Skip to main content

দারসুল কুরআন হা-মীম আস সাজদাহ ৩৩-৩৬

হা-মীম আস সাজদা ৩৩-৩৬

‘‘তার চেয়ে ভালো কথা আর কার হতে পারে যে ব্যক্তি মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে ও নিজে নেক আমল করে এবং বলে যে, আমি একজন মুসলমান।

হে নবী ! ভালো ও মন্দ কখনো এক নয়। তুমি মন্দকে দূর কর সেই ভালো দ্বারা যা অতীব উত্তম। তাহলে দেখবে তোমার জানের দুশমনরা প্রাণের বন্ধু হয়ে গেছে।

এ গুণ কেবল তারাই লাভ করতে পারে যারা অতীব ধৈর্যশীল। এবং অতি ভাগ্যবান ছাড়া এ মর্যাদা কেউ লাভ করতে পারে না। যদি তোমরা শয়তানের পক্ষ থেকে কোন প্ররোচনা অনুভব কর তাহলে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর। তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।’’

রসূল (সা.)-এর মক্কাজীবনের এমন একটি অধ্যায়ে অবতীর্ণ এই সূরা যখন চরম বিপদ-মুছিবত মুসলমানদের উপর আপতিত হচ্ছিল। মক্কায় টিকতে না পেরে অনেকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন।

মুসলমানদেরকে শান্তনা দেয়ার সাথে সাথে সেই কঠিন মুহূর্তে তাদের করণীয়ও বলে দেয়া হয়েছে। ঠিক আগের আয়াতে ঈমানদারদের সাহায্যে ফেরেশ্তার আগমন ও জান্নাতের সুসংবাদ শোনানো হয়েছে।

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ একান্তভাবে আল্লাহর এবং যারা এ কাজ আঞ্জাম দিয়ে থাকে তারা মূলত আল্লাহর সাহায্যকারী ও প্রতিনিধি। ফলে আল্লাহর দেখানো পথেই মুমিনদেরকে অগ্রসর হতে হবে। ঈমান এনে নিজে নেক আমল করা নিঃসন্দেহে অতি উত্তম কাজ। নেক আমলের সাথে সাথে যারা মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে তাদের মর্যাদা অতি উচ্চে।

সে সময়ে নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দেয়া অর্থই হলো হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের সামনে নিজেকে পেশ করা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামপন্থীদের অবস্থাও তেমনই। কলেজ-ইউনিভার্সিটি, মেস ও বাসাবাড়ী কোথাও তারা নিরাপদ নয়।

চারিত্রিক দিক দিয়ে এরা অন্য যে কোন দলের যেয়ে অনেক উন্নত-আচার-আচরণ ও লেন-দেনে তারা সবার চেয়ে সেরা; নামাজী এবং সকল ধরনের নেশামুক্ত। এ সব তরুণদের অপরাধ একটাই যে, ওরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে।

মক্কার সেই কঠিন অবস্থায় আল্লাহর রসূল (সা.) ও তাঁর সাথীদের সাথে আরবের কাফির-মুশরিকরা ভদ্রতা ও শালিনতার সব সীমা লঙ্ঘন করে অত্যন্ত নোংরা আচরণ করতো। মিথ্যা অপপ্রচার, অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজ, শারীরিক নির্যাতন ও হত্যা পর্যন্ত করতে তারা পিছপা হত না; এমন কি তাদের জুলুম-নির্যাতন থেকে নারিরা পর্যন্ত রেহাই পেত না। সুমাইয়া (রা.) প্রথম শহীদের মর্যাদা লাভ করেন।

এমতাবস্থায় তাদের এই মন্দ আচরণের জবাব মন্দভাবে তো নয়ই বরং অতি উত্তমভাবে দেয়ার জন্য আল্লাহ বলেছেন। অর্থাৎ শুধু ক্ষমা করা বা উপেক্ষা করাই নয়, বরং তাদের কল্যাণ করার কোন সুযোগ পেলে তা করার জন্য তিনি বলেছেন। তাতে ফল হবে এই যে, যারা ইসলামের বিরোধীতার কারণে প্রচন্ড শত্রু হয়ে পড়েছিল তারা আবার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে।

অবশ্য এ কাজটা এত সহজ নয়। আল্লাহ নিজেই স্বীকার করে বলেছেন যে, এমন আচরণ কেবল তারাই করতে পারে যারা পরম ধৈর্যশীল ও অতি ভাগ্যবান। আল্লাহতায়ালা তাঁর পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী নেক বান্দাহদের কত উচ্চমানের দেখতে চান এ আয়াত থেকে তা উপলব্ধি করা যায়।

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা মন্দের জবাবে যখন নীরবতা অবলম্বন বা উত্তমভাবে দেয়ার চেষ্টা করে তখন শয়তান অস্থির হয়ে পড়ে। তোমরা কি ভীরু কাপুরুষ হয়ে গেলে? ওরা পাঁচটা মারলে তোমরা একটাও পারো না! রাজনীতির ময়দান তোমাদের হাতছাড়া হয়ে গেল!

এমন হাজারো প্রচারণা শোনা যায়। শয়তান চায় ইসলামের দুশমনরা যে সীমালঙ্ঘন বা অনৈতিক কাজ করে, ঈমানদারেরাও যেন তাই করে বসে।

সর্বকালে সর্বযুগে শয়তানের অনুচররা মিথ্যা প্রচারণায় শীর্ষে ছিল এবং এখনো আছে। পরকাল অবিশ্বাসের কারণে মিথ্যা বলতে তাদের বাধা নেই। আল্লাহর রসূল (সা.) নিজেও মিথ্যা প্রচারণার শিকার হয়েছিলেন। তা আজও অব্যাহত আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। শয়তানেরই এক শীষ্য গোয়েবলস-এর উক্তি :একটা মিথ্যা বারবার বললে তা সত্যে পরিণত হয়

ইসলামের দুশমনরা এই কৌশল অবলম্বন করে জয়যুক্ত হতে চায়। তবে মুমিনদের শান্তনা এই যে, তাদের সাথে যা করা হচ্ছে তাদের মনিব মহান আল্লাহর তা অজানা নয়। তিনি সবকিছু জানেন, শোনেন ও দেখেন এবং কেউ তাঁর নাগালের বাইরে নয়।

তাই বদলা গ্রহণের চিন্তা বাদ দিয়ে ইসলামের শত্রুদেরকে আল্লাহর উপর সোপর্দ করে মুমিনদের ঝামেলামুক্ত হয়ে যেতে হবে। মুমিনদের অভিভাবক আল্লাহ এবং তিনিই যথেষ্ট।  ০৭/১১/২০১৫

Comments