Skip to main content

বিশ্বাসীদের নিকট ইসলামের দাবী


প্রতিটি আদর্শ তার অনুসারীদের নিকট দাবী করে যে তার পছন্দের আদর্শই সেরা এবং এর
প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই মানবজাতির সার্বিক কল্যাণ সম্ভব। ফলে স্বাভাবিকভাবে সে তার আদর্শ
কায়েমের জন্য সচেষ্ট হয়। একজন ব্যক্তি তখনই কম্যুউনিস্ট যখন সে কম্যুনিউনিজম নামক
মতবাদে বিশ্বাস করে এবং তা প্রতিষ্ঠার জন্য মন-প্রাণ দিয়ে প্রচেষ্টা চালায়। সে অন্য কোন আদর্শের
অধীনে সন্তুষ্ট জীবন যাপন করতে পারে না। এটাই স্বাভাবিক। ইসলামও এর ব্যতিক্রম নয়।
ইসলাম ছাড়া অন্য যে কোন আদর্শ মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত এবং তারা দাবীও করে না যে তা
ঐশীপ্রদত্ত বা একেবারে নির্ভুল। ইসলামই একমাত্র জীবনব্যবস্থা যা দাবী করে যে এ কোন মানুষের
রচিত নয় বরং আলাহপ্রদত্ত এবং মানুষের জন্য নির্ভুল ও সকল যুগের উপযোগী। একজন মুসলিম
সেই যে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাস করে, নিজের জীবনে তা অনুসরণ করে এবং এর প্রতিষ্ঠায়
জানমাল দিয়ে চেষ্টা চালায়।

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানুষের জীবনের ব্যাপকতা যতখানি ইসলামও ঠিক
ততখানি। তার হাসি-কান্না, দুঃখ-বেদনা, আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ থেকে শুরু করে সমগ্র কর্মময়
জীবনকে ঘিরে আছে ইসলাম। তবে ইসলাম ফিতরাতের ধর্ম; স্বভাব-প্রকৃতির সাথে একেবারে
সামঞ্জস্যশীল। ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। ইসলাম কবুলের ক্ষেত্রে মানুষের
বিবেকের কাছে ইসলামের সৌন্দর্য উপস্থানের কথা বলা হয়েছে, গ্রহণ করার ব্যাপারে মানুষকে
সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। তবে স্বেচ্ছায় যে ইসলাম গ্রহণ করবে তার উপর সুনির্দ্দিষ্ট কিছু
ইবাদত পালনসহ ইসলাম ঘোষিত সকল ফরজ প্রতিপালন এবং হারাম বর্জনের জন্য তার উপর
বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। যারা সমগ্র জীবনে পরিপূর্ণ ইসলাম মেনে চলে তাদেরই নাম
মুসলিম। এ দ্বীনের দাবী, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা পূর্ণরূপে ইসলামে দাখেল হও’। ইসলামে
ধর্মনিরপেক্ষ থাকার কোন সুযোগ নেই। জীবনের কোন একটি ক্ষেত্রে কেউ নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ
মনে করার অর্থই হলো সেক্ষেত্রে সে ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত এবং এ
ধারণাই বর্তমান মুসলমানদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনকে নীতিবিবর্জিত
করেছে। অর্থাৎ ব্যক্তিগত জীবনে নামায, রোযা, যাকাত, হজ্ব পালন ও মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন
দ্বীনি কাজে সহযোগিতার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজেকে ভালো মুসলমান মনে করে কিন্তু
ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার কারণে অর্থ উপার্জন ও ব্যয় এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ইসলামের বিধান
অনুসরণের প্রয়োজনীতা সে অনুভব করে না। ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের কারণে আজকে আমাদের
রাজনৈতিক জীবনে ধোকা-প্রতারণা, ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, আমানতে খেয়ানত, সীমাহীন দুর্নীতি,
মানবাধিকার হরণ ইত্যাদি ব্যাপক রূপ লাভ করেছে। অবশ্য ধর্মনিরপেক্ষ অর্থ যদি হয় ধর্ম পালনের
ক্ষেত্রে সবাই স্বাধীন এবং কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করবে না, এমনটি হলে ইসলামে কোন আপত্তি
