আমার মা, আমরা নয় ভাই-বোনের মা। নয়টি ছেলে-মেয়েকে জন্মদান, দুগ্ধপান ও লালন-পালন সত্যিই কত কষ্টকর তা সহজেই অনুমেয়। তারপর আমাদের সংসারটাও তেমন স্বচ্ছল ছিল না। আমার আব্বা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। (সেই সময়ের কথা যখন আমার আব্বা ছিলেন শুধুমাত্র হাই মাদ্রাসা পাস (এসএসসি সমমান), তাঁর লেখাপড়া সবই পরবর্তি সময়ে) তাঁকে দেখেছি সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে। সকালে স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়তেন এবং পথিমধ্যে এক বাড়ীতে (নূরুজ্জামান চেয়ারম্যানের বাড়ী) প্রাইভেট পড়ায়ে ও সেখানে সকালের নাস্তা সেরে স্কুলে যেতেন। আমি স্কুলে যাওয়ার সময় টিফিন ক্যারিয়ারে দুপুরের খাবার নিয়ে যেতাম এবং স্কুল শেষে আবার প্রাইভেট পড়ায়ে তারপর আমার আব্বা বাড়ী ফিরতেন। আর আমার মা সংসারে একটু সহযোগিতা দানের লক্ষ্যে বাড়ীতে গরু ও মুরগী পালতেন। এ ছাড়া বাড়ীতে তরকারীর আবাদ তো ছিলই। আব্বা-আম্মার প্রাণান্ত পরিশ্রমে গড়ে ওঠা আমাদের এ বিশাল সংসার। তারপর আমাদের লেখাপড়ার প্রতি তাঁর চেষ্টা-যত্নের কোন ত্রুটি ছিল না। আমার জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার আগে আমার মা'র দায়িত্ব ছিল ভোর রাতে আমাকে জাগিয়ে দেয়ার। আমি নিজেও সে সময় লেখাপড়ায় খুব সিরিয়াস ছিলাম। আমার রেসিডেন্সিয়াল জুনিয়র বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে আমার মা'র অবদানই ছিল সবার উর্ধে। এত কষ্টের মধ্যেও আমার আব্বা-আম্মা তাঁর সন্তানদের একটু ভালো অবস্থায় রেখে যাওয়ার জন্য ৫/৬ বিঘা জমিও ক্রয় করে গেছেন। আমার আব্বা গত ২৭শে জানুয়ারি ২০১৫ আমার আম্মা ও আমাদেরকে রেখে তাঁর মহান রবের কাছে চলে গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রজেউন)। আব্বার ইন্তেকালের পর আমার মা এখন বড় একা। তাঁর নয় ছেলে-মেয়ে ও অসংখ্য নাতি-নাতনি থাকা সত্ত্বেও তাঁর ঘরে থাকার লোকের বড় অভাব। আমাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা এলেও এখন আমার মা বার্ধক্যজনিত নানা রোগব্যধিতে কাতর। আল্লাহর কাছে আমার মা'র আশু সুস্থতা কামনা করি এবং সবার কাছে দোয়া চাই।
আমার মা শুধু একা নন। সকল মা তাঁদের সন্তানদের জন্য আমার মা'র মতই কষ্ট করেন এবং সন্তানের ভালো কিছু দেখার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা চালান। আমি আমার স্ত্রী, আমার ভাই-বৌ ও বোন, আমার বৌমা ও মেয়ে এবং আমার স্কুলের শিক্ষার্থীদের মা'দের পেরেশানি লক্ষ্য করি। সন্তান প্রতিপালনে মায়ের ভূমিকা উপলব্ধি করে আমরা আমাদের পিতা-মাতার নামে একটা ট্রাস্ট করে পরিবারে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ায় উৎসাহ দানের জন্য বৃত্তি চালু করেছি। তাতে ছেলে-মেয়ে বৃত্তি পেলে তার সাথে তার মা'রা সমপরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন। আজ বিশ্ব মা দিবসে সকল মা'র প্রতি জানাই আমার সালাম ও শুভেচ্ছা। সাথে সাথে আল্লাহর কাছে কামনা করি তিনি যেন সকল মাকে তাঁদের সন্তানদের দ্বারা তাঁদের চোখকে শীতল করে দেন। এ প্রসঙ্গে আমি রসূল সা.-এর একটি হাদিস স্মরণ করে দিতে চাই-সন্তানকে উত্তম চরিত্র শিক্ষাদানের চেয়ে বড় কিছু দেয়ার নেই। আল্লাহ যেন আমাদেরকে সে দায়িত্ব পালনেরও তাওফিক দান করেন। আমিন। ১০/০৫/২০১৫ (মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার)।
Comments
Post a Comment