Skip to main content

সূরা ফাতিহার গুরুত্ব


বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদের সম্মানিত খতিব হাফেজ মাওলানা সাইফুল ইসলাম বড় হৃদয়গ্রাহী আলোচনা করেন। মুসল্লীরা তাঁর খুতবা শোনার জন্য সাড়ে বারোটার পূর্বেই মসজিদে উপস্থিত হয়ে যান। আমি সাড়ে বারোটায় যেয়ে দোতলায় জায়গা পেলাম। তিনি সালাতের উপর ধারাবাহিক আলোচনা করছেন।
আজকে সূরা ফাতিহা পাঠ থেকে আলোচনা করলেন। মসজিদে উপস্থিত হয়ে তাকবিরে তাহরিমার মধ্য দিয়ে নামায শুরু হয়ে যায়। এরপর ছানা পড়ার মাধ্যমে মুসল্লী আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাহ হওয়ার ঘোষণা দেয়। জায়নামাযের দোয়া বলে কিছু নেই। রসূল (সা) এটাও নামাযের মধ্যে পড়েছেন। কয়েক প্রকারের দোয়া রয়েছে এবং যে কোন একটি পড়া যায়। নামায প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন - 'নিশ্চয়ই নামায মানুষকে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে'। হ্যাঁ। মানুষ যদি বুঝে-শুনে নামায আদায় করে তাহলে কোন অশ্লীলতা বা মন্দ কাজ তাকে স্পর্শ করতে পারে না। যদি করে তবে বুঝতে হবে, নামাযের কোন ত্রুটি নয়, ত্রুটি সেই ব্যক্তির যে যথানিয়মে নামায আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে।
ছানা পড়ার পর আউজু বিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ বলে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হয়। শয়তান মানুষকে আল্লাহর নাফরমানি করার জন্য প্রতিনিয়ত  প্ররোচনা দিতে থাকে। তাই কুরআন পাঠের শুরুতে শয়তানের প্ররোচনা থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়। সূরা আলাকের পাঁচটি আয়াতের মাধ্যমে কুরআন নাজিল শুরু হয় এবং পূর্ণাঙ্গ সূরা হিসেবে সূরা ফাতেহা প্রথম অবতীর্ণ সূরা। নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ ওয়াজিব। রসূল (সা) বলেছেন, 'সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায নেই'। আল্লাহপাক বলেছেন- 'আমি তোমাকে সাতটি আয়াত দান করেছি যা বারবার আবৃতিযোগ্য'। ইমাম ও মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পড়া নিয়ে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। তিনি সব মতগুলো উল্লেখ করে বলেন যে, ইমাম সাহেব উচ্চস্বরে পড়লে মুক্তাদীর শোনা এবং ইমামের অনুচ্চস্বরে পড়াকালীন মুক্তাদীর পড়া মতটিই বেশি উত্তম।
ফাতিহা শব্দের অর্থ সূচনা করা। অর্থাৎ সূরা ফাতিহা পাঠের মধ্য দিয়ে কুরআন মজিদ পাঠ শুরু করা হয়। উম্মুল কুরআনসহ এই সূরাটির আরো অনেক নাম রয়েছে। সূরা ফাতিহা একটি প্রার্থনা বা দোয়া। দোয়া করার ভাষা ও পদ্ধতি আল্লাহ নিজেই শিখিয়ে দিয়েছেন। আমরাও আমাদের জীবনে কারো কাছে কোন আবেদন করলে প্রথমে অধীনের বিনীত বলে শুরু করি, মাঝখানে আমার বক্তব্যটা পেশ করি এবং আমার প্রার্থনা মঞ্জুর হলে বড় কৃতজ্ঞ হবো বলে শেষ করি। সূরা ফতিহাতেও আল্লাহপাক শিখিয়েছেন কিভাবে চাইতে হবে এবং কী চাইতে হবে। তাঁর দেয়া প্রক্রিয়ায় চাইলে মঞ্জুর না হওয়ার কোন কারণ নেই। আল্লাহর কাছে চাইতে হবে, বারবার চাইতে হবে এবং বড় কাতরভাবে চাইতে হবে।
