Skip to main content

দরসুল কুরআন সূরা আনয়াম


বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
‘(হে রসূল) আমি জানি, এ লোকগুলো যে সব কথাবার্তা বলে তাতে তোমার বড়ই মনোকষ্ট হয়। কিন্তু এরা কেবল তোমাকেই মিথ্যা সাব্যস্ত করে না, বরং এ যালেমরা আল্লাহর নিদর্শনসমূহ মানতেই অস্বীকার করে। তোমার আগেও এভাবে নবী-রসূলদের মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, কিন্তু তাদের মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা ও নানা রকম নির্যাতন চালাবার পরও তারা কঠোর ধৈর্য ধারণ করেছে, শেষ পর্যন্ত তাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে সাহায্য এসে হাজির হয়েছে। আসলে আল্লাহর কথার রদবদলকারী কেউ নেই, তদুপরি নবীদের এ সব সংবাদ তো তোমার কাছে আগেই এসে পৌঁছেছে। তারপরও যদি তাদের এ উপেক্ষা তোমার কাছে কষ্টকর মনে হয়, তাহলে তোমার সাধ্য থাকলে তুমি ভূগর্ভে কোন সুড়ঙ্গ কিংবা আসমানে কোন সিঁড়ি তালাশ কর এবং সেখান থেকে তাদের জন্য কোন কিছু নিদর্শন নিয়ে এসো; আসলে আল্লাহ তায়ালা যদি চাইতেন, তিনি তাদের সবাইকে হেদায়াতের ওপর জড়ো করে দিতে পারতেন, তুমি কখনো মূর্খ লোকদের দলে শামিল হয়ো না। যারা শোনে, তারা অবশ্যই আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয় এবং যারা মরে গেছে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকেও কবর থেকে উঠিয়ে জড়ো করে নেবেন, অতঃপর (মহা বিচারের জন্যে) তারা সবাই তাঁর সামনে প্রত্যাবর্তিত হবে’- সূরা আল আনয়াম ৩৩-৩৬
মক্কী সূরা এবং শেষের দিকে নাজিলকৃত, যে সময় কাফির-মুশরিকদের পক্ষ থেকে অপপ্রচার ও জুলুম-নির্যাতন অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছলে আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তনাস্বরূপ নাজিল হয় এ আয়াতসমূহ। একজন ব্যক্তি যা নন বা যিনি যা করেননি তাকে যদি বারবার বলা হয় যে তুমিই তা করেছ-সত্যিই তা বড় পীড়াদায়ক। কাফির-মুশরিকরা আল্লাহর রসূল (সা.)-এর বিরোধীতা করতে যেয়ে সকল প্রকার ভদ্রতা-শালীনতা বিসর্জন দিয়েছিল। তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। সুদীর্ঘ ৪০টা বছর তিনি তাঁর সমাজে বসবাস করেছেন, সুখে-দুখে তাদের সাথে জীবন কাটিয়েছেন। সততা, আমানতদারীতা, ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি পালনসহ মানব সমাজের সকল সৎ গুণাবলীর সমাবেশ ঘটেছিল তাঁর মধ্যে। তাঁর তুলনা কেবল তিনিই। আরবের লোকেরা তাঁকে ডাকতো ‘আল-আমিন’ ও ‘আস-সাদিক’ বলে। তাদের বিবাদ-বিসংবাদের তিনি ছিলেন মিমাংসাকারী। অথচ যেদিন তিনি মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকলেন এবং আল্লাহর কালাম পড়ে শোনালেন সেদিন থেকে বিরোধীতা শুরু হয়ে যায়। আল্লাহ বলেছেন যে, এ বিরোধীতা ব্যক্তি মুহাম্মদের নয়। ব্যক্তি মুহাম্মদ তো তাদের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ছিলেন। তাঁর মুখ দিয়ে আল্লাহর আয়াত উচ্চারিত হওয়ায় সাথে সাথে শুরু হয় এ বিরোধীতা। তাই এ বিরোধীতা স্বয়ং আল্লাহরই সাথে। এ বিরোধীতা শুধু নবী মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়; বরং সকল নবী-রসূলদের সাথেই তাদের আচরণ ছিল এমনই এবং তা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। সকল প্রকার জুলুম-নির্যাতনের মাঝেও অতীতে তাঁরা ধৈর্যহারা হননি বরং কঠোর ধৈর্য অবলম্বনের মাঝে আল্লাহর সাহায্য এসে হাজির হয়েছে। আজ সমগ্র বিশ্বে