১২/০৫/২০১৭ কাটাবন জামে মসজিদের সম্মানিত
খতিব মাওলানা আনম রফিকুর রহমান আল মাদানী রমযানের প্রাক্কালে সূরা বাকার ১৮৫ নং আয়াত
তেলাওয়াত ও সরল অর্থ পেশ করে জুমুয়ার খুতবা প্রদান করেন।
‘রমযান মাস, এ
মাসেই কুরআন নাজিল হয়েছে, যা মানব জাতির জন্য পুরোপুরি হেদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন
উপদেশাবলীতে পূর্ণ যা সত্য-সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট
করে দেয়। কাজেই এখন থেকে যারাই এ মাসের সম্মুখিন হবে তাদের একান্ত কর্তব্য পূর্ণ মাস
রোযা রাখা, তবে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা সফরে থাকে, তবে সে পরবর্তী সময়ে সেই সংখ্যা
পূরণ করে দেবে; (এ সুযোগ দিয়ে) আল্লাহতায়ালা তোমাদের জীবন আসান করে দিতে চান, আল্লাহতায়ালা
কখনই তোমাদের জীবন কঠোর করে দিতে চান না। আল্লাহর উদ্দেশ্য হচ্ছে, তোমরা যেন গুণে গুণে
রোযার সংখ্যাগুলো পূরণ করতে পারো, আল্লাহতায়ালা তোমাদের (কুরআনের মাধ্যমে জীবন যাপনের)
যে পদ্ধতি শিখিয়েছেন তার জন্যে তোমরা তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে পারো এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা
আদায় করতে পারো’-সূরা বাকারা ১৮৫।
তিনি বলেন যে, রমযান মাসের এত ফজিলত ও
গুরুত্বের পেছনে কারণ একটিই, আর তাহলো মানুষের হেদায়াতের জন্য আল্লাহপাক এ মাসেই কুরআন
নাজিল করেছেন। এ মাসেরই একটি মহিমান্বিত রজনী, যে রজনীতে কুরআন নাজিল হয়েছে লাইলাতুল
কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম ঘোষিত হয়েছে। রাতটির কোন বিশেষত্ব নেই, এটা কোন পূর্ণিমার
রাত নয়, নিকষ কালো আঁধারের রাত কিন্তু কুরআনের কারণে সে রাতটি হয়ে পড়েছে সর্বোত্তম
রাত, এক অতুলনীয় রাত। আর রমযানের একটি ফরজ ৭০টি ফরজের সমান এবং একটি নফল অন্য সময়ের
একটি ফরজের সমান হয়ে গেছে। সাধারণত রাসূল (সা.) আল্লাহর কাছে ধন-দৌলত এবং হায়াত বৃদ্ধি
চাইতেন না। কিন্তু রজব মাস এলে তিনি রমযান পর্যন্ত তাঁর হায়াত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহর
কাছে দরখাস্ত পেশ করতেন। তিনি বলতেন-‘আল্লাহুম্মা বারিক
লানা ফী রজব ওয়া শা’বান ওয়া বাল্লিগনা রামাযান’। হে আল্লাহ,
আমাদের জন্য রজব ও শা’বান মাসকে বরকতময়
করে দিন এবং আমাদেরকে রমযান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন। রমযানকে পাওয়ার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে পড়তেন এবং
রজব ও শাবান মাস থেকেই তিনি বেশি বেশি ইবাদৎ-বন্দেগীতে নিজেকে নিয়োজিত করে ফেলতেন।
মানুষের হেদায়াতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে
সর্বশেষ কিতাব হলো আল কুরআন এবং এই কুরআনই হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের জন্য
সর্বোত্তম দান ও অনুগ্রহ। কুরআন মজিদকে ধারণ করে আছে বলেই রমযানের এত মহাত্ম্য ও বরকত
এবং এ মাসে আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের প্রতি এত অনুগ্রহের দৃষ্টি দিয়ে থাকেন। আল্লাহ
তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করতে চান এবং ক্ষমা পাওয়ার বড় সুযোগ এই রমযান মাস। রমযান মাস
পেয়েও যে তার গুনাহ মাফ করে নিতে পারলো না রাসূল (সা.) তাকে হতভাগা বলেছেন। রমযানের
সাথে রয়েছে কুরআনের নিবিড় সম্পর্ক। কুরআন মুত্তাকীদের জন্য হেদায়াত, আর রমযানের সিয়াম-সাধনা
মানুষকে মুত্তাকী বানিয়ে দেয়। আল্লাহর বক্তব্যও তাই- ‘রোযা তোমাদের ওপর এ জন্যই ফরজ করা হয়েছে
যাতে তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি হয়’। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শুধু আল্লাহরই নির্দেশে
একজন রোযাদার হালাল জিনিস ভোগ-ব্যবহার থেকে বিরত থাকে, সে কী করে আল্লাহর হারাম জিনিসের
ধারে-কাছে যাবে। দীর্ঘমেয়াদী ট্রেনিং-এ আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর হুকুম পালনে অভ্যস্ত
করে তুলেন যাতে বাকি এগারোটা মাস সে আল্লাহর নাফরমানি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারে।
আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের জন্য তাঁর বিধান
পালনটা সহজ করে দিয়েছেন। কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে বা সফরে থাকে তাহলে অন্য সময় এই সংখ্যা
পূরণ করার সুযোগ রয়েছে। এ কথা বলতে যেয়ে আল্লাহপাক বলেছেন যে কোনরূপ কঠোরতা আরোপ আল্লাহর
অভিপ্রায় নয়, তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সহজতা দান করতে চান। রমযানের এই সিয়াম সাধনা
একদিকে তাকওয়া অর্জনের দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্স, সাথে আল্লাহতায়ালার মাহাত্ম্য
ঘোষণা ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। কুরআনের এই মাস রমযান থেকে ফায়দা
গ্রহণের জন্য তিনি সবাইকে বেশি বেশি কুরআন অধ্যয়ন, কুরআনের বিধান মেনে চলা এবং রোযার
উদ্দেশ্যকে স্মরণে রেখে রোযা পালনের জন্য সবার প্রতি আহবান জানান। ১৬/০৭/২০১৭ (সংক্ষেপিত)।
অসুস্থতাজনিত কারণে বিলম্বে পোস্ট করা হলো বলে দুঃখিত।
Comments
Post a Comment