণ কামনাও
নেই। এর ব্যতিক্রম হলে সেটা হবে বড়ই দুর্ভাগ্যজনক। হিংসা-বিদ্বেষ নিয়ে কোন মানুষ
জান্নাতে যেতে পারবে না। রসুল (সা) বলেছেন, 'আগুন যেমন শুকনা কাঠকে দ্রুত নিঃশেষ
করে দেয়, তেমনি হিংসা মানুষের নেক আমল ধ্বংস করে দেয়'। আল্লাহর কাছে হিংসুক বড়
ঘৃণার পাত্র। তিনি সূরা ফালাকে আমাদের শিখেছেন-'হিংসুকের অনিষ্ট থেকে তাঁর কাছে
আশ্রয় প্রার্থনা করার'।
আমরা সবাই আল্লাহর
ক্ষমা প্রত্যাশী। ক্ষমা পাওয়ার সহজ উপায় হলো আল্লাহর বান্দাদের ক্ষমা করা। রসুল
(সা) বলেছেন, 'যে তার ভাই-এর অপরাধ ক্ষমা করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার অপরাধ
ক্ষমা করবেন'। আমরা চাই আল্লাহ আমাদের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখুন। তারও সহজ উপায় রসুল
(সা) বলে দিয়েছেন-'যে তার ভাই-এর ত্রুটি-বিচ্যুতি গোপন রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন
তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন'।
আল্লাহপাক তাঁর
বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। আমরা যারা এখানে উপস্থিত আছি তাদের
অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। আসুন, আমরা তাওবা করে পরিশুদ্ধ হয়ে যাই। শয়তান আমাদের
প্রকাশ্য শত্রু। সে আমাদের ধোকা দেয়। সে বলে ৪০ বছর নামায পড়োনি, কত অন্যায় করেছ
তাই ফিরে আসার কোন পথ নেই। বরং যে কয়টা দিন আছে ভোগ করে নাও। এ সবই ধোকা। বান্দাহ
যখন তাওবা করে তখন অতীতের ভুল-ত্রুটির জন্য আর শাস্তিযোগ্য থাকে না। তাই আমাদের
উচিৎ দ্রুত আল্লাহর কাছে ফিরে আসা।
আমাদের অনেকের বাবা-মা
জীবিত আছেন। তাঁরা আমাদের জান্নাত। তাঁদের সাথে সদাচরণের মাধ্যমে জান্নাতপ্রাপ্তি
আল্লাহ সহজ করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, তাঁরা বার্ধক্যে পৌঁছলে তাঁদের সাথে উহ্
শব্দটিও উচ্চারণ করো না। রসুল (সা) একদিন মিম্বরে আরোহন করেন আর আমিন আমিন বলেন।
সাহাবায়ে কেরাম আমিন আমিন বলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এইমাত্র জিবরাইল (আ)
বলে গেলেন, যে ব্যক্তি বৃদ্ধ পিতামাতাকে পেল অথচ তাদের খেদমত করে জান্নাতে যেতে
পারলো না সে যেন ধ্বংস হয়, আমি বললাম 'আমিন'। কপালপোড়া ওর ধ্বংস হওয়াই দরকার।
পিতামাতা মারা গেলে
তাদের জন্য দোয়া করার ভাষাও তিনি শিখিয়ে দিয়েছেন। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা
ইয়ানি ছগিরা। সন্তানের দোয়া কখনই ব্যর্থ হতে পারে না। মৃত্যুবার্ষিকী পালন নয়,
সার্বক্ষণিক পিতামাতার জন্য দোয়া করতে হবে।
আমি আপনাদের নামাযের
ব্যাপারে আন্তরিক হওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। নামায বেহেশতের চাবি। চাবি ছাড়া
যেমন ঘরে প্রবেশ করা যায় না তেমনি নামায ছাড়া জান্নাতে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
আপনারা জামায়াতের সাথে নামায পড়ার চেষ্টা করবেন। জামায়াতের সাথে নামায না পড়লে
নামাযে একাগ্রতা আসে না এবং নামাযে নিয়মিত হওয়া যায় না।
আল্লাহপাক আমাদের
নামায, রোযা ও সকল নেক আমল কবুল করে জান্নাতে যাওয়ার পথটি সহজ করে দিন। আমিন।
Comments
Post a Comment