আমরা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে কমপক্ষে ১৭বার সূরা ফাতিহার মধ্য দিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে থাকি। আমরা কী চাই, কিভাবে চাই সেটা আমাদের উপলব্ধিতে আনতে হবে। রসূল (সা)-এর আল্লাহর সাথে কথা হয়েছিল মিরাজে,আর আল্লাহর সাথে আমাদের কথা হয়ে থাকে নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে। বান্দাহ যখন সূরা ফাতিহা পাঠ করে আল্লাহ তখন ফেরেশতাদের সাথে সেটা নিয়ে আলোচনা করেন। আলহামদু লিল্লাহ পাঠের সাথে সাথে আল্লাহ বলেন আমার অমুক বান্দাহ আমার প্রশংসা করছে, আর রহমান বলার সাথে সাথে বলেন আমার দয়া-অনুগ্রহের কথা বলছে, মালিকি ইয়াওমিদ্দিন বলার সাথে সাথে তিনি বলেন বান্দাহ আমার শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্ব ঘোষণা করছে।
ইয়য়া কানাবুদু বলার সাথে সাথে তিনি বলেন বান্দাহ তার ও আমার মাঝে সম্পর্ক উল্লেখ করে পরিচয় পেশ করছে এবং কেবল আমারই গোলামী করার ঘোষণা প্রদান করছে ও আমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছে। এতক্ষণ বান্দাহ আল্লাহর প্রশংসা, গুণকীর্তন ও বড়ত্ব ঘোষণার সাথে কেবল তাঁরই গোলামী ও তাঁরই কাছে সাহায্য চাওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদানের পর ইহ্ দিনাছ ছিরাতাল মুস্তাকিম বলার মাধ্যমে সে তার প্রার্থনা পেশ করছে। শয়তান ক্রমাগতভাবে বান্দাহকে বিভ্রান্ত করার কাজে লিপ্ত রয়েছে, আল্লাহ তায়ালার পথ দেখানো ছাড়া সঠিক পথপ্রাপ্তির কোন সুযোগ নেই। তাই প্রতিনিয়িত আল্লাহর কাছে সঠিক পথ চাইতে হবে এবং সে পথ হবে আল্লাহর যে সব প্রিয়ভাজন বান্দাহ (নবী-রসূল-সিদ্দিক ও শহীদ) তাঁর পথে চলে গেছেন তাঁদের পথ। সাথে সাথে বিদ্রোহী হয়ে যারা আল্লাহর রোষানলে পতীত হয়েছে সে সব পথভ্রষ্ট ও অভিশপ্তদের পথ নয় (বিশেষ করে ইহুদী ও খ্রিস্টানদের পথ)।
খতিব মহোদয় তাঁর মুছল্লিদেরকে উপলব্ধিতে আনার জন্য বলেন, একটু ভাবুন আল্লাহর বিশাল সৃষ্টির মাঝে আমাদের এই গ্রহটি (পৃথিবী)কত ক্ষুদ্র,আবার এই বিশ্বের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থানই বা কতটুকু এবং এই দেশের মাঝে তাকওয়া মসজিদে অত নম্বর কাতারে দাঁড়িয়ে আমি সূরা ফাতিহা পাঠ করছি আর আল্লাহপাক আমাকে নিয়ে তাঁর দরবারে আলোচনা করছেন, আমার কত বড় সৌভাগ্য-এটা কি কল্পনা করা যায়? আল্লাহর শেখানো ভাষায় আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি। এ দোয়া কি ব্যর্থ হতে পারি? আমরা তোমারই গোলামী করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই। বারবার এই প্রতিশ্রুতি দানের পর আমরা কি পারি আর কারো হুকুম মানতে বা আর কারো কাছে নিজের প্রয়োজন পূরণের জন্য ধর্ণা দিতে? যদি সেটাই করি তাহলে আমরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অপরাধে অপরাধী হয়ে পড়বো। মুনাফিকের কয়েকটি ত্রুটির মধ্যে অন্যতম হলো ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা, আর মুনাফিকের পরিণতি জাহান্নামের ভয়াবহ আজাব।
ইমাম সূরা ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে মুক্তাদীদের পক্ষ থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে এবং শেষ হওয়ার সাথে সাথে মুক্তাদীরা সমস্বরে বলে উঠে আমিন’।হাদিসে বলা হয়েছে যে ফেরেশতারাও আমিন বলে এবং যার আমিন বলা ফেরেশতাদের বলার সাথে মিলে যায় তার দোয়া কবুল হয়। আমিন জোরে বা আস্তে বলায় কোন সমস্যা নেই। মনে মনে বললে হবে না ঠোঁট নাড়ায়ে বলতে হবে।



Comments