গতকাল কাটাবন
মসজিদে জুমুয়া নামায আদায় করলাম। বাসা থেকে দূর হওয়ার কারণে সাধারণত সেখানে নামায পড়া
হয়না। ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে (দুপুর ১২টায়) আযান হয়ে গেল। একটু ফ্রেস ওযু করে মসজিদে
প্রবেশ করে দুই রাকাত দুখুলুল মাসজিদ ও চার রাকাত কাবলাল জুমুয়া আদায় করে বসে পড়লাম।
ঠিক সাড়ে বারোটায় খতিব মহোদয় মিম্বরে বসলেন এবং আযান হওয়ার সাথে সাথে তিনি খুতবা শুরু
করলেন। তিনি সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াত তেলাওয়াত করে বললেন কুরআনের কারণেই রমযান মাস
এত মর্যাদা ও গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে (খতিব মহোদয়ের বক্তৃতা ইনশা-আল্লাহ আলাদাভাবে পোস্ট
করবো)। স্বাভাবিক নিয়মে খুতবা শেষ করে তিনি নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। মুয়াজ্জিন
সাহেব একামত দিলেন এবং একামতের বাক্যগুলো একবার করে বললেন। রাসূল (সা.) আযানের বাক্যগুলো
জোড়ায় জোড়ায় ও একামতের বাক্যগুলো একবার করে বলার জন্য বলেছেন যা মক্কা ও মদীনায় এখনও
অনুসরণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে বুখারি শরীফের একটি হাদিস উল্লেখ করতে চাই। আনাছ রা. থেকে
বর্ণিত, ‘আযানের বাক্যগুলো জোড়ায় জোড়ায় এবং ক্কাদক্কা মাতিছছালাহ ছাড়া একামতের
বাক্যগুলো একবার করে বলার জন্য বেলাল রা.-কে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল’-বুখারি ৫৭০। খতিব মহোদয়ের খুতবা দানের
পরে আর চার রাকাত কাবলাল জুমুয়া পড়ার কোন সুযোগ দেয়া হলো না যা অধিকাংশ মসজিদে হয়ে
থাকে। এই সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে জুমুয়া নামাযের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়। জুমুয়ায় খতিব মহোদয়ের
খুতবা (বক্তৃতা/ভাষণ) শ্রবণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বর্তমান প্রচলিত নিয়মে মুছল্লিরা
খতিব মহোদয়ের প্রথমের বক্তৃতাকে খুতবার মর্যাদা দেয় না। ফলে অধিকাংশ মুছল্লি পরে আসে
চার রাকাত কাবলাল জুমুয়া পড়ার জন্য। কপালপোড়া
মুসলমান! আল্লাহর দেয়া এতবড় সুযোগ হেলায় হারায়। একটা বক্তৃতা শোনানোর জন্য কত আয়োজন,
কত অর্থকড়ি খরচ; অথচ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর দেয়া এ সুযোগটাকে পুরোপুরি ব্যবহার
করতে মুসলমানরা সক্ষম হচ্ছে না। খতিবের খুতবা শোনার চেয়ে (ওয়াজিব) সুন্নাত নামাযের
প্রাধান্য (যা দরকার ছিল বাড়ি থেকে পড়ে আসা) দেয়া মোটেই কাম্য নয়। জুমুয়ার আযান হওয়ার
সাথে সাথে সব ধরনের বেচা-কেনা, লেন-দেন বন্ধ করে মুসলমানদের কাজই হলো মসজিদে চলে আসা
এবং দুই রাকাত নামায পড়ে খুতবা শোনার জন্য অপেক্ষা করা। সালাম ফেরানোর মাধ্যমে খতিব
মহোদয় নামায সমাপ্ত করলেন। মুছল্লিরাও তাছবিহ-তাহলিল পাঠ করে পরবর্তী নামায শুরু করলেন।
ইমাম সাহেব কর্তৃক কোন মোনাজাত ছাড়াই নামায সমাপ্ত হলো। হজ্বে যেয়ে দেড় মাস মক্কা-মদীনায়
যেভাবে নামায পড়েছিলাম এ যেন তারই প্রতিচ্ছবি এবং হুবুহু সুন্নাত সমর্থিত। শাহবাগ থেকে
বাসে চড়ে বাসার উদ্দেশ্যে আসার পথে ফার্মগেটে মসজিদ থেকে তখন মোনাজাতের আওয়াজ শুনছিলাম।
ইমাম সাহেবরা মোনাজাত নামাযের অংশ না বললেও মুছল্লিরা মোনাজাত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা
করেন এবং মোনাজাত না হলে এক অতৃপ্তিবোধ তাদের মধ্যে কাজ করে। অথচ এর ফলে রাসূল (সা.)-এর
সুন্নাত লোপ পাচ্ছে। প্রতি ফরজ নামায শেষে সুন্নাত সমর্থিত মুক্তাদীদের ব্যক্তিগত আমল
নেই বললেই চলে। সালাতের পর আমলসমূহ লেখা চমৎকার পোস্টার মক্কা-মদীনার মসজিদসমূহের দেয়ালে
টাঙানো দেখেছিলাম এবং বর্তমানে আমাদের এখানেও কোন কোন মসজিদের দেয়ালে লক্ষ্য করা যায়,
আলহামদু লিল্লাহ। হাদিসে বর্ণিত বিভিন্ন আমলসমূহের কিছু এখানে উল্লেখ করা হলো :
ছাওবান রা.
থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. যখন নামায শেষে ঘুরে বসতেন তখন আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতেন
(আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ) এবং বলতেন : আল্লাহুম্মা আংতাস
সালামু ওয়া মিংকাস সালামু তাবারাকতা ইয়া যাল যালালে ওয়াল ইকরাম (হে আল্লাহ! তুমি শান্তি,
তোমার কাছ থেকেই শান্তি আসে, হে মহত্ত্ব ও মর্যাদার মালিক তুমি কল্যাণময়-মুসলিম।
মুয়ায বিন জাবাল
রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সা. আমাকে বলেছেন : হে মুয়ায প্রত্যেক নামাযের পরে এই দোয়াটি
পড়তে ভুলোনা : আল্লাহুম্মা আইন্নি আ’লা যিকরিকা
ও শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা (হে আল্লাহ! আমাকে তোমার স্মরণ, তোমার শোকর আদায় ও তোমার
ইবাদত সুষ্ঠুভাবে করতে সহায্য করো-আহমদ, আবু দাউদ, নাসায়ী।
উকবা বিন আমের
রা. বলেছেন, রসূলুল্লাহ সা. আমাকে আদেশ দিয়েছেন যেন প্রত্যেক ফরয নামাযের পর সূরা ফালাক
ও নাস পড়ি- বুখারি, মুসলিম, আহমদ।
আবু উমামা রা.
বলেছেন : রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের শেষে আয়াতুল কুরছি পড়ে,
তার বেহেশতে যাওয়ার ক্ষেত্রে শুধু মৃত্যু না হওয়াই অন্তরায়-নাসায়ী।
আবু হুরায়রা
রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর তেত্রিশবার
সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশবার আলহামদু লিল্লাহ, তেত্রিশবার আল্লাহু আকবর পড়বে এবং তারপর
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া
আ’লা কুল্লি শাইইন কাদির পড়বে তার সমস্ত
গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে-বুখারি, মুসলিম।
আহমদ ইবনে আবি
শায়বা ও ইবনে মাজাহ উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ সা. ফজরের নামাযের
সালাম ফিরিয়ে বলতেন, আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়ান ও রিযকান ওয়াসিয়ান ওয়া
আ’মালা মুতাকাব্বিলা (হে আল্লাহ! আমি তোমার
কাছে উপকারি জ্ঞান, প্রশস্ত জীবিকা ও কবুল হওয়া আমল চাই। হাদিসে ফজর নামায শেষে সাতবার
আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার (হে আল্লাহ! আমাকে দোযখ থেকে রক্ষা করো) এবং মাগরিবের
নামায শেষে সাতবার আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতা আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার
( হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট বেহেশত চাই এবং দোযখ থেকে পানাহ চাই) পড়ার জন্য বলা হয়েছে-
আবু দাউদ, আহমদ।
উপরের হাদিসগুলো
থেকে কিছু বাছাই করে মুছল্লিরা সহজেই নিজেরা আমল করতে পারে এবং এমন আমলকারীদের সম্পর্কে
হাদিসে বলা হয়েছে যে, ফেরেশতারা তাদের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করে। আল্লাহপাক আমাদেরকে
সুন্নাত মোতাবেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন। ১৩/০৫/২০১৭
Comments
Post a Comment