নমরুদ, ফিরাউন, আবু জেহেল ও আবু লাহাবদের উত্তরসূরীদের হাতে ঈমানদাররা সীমাহীন নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার এবং এ জালেমরাই সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী এ সব মজলুমের বিরুদ্ধে হাজারো মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। যারা নিজেরাই খুনোখুনিতে লিপ্ত এবং মাদকাসক্ত আজ তারাই উচ্চকণ্ঠে শতভাগ নেশামুক্ত আল্লাহর বান্দাহদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের মিথ্যা অভিযোগ আনছে। ব্যক্তিগত আচার-আচরণ ও চরিত্রের দিক দিয়ে এরা সমাজের সেরা। শুধু দ্বীনের জন্যে আজ তারা মজলুম ও দুনিয়ার জীবনটা তাদের সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে।
আল্লাহর স্থায়ী নিয়ম হলো হক ও বাতিলের দ্বন্দ্ব-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কুফর ও ইসলামের মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়া। এর ব্যতিক্রম ঘটাবার কোন সুযোগ নেই। এটা ঠিক যে ঈমান ও নেক আমলের বিনিময়ে আল্লাহ তাঁর বান্দাহদের জান্নাতে দেবেন। এই পাপ-পঙ্কিল পরিবেশে নেক আমল করে জান্নাতে যাওয়া বড় ঝুঁকিপূর্ণ। আল্লাহর পথে কেউ যদি নির্যাতিত হয়, সে অবস্থায় তো তার নিজের জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা হয়ে যায়। সাথে সাথে যে জুলুম করে সেও জাহান্নামে তার স্থান করে নেয়। ‘যারা ঈমানদার নর ও নারিকে কষ্ট দেয়, অতঃপর তওবা করে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি’-সূরা বুরুজ।
একটি জনপদের মানুষ যখন আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত উপেক্ষা করে ও দ্বায়ী ইলাল্লাহকে কষ্ট দেয় তখন স্বাভাবিকভাবে মনে জাগে আল্লাহ যদি এমন কিছু করে দিতেন যাতে দ্বীনের বিরোধীরা বিরোধীতা ছেড়ে আল্লাহর দেয়া এ সত্য দ্বীন কবুল করে নিত বা তাদের উপর ঈমানদাররা বিজয়ী হত। এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সম্ভব। কিন্তু আল্লাহর সুন্নাত (নিয়ম) এমন নয়। এমনটি হলে তো আর পরীক্ষা গ্রহণ হত না। তাই আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেছেন-‘তোমার পক্ষে সম্ভব হলে কিছু করে দেখাও’। আল্লাহর সুন্নাত হলো মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা হবে এবং বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন যারা তারা এ আহবানে সাড়া দেবে ও কুরআনের আলোকে পরিশুদ্ধ হবে। আর যাদের বিবেক মরে গেছে তারা গ্রহণ না করে বিরোধীতা করবে ও কেউ যাতে এ পথে এগিয়ে না আসে সে জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। এত জুলুম-নির্যাতন সব তারই বহিঃপ্রকাশ। এই শ্রেণির মানুষ বুঝবে তখন যখন কবর থেকে তাদেরকে জড়ো করে এনে আল্লাহর সম্মুখে হাজির করানো হবে। কিন্তু সে সময়ে কোন লাভ হবে না। অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে গোয়েবলসের অনুসারীদেরকে জ্বলতে হবে। আজকের মজলুমরা সেদিন আল্লাহর প্রতিশ্রুত জান্নাতের ব্যালকনিতে আরামকেদারায় বসে জালেমের শাস্তি দর্শন করে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত হয়ে পড়বে। হে আল্লাহ ! তুমিই হেদায়াতের মালিক। তোমার ও ঈমানদারদের দুশমনদেরকে তুমি হেদায়াত দান কর এবং মু’মিনদেরকে ধৈর্যধারণের তাওফিক দান কর। সকল ফেতনা থেকে তুমি মু’মিনদেরকে হেফাজত কর এবং যে বিপদ সহ্য করার ক্ষমতা তাদের নেই এমন বিপদ তুমি দিও না। আমিন। ২৯/১০/২০১৫


Comments