সূরা মাউনের দারস- নামকরণ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
ঈমানের ক্ষেত্রে আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস (তাওহীদ, রেসালাত ও আখিরাত) একটি মৌলিক বিষয় এবং সমস্ত অন্যায়-অপকর্ম থেকে দূরে থাকার বড় উপায়। আল্লাহপাক সমগ্র কুরআন মজিদে বিশেষ করে আমপারার সূরাগুলোয় বিভিন্ন ভঙ্গিতে আখিরাতের বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। কাফিরদের বড় আপত্তি ছিল আখিরাতে বিশ্বাসের প্রতি। মানুষ মারা যাবে, মাটির সাথে মিশে যাবে এবং আবার জীবিত হয়ে তাকে দুনিয়ার কৃত-কর্মের হিসাব দিতে হবে-এ ব্যাপারে তাদের ছিল ঘোর আপত্তি। আল্লাহর জবাব ছিল- তোমাদের প্রথমে সৃষ্টি করা যদি সম্ভব হয় তবে কেন পুনরায় সৃষ্টি কঠিন হবে?
মানুষের অসংখ্য নৈতিক ত্রুটির মঝে নমুনাস্বরূপ দু’টি অপরাধ (ইয়াতিমের সাথে দুর্ব্যাবহার ও মিসকিনের খাবার দিতে উদ্বুদ্ধ না করা) উল্লেখ করে বলেছেন, আখিরাতের প্রতি অবিশ্বাসই তাদের চরিত্রের মাঝে এই ত্রুটি। তাঁর ভাষায়-
‘তুমি কি তাকে দেখেছো যে কিয়ামতের বদলাকে (পরকাল) মিথ্যা মনে করে? সে তো সেই লোক যে ইয়াতিমকে ধাক্কা দেয় ও মিসকিনের খাবার দিতে উৎসাহিত করে না’। এ জাতীয় চরিত্রের অধিকারীরা যে পরকাল বিশ্বাস করে সেটা আল্লাহপাক মনে করেন না।
এবারে আমরা আসি, যারা সমাজে ঘুষ-দুর্নীতি করে, ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, মিথ্যা বলে, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়, আদালতে মিথ্যার পক্ষে ওকালতি করে, রাষ্ট্রের অর্থ আত্মসাৎ করে, গুম-খুন-নির্যাতন করে, ভেজাল দেয়, ধোকা-প্রতারণা করে, উপর্যুপরি আল্লাহর নাফরমানি করে- এরা কি আদৌ পরকালে বিশ্বাস করে? পরকালে বিশ্বাস করলে কখনই কি এদের দ্বারা আল্লাহর বান্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন অপকর্ম সম্ভব হতো না? এই সব অপরাধে সম্পৃক্তরা তাওবা না করা পর্যন্ত সবাই কাফির অর্থাৎ আল্লাহর বিধান অমান্যকারী।
প্রশ্ন উঠতে পারে অর্থ আত্মসাৎকারী ও ঘুষখোরদের মাঝে অনেকের মাথায় টুপি, গায়ে লম্বা জামা, কপালের নামাযের দাগ, তাহাজ্জুদগুজার বলে প্রচার করে এবং বছর বছর মক্কাশরীফ গিয়ে হজ্ব করে তারাও কি কাফির? তারা কাফির নয়, কাফিরেরও অধম মুনাফিক-যাদের অবস্থান হবে জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে। আল্লাহর ভাষায়-
‘ঐ সমস্ত নামাযীদের জন্য ধ্বংস, যারা নিজেদের নামাযে গাফিলতি করে ও লোকদেখানো কাজ করে এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস অপরকে দেয়া থেকে বিরত থাকে’।
আসলে কাফির ও মুনাফিক কেহই পরকাল বিশ্বাস করে না, যার ফলশ্রুতিতে তাদের চরিত্রে এই কদর্যতা। পরকাল বিশ্বাস মানুষকে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করতে বাধ্য। শয়তানের ধোকা-প্রতারণা ও নফসের তাড়নায় মানুষ অন্যায় করে কিন্তু পরকাল বিশ্বাস তাকে দ্রুত ফিরে আসতে (তাওবা করতে) সহায়তা করে।
আল্লাহপাক আমাদেরকে যথার্থ অর্থে পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে নিজেদের চরিত্রকে সুন্দর ও সবার কল্যাণকামী হিসেবে গড়ে ওঠার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Comments
Post a Comment