নেই। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর ক্ষেত্রে ইসলাম সেটা স্বীকার করে। কিন্তু যে নিজেকে মুসলমান বলে
পরিচয় দেয় তার জীবনের কোন একটি অংশ ইসলামের গন্ডির বাইরে থাকবে তা ইসলাম স্বীকার
করে না। এ বিষয়ে ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের সাথে ইসলামপন্থীদের চিন্তার জগতে বিস্তর পার্থক্য
রয়েছে।

বাংলাদেশে শতকরা নব্বই ভাগ মানুষ মুসলমান। এখানে বড় সমস্যা হলো দ্বীনের ব্যাপারে
মানুষের বড় অজ্ঞতা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বীনকে জানার ও বোঝার তেমন ব্যবস্থা নেই।
মাদ্রাসায় খুবই স্বল্পসংখ্যক ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে এবং চাকুরী বাজারে তাদের সুযোগ-সুবিধা
খুবই সীমিত। আধুনিক শিক্ষিতরাই সমাজে নেতৃত্ব প্রদান করছে এবং দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও
মিডিয়া জগতে ধর্মনিরপেক্ষ ও বাম নাস্তিকদেরই প্রাধান্য। সম্প্রতি শাহবাগ চত্বরের নাস্তিক
ব্লগারদের প্রতি নগ্ন সমর্থন দিয়ে অনেকের চেহারা জাতির সামনে উম্মোচিত হয়েছে। বর্তমানে
জাতির মধ্যে আস্তিক ও নাস্তিক দুটো ভাগ দৃশ্যমান হয়ে পড়েছে। ভয়াবহ সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও
ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিরূপ প্রচারণার পরও দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঈমানী
চেতনা নিঃশেষ হয়ে যায়নি। ধর্মীয় চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গত ৬ এপ্রিল মতিঝিলের শাপলা
চত্বরে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও মহাসমাবেশে। শত বাধা উপেক্ষা করে মানুষ ঈমানের টানে
ছুটে এসেছিল। নানা অজ্ঞতার কারণে ইসলামী আচার-অনুষ্ঠান পালনে গাফেলতি থাকলেও আল্লাহ,
তাঁর রসুল (সাঃ) ও আলেম-উলামাদের প্রতি তাদের অন্তরে গভীর মুহাব্বাতের প্রমাণ দিয়েছে
সেদিনের মহাসমাবেশে উপস্থিত হয়ে এবং খেটে খাওয়া গরীব মানুষসহ রাজধানীতে বসবাসকারী
ধর্মপ্রাণ মানুষ মহাসমাবেশে উপস্থিত জনতাকে আপ্যায়নের মাধ্যমে। একটু সুযোগেই মানুষ
শাহবাগী নাস্তিকদেরকে প্রত্যাখ্যান করে ইসলামের পক্ষে তাদের অবস্থান জানান দিয়ে দিয়েছে। এই
লোকগুলোই একটু অনুকূল পরিবেশ পেলে ইসলামী আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে নিষ্ঠাবান
মুসলমান হিসাবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত সাড়া দেয়ার
পেছেনে বড় ভূমিকা পালন করেছে আলেম-উলামা ও ইসলামী সংগঠনসমূহের মধ্যে ঐক্য। তাদের
মধ্যে অনৈক্যই মূলত মুসলমানদের দুর্গতির অন্যতম কারণ। জীবন সায়াহ্নে আল্লামা শফি চোখে
আঙ্গুল দিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিলেন ঐক্যবদ্ধ শক্তি কতবড় অসাধারণকে সম্ভব করতে পারে।
শাপলা চত্বরে সফলভাবে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের ফলে ইসলামের দুশমনরা ভীত-সন্ত্রস্ত
হয়ে পড়ার সাথে সাথে নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন ফিচার লেখার
সাথে সাথে টেলিভিশনে বিভিন্ন টকশোতে সম্প্রতি গড়ে উঠা ঐক্য শাহবাগী আলেমদের দ্বারা
বিনষ্টের চেষ্টার পাশাপশি তাদের সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা ১৩ দফা দাবী বিশেষ করে নারী নীতি
সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে যে হেফাজতে ইসলাম দেশটাকে তালেবান রাষ্ট্র বানাতে চায় এবং
নারীদেরকে শিক্ষা গ্রহণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকুরী বাদ দিয়ে ঘরে আবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের
গার্মেন্টস সেক্টরে প্রচুর নারী শ্রমিক কর্মরত এবং তাদেরকে উস্কানি দেয়া হচ্ছে যে তারা আর চাকুরী
করতে পারবে না। অবশ্য হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ সাংবাদিক সম্মেলন ও টেলিভিশন
টকশোয় অংশগ্রহণ করে যোগ্যতার সাথে পাল্টা জবাব দিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের দেশের মহিলারা
অপেক্ষাকৃত বেশি ধর্মপরায়ণ। শহুরে স্বল্পসংখ্যক ধর্মবিদ্বেষী মহিলা বেহায়াপনা এবং অশালীন
চলাফেরায় অভ্যস্ত হলেও সাধারণ চিত্র এমনটি নয়। এখনও লক্ষ্য করা যায় যে মাথায় কাপড় নেই
এমন কোন মহিলা আযান শোনার সাথে সাথে সে তার ওড়নাটা মাথায় উঠিয়ে দেয়। ধর্মের প্রতি
শ্রদ্ধাবোধ থেকেই তারা এমনটি করে থাকে। অনুকূল পরিবেশ পেলে এ মহিলারাই আল্লাহর বিধান
পালনের জন্য এগিয়ে আসবে। পর্দা মানার ব্যাপারে দুর্বলতা থাকলেও একটা অপরাধবোধ
অধিকাংশ মহিলার মধ্যে রয়েছে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিচরণশীল এবং ধর্মবিদ্বেষী কিছু মহিলাই পর্দা
মানার ব্যাপারে আপত্তি করে থাকে যারা সমগ্র মহিলা সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না। একটি
অনৈসলামিক সমাজে সাধারণ মানুষের পরিপূর্ণভাবে ইসলামী শরীয়াহ পালনে বাধ্যবাধকতার
ব্যাপারে আমাদের আলেম সমাজ এবং ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে আরো ভাবতে হবে।
আল্লাহপাক তাঁর রসুল (সাঃ)-কে প্রথমেই শরীয়তী বিধি-বিধান না দিয়ে দ্বীন (আল্লাহর কর্তৃত্ব)
কায়েমের নির্দেশ প্রদান করেন। বাস্তবতা হলো দ্বীন (কর্তৃত্ব) যার শরীয়ত (আইন-বিধান) তার এবং
মানুষ তারই অনুসারী হয়ে পড়ে। আল্লাহর বক্তব্যও তাই- ‘যখন আলাহর সাহায্য ও বিজয় আসলো
তখন তুমি দেখলে লোকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে শামিল হচ্ছে’-সুরা নসর। আর
আল্লাহপাক মূলত তাঁর রসুলকে প্রেরণ করেছেন তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করে দিতে- ‘তিনি তাঁর
রসুলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন যাতে সকল প্রকার দ্বীনের উপর একে বিজয়ী ও
প্রতিষ্ঠিত করে দিতে পারেন যদিও শিরকবাদীগণ মোটেই বরদাশ্ত করবে না’- সূরা সফ। অন্যত্র
বলেছেন এ ব্যাপারে আল্লাহর সাক্ষ্যই যথেষ্ট। সাহাবায়ে কেরামগণ তাঁদের কাজ সম্পর্কে জানতে
চাইলে রসুল (সাঃ) বলেন, ‘আমার যা কাজ তোমাদেরও তাই’। তাই দেশের আলেম-উলামা ও
সকল ইসলামী সংগঠনসমূহকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
আল্লাহপাক মুমিন ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য এভাবে তুলে ধরেছেন- ‘যারা ঈমানদার তারা আল্লাহর
পথে লড়াই করে আর যারা কাফের তারা লড়াই করে তাগুতের পথে। তোমরা শয়তানের সঙ্গীসাথীদের বিরুদ্ধে লড়াই কর আর বিশ্বাস কর শয়তানের ষড়যন্ত্র আসলেই দুর্বল’-সূরা নেসা। এখানে
নিরপেক্ষ থাকার কোন সুযোগ নেই। এজন্য এমন একটি উদার নেতৃত্ব দরকার যিনি ইসলামের
শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী সকলকে একত্রিত করে দ্বীন কায়েমের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। হেফাজতে
ইসলামের লংমার্চ ও মহাসমাবেশের মাধ্যমে ঈমানদারদের মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে
তা কাজে লাগাতে না পারলে আবার হতাশা নেমে আসবে এবং তার খেসারত আলেম-উলামা ও
ইসলামী সংগঠনসমূহকেই দিতে হবে। ইসলামের দুশমনদের মোকাবেলায় ইসলাম বিদ্বেষী নয়
এমন সবাইকে আস্থায় নিয়ে আসা ও বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবী এবং এ ব্যাপারে
আলেম সমাজকেই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

