গোসাইপাড়া আল নূর খোরশেদিয়া জামে মসজিদে আজ জুমা আদায় করলাম। গ্রামের মসজিদগুলোয় মুসল্লীদের উপস্থিতি বেশ বিলম্বে হয়। আগে আসার ফজিলত বর্ণনা করে বললাম, আগে আসলে উট, গরু, ছাগল, মুরগি কুরবানী করার ছওয়াব পাওয়া যায় এবং খতিব মহোদয় মিম্বরে উঠার সাথে সাথে ফেরেশতারা ছওয়াব লেখা বন্ধ করে খুতবা শোনা শুরু করে। তাই সবার উচিৎ, জুমার দিন ঈদের দিনের মতো সকাল সকাল গোসল করে উত্তম কাপড় পরিধান করে মসজিদে উপস্থিত হওয়া।
সদাচরণ ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং কুরআন-হাদিস আলোচনা করলে দেখা যাবে সকল ছওয়াব সদাচরণের মধ্যেই রয়েছে। ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় নামায-রোযা ছিল না। তাওহিদ, রেসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাসের পাশাপাশি মানুষকে সদাচরণ শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
সূরা হুমাযায় আল্লাহপাক বলেন, 'নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল ও পেছনে দোষ প্রচার করে'। মানুষকে হেয় করা, অপমান করা কতো বড়ো অপরাধ এই আয়াতে তা উপলব্ধি করা যায়। একটু গালাগাল করলে যদি ধ্বংস নিশ্চিত হয় তাহলে মানুষকে চড়-থাপ্পড় মারা, আহত করা বা হত্যা করা কতো বড়ো অপরাধ তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। একজন মানুষকে হত্যা করা সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করার শামিল।
এ প্রসঙ্গে বলি, সমগ্র দেশবাসীকে নাড়া দেয়া ঘটনা আবরার হত্যার মতো নির্মমতা গোটা জাতিকে হতবাক করেছে। ওরা আসলে মানুষ নয়, পশু এবং পশুরও অধম। ঘাতকদের গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করায় স্বস্তি প্রকাশ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করা হয়।
পেছনে দোষ প্রচার অর্থাৎ গীবতের কথা এখানে বলা হযেছে এবং তার ধ্বংসও নিশ্চিত। সূরা হুজরাতে গীবতকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। অথচ আমাদের সমাজে গীবত সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা যিনা-ব্যাভিচারকে ঘৃণা করি এবং কেউ যিনায় লিপ্ত হলে হৈ হৈ রৈ রৈ করে উঠি। আর আল্লাহর রসুল (সা) গীবতকে যিনা অপেক্ষা জঘন্য বলেছেন।
ইসলাম মানুষের ওপর জুলুমকে হারাম করেছে। শারীরিক, আর্থিক, সম্মানহানি (গীবতের মাধ্যমে) যে কোনোভাবে মানুষের প্রতি জুলুম করা হলে তার পরিণতি হবে বড়ো ভয়াবহ। জালেমের জন্য জান্নাতে কোনো অংশ নেই। রসুল (সা) জালেমকে সবচেয়ে দরিদ্র বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং আখিরাতে মজলুমের সকল পাওনা তার নেক আমল দিয়ে পরিশোধ করতে হবে। পরিশোধে সমর্থ না হলে মজলুমের গুনাহ জালেমের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
আল্লাহর এক নাম মুমিন। মুমিন শব্দের অর্থ হলো যিনি নিরাপত্তা দান করেন। একজন মুমিনের কাছে আল্লাহর সকল সৃষ্টি নিরাপদ। সে অকারণে গাছের একটি পাতাও ছিঁড়ে না। পশু-পাখিকেও কষ্ট দিতে পারে না। মানুষের ক্ষেত্রে তো প্রশ্নই উঠে না। রসুল (সা) বলেন, 'ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়, মুমিন নয়, মুমিন নয় যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে অন্যরা নিরাপদ নয়'।
হিংসা-বিদ্বেষ দেশটিকে ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে দিয়েছে। হিংসুক জান্নাতে যাবে না। রসুল (সা) বলেন, 'আগুন যেমন শুকনা কাঠ জ্বালিয়ে দেয় তেমনি হিংসা মানুষর সকল নেক আমল ধ্বংস করে দেয়'। হিংসা আসে সংকীর্ণতা থেকে অথচ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উদার দেখতে চান। ক্ষমা মহৎ গুণ। রসুল (সা) বলেন, 'যে তার ভাইয়ের অপরাধ ক্ষমা করবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার অপরাধ ক্ষমা করবেন'। তিনি আরো বলেন, 'যে তার ভাইয়ের দোষ গোপন করবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন করবেন'। ইসলাম তার অনুসারীদের মাঝে ক্ষমা ও সহনশীলতার আচরণ প্রত্যাশা করে।
মানুষের সাথে ভালো আচরণের তাগিদ প্রসঙ্গে রসুল (সা) বলেন, 'জমিনে যারা আছে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করো তাহলে আসমানে যিনি আছেন তিনিও তোমাদের সাথে ভালো ব্যবহান করবেন। সদাচরণের বড়ো হকদার হলেন আপন পিতা-মাতা। পিতা-মাতা অসন্তুষ্ট হন এমন কোনো কিছুই করা যায় না। কুরআনের ভাষায় উহ্ শব্দটিও করা যায় না। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, পথের ভিখেরী, অমুসলিম সকলের সাথে সদাচরণ করতে হবে।
দুর্ভাগ্য, মুসলমানরা সদাচরণ ভুলে গেছে। ইউরোপ-আমেরিকায় মানুষ পরস্পরের সাথে সদাচরণ করে এবং মানুষকে সেবা দিয়ে তৃপ্ত হয়, অথচ আমরা তার বিপরিত। ইসলামের অনুশীলন না থাকায় আজকে আমাদের এমন অবস্থা। আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের সদাচরণ অনুসরণের তাওফিক দান করুন।
Comments
Post a Comment