Skip to main content

সুখ না দুখ

উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে আমাদের পাঠ্য ছিল রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদীর প্রবন্ধ ‘সুখ না দুখ। এ পৃথিবীতে সুখ বেশি না দুখ বেশি-এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছেই। দুখবাদীরা বলবে এ পৃথিবীতে কেবলই দুখ। রোগ-শোক-ব্যথা-বেদনা মানুষের নিত্যসঙ্গী। অভাব-অনটন, স্ত্রী-সন্তান, পিতা-মাতাসহ প্রিয়জনদের উপেক্ষা, চাকুরি জীবনে অতৃপ্তি, ব্যবসায়ে মন্দা, পথে দুর্ঘটনা-চতুর্দিক শুধু দুখেরই ঘনঘটা এবং এক সময় মানুষ বেঁচে থাকারই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। সুখবাদীদের মতে পৃথিবীতে সুখেরই আধিক্য। চাকুরী ও ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি, জমিনে ফসলাদি, পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান ও ভাই-বোন নিয়ে সুখের সংসার-সুখেরই আধিক্য প্রমাণ করে। তাইতো তার জীবনে এত হাসি, এত আনন্দ। সুখবাদীদের প্রধান যুক্তি এ পৃথিবীতে সুখের আধিক্য বলেই মানুষ বেঁচে থাকতে চায়। যদি দুখই বেশি হবে তবে মানুষ কেন এ পৃথিবীকে আঁকড়িয়ে থাকতে চায়। সুখ বেশি না দুখ বেশি এ বিতর্কের শেষ নেই; কেউ পরাভব মানতে রাজি নয়। আমার মনে হয় লেখক রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী উভয়ের যুক্তিগুলোই শুধু তুলে ধরেছেন, নিজে কোন উপসংহারে আসতে পারেন নি।
সুখ-দুখ বড় আপেক্ষিক। আমরা যাকে সুখি মানুষ হিসেবে জানছি, তার ভিতরের মানুষটি যে কত অসুখি তা হয়তো আমরা টের পাচ্ছি না। তাই দেখি সালমান শাহ এর মত মানুষ এত প্রাচুর্যতা ও নাম-যশ-খ্যাতির মধ্যেও জীবনে সুখ খুঁজে পায়নি। তাই সে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। আবার অনেকে ফাঁসির মঞ্চে বিজয়ের হাসি হেসেছেন এবং এমন মরণের মধ্যে সুখের সন্ধান পেয়েছেন।
এ পৃথিবীতে নিরবিচ্ছিন্ন সুখ বা দুখ বলতে কিছু নেই। এখানে দুটি পাশাপাশি চলে। মূলত এ পৃথিবী একটি পরীক্ষাগার। মানুষ এক অনন্ত পথের যাত্রী। এ পৃথিবী তার যাত্রা বিরতি মাত্র এবং এটা তার আসল ঠিকানাও নয়। আসল ও স্থায়ী ঠিকানা তাকে সব সময় হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সুখ ও দুখ দুটি দিয়েই আল্লাহ তাঁর বান্দাহদেরকে পরীক্ষা করছেন। রসূল সা. এর বাণী-‘মুমিনের দুঅবস্থাই তার জন্য কল্যাণকর। সুখি হলে সে আল্লাহতায়ালার শুকরিয়া আদায় করে এবং বিপদ আসলে ধৈর্য অবলম্বন করে। তবে এটা ঠিক সুখের দিনগুলো যেন দ্রুত শেষ হয়ে যায়। কিন্তু দুখের দিনগুলো শেষ হতে চায় না। আল্লাহ এ পরীক্ষাগারে মানুষকে প্রাচুর্যতা দিয়ে পরীক্ষা করেন যে, সে আল্লাহকে ভুলে যায় কি-না। আবার বিপদাপদ দিয়েও পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা গ্রহণ-তাঁর স্থায়ী নিয়ম ও মর্যাদা বৃদ্ধির উপায়। আল্লাহর বাণী-‘আমরা অবশ্যই ভয়-বিপদ-অনশন, জান-মালের ক্ষতি ও আমদানি হ্রাসের দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো এবং বিপদ-মুছিবত উপস্থিত হলে যারা ধৈর্য ধারণ করে ও বলে যে ‘আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাব। তাদের জন্য সুসংবাদ। আবার বিপদাপদকে জয় করার বাসনাও মানুষের কম নয়। তাইতো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-
বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রার্থনা
বিপদে আমি, না যেন করি ভয়।
কবির কথা পুরো সত্য নয়। আংশিক সত্য। হ্যাঁ, আমরা বিপদ আসলে ভয় পাবোনা, ঘাবড়াবো, ভেঙ্গে পড়বো না ঠিকই, কিন্তু বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমরা অবশ্যই আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবো। একজন মুমিনের বিশ্বাস বিপদ কখনই নিজের থেকে আসে না, বা কেউ চাপিয়েও দিতে পারে না। বিপদ আসে আল্লাহ থেকে। আল্লাহর ভাষায়-‘কোন বিপদ কখনই আসেনা আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে আল্লাহ তার দিলকে হেদায়াত দান করেন। অর্থাৎ সে জানে বিপদ দিয়েছেন যিনি বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য তাঁরই কাছে ধর্ণা দিতে হবে।আল্লাহর শেখানো ভাষায় আমরা তাঁরই কাছে কাতরভাবে প্রার্থনা করি।হে পরোয়ারদেগার! এমন বিপদ তুমি দিও না যা আমরা সহ্য করতে না পারি পরোয়ারদেগার! তুমি আমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা আমাদের চোখকে শীতল করে দাও

হে আল্লাহ! সব অবস্থাতেই আমাদেরকে তোমার উপর নির্ভর করে চলার তাওফিক  দান করুন। আমিন। ১৭/০৫/২০১৫

Comments