প্রচারণায় ইসলামবিদ্বেষীরা অনেকখানি এগিয়ে। বলা যায় মিডিয়া জগতের শতকরা নব্বই
ভাগই তাদের নিয়ন্ত্রণে। হেফাজতে ইসলামের সফল লংমার্চ ও মহাসমাবেশের পর তাদের বিরুদ্ধে
বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা তীব্র আকার ধারণ করেছে। নাস্তিক ব্লগারদের আল্লাহ ও রসুল (সাঃ)-এর
সম্পর্কে কুৎসা রটনার বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামের আহবানে সকল নবীপ্রেমিক জনগোষ্ঠী একাট্টা
হয়ে তাদের ঈমানী চেতনা প্রদর্শন করেছে। এর মূলে রয়েছে আলেম-উলামা ও ইসলামী
সংগঠনসমূহের পারস্পরিক মতপার্থক্য ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। এই ঐক্য ভেঙ্গে দেয়ার জন্য
লংমার্চের পূর্ব থেকেই ইসলামের দুশমনরা সক্রিয় ছিল। নেতৃত্বের বিশালতা ও নেতৃবৃন্দের সতর্ক
দৃষ্টির কারণে তারা সফল হতে পারেনি। তারা হাল ছেড়ে দেয়নি। হেফাজতের বিরুদ্ধে নানা
অপবাদ দেয়ার পাশাপাশি ঐক্য বিনষ্টের ব্যাপারে তারা অস্থির হয়ে পড়েছে। ঐক্যের শক্তিই বড়
শক্তি। মুসলমানদের অনৈক্যের সুযোগই ইসলামের দুশমনরা সব সময় গ্রহণ করেছে। আল্লাহপাক
তাঁর বান্দাহদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগিদ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জু শক্তভাবে ধারণ
কর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না’-আলে ইমরান। মতপার্থক্য মানুষের প্রকৃতিগত। বিভিন্ন দলের মধ্যে
মতপার্থক্য আবার একই দলের মধ্যেও মতপার্থক্য হয়। একই মায়ের পাঁচ সন্তানের মধ্যেও
মতপার্থক্য। ইসলামের সকল যুগেই এ মতপার্থক্য ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু এ নিয়ে দলাদলি
করার কোন সুযোগ নেই- ‘তোমরা তাদের মত হইও না যারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল’-
আলে ইমরান। ইসলামের কোন মৌলিক বিষয়ে মতপার্থক্য নেই। ফলে জাতির ক্রান্তিকালে যে
কোন মূল্যে ঐক্য বজায় রাখার মধ্যেই রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ। সূরা হুজরাতে
উল্লেখিত আল্লাহর বাণী স্মরণে রাখতে হবে-‘কোন ফাসেক ব্যক্তি কোন খবর নিয়ে আসলে তোমরা
তার সত্য-মিথ্যা যাচাই করবে’ এবং সতর্ক থাকতে হবে ফাসেকরা যেন কখনই আমাদেরকে একে
অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে না পারে। সংঘবদ্ধ জীবন যাপনের জোর তাগিদ আমরা নামাযের
মাধ্যমেও পাই। একাকী নিভৃতে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয় কিন্তু
ফরজ নামায আল্লাহপাক জামাতের (জনসমাবেশ করে) সাথেই আদায়ের তাগিদ দিয়েছেন এবং
এখানে ইমামের আনুগত্যকে বড় করে দেখা হয়েছে। মুক্তাদীর কোন ভুল নেই এবং ভুল তখনই হয়
যখন ইমামের অনুসরণের ক্ষেত্রে কোন ত্রুটি ঘটে। ইমামের অনুসরণের মাত্রাও বলে দেয়া হয়েছে।
ইমাম যদি নামাযের মধ্যে কোন ফরজ ভুল করেন তাহলে নামায পুনরায় আদায় করতে হবে আর
যদি ওয়াজিব ভুল করেন তাহলে ইমামের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে সহু সেজদা দিয়ে সংশোধন করে
নিতে হবে। এরপরে সুন্নাত মুস্তাহাব যদি ভুল করে তাহলে তা উপেক্ষা করা হবে এবং নামায
আদায়ে কোন সমস্যা হবে না। রসুল (সাঃ) উম্মাহর চলার পথটা কত সহজ করে দিয়েছেন।
নামাযের এ শিক্ষা গ্রহণ করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মতপার্থক্যকে উপেক্ষা করে আমরা মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর
ঐক্য গড়ে তুলতে পারি। আল্লাহপাক আমাদের আলেম সমাজকে সম্প্রতি গড়ে উঠা উম্মাহর এ
ঐক্যকে সামনে এগিয়ে নেয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।